গুণী শিল্পী বাদলকে হারালো রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বজলুর রহমান বাদল। সবায় তাঁকে চেনেন নৃত্যগুরু বজলুর রহমান বাদল হিসেবে। নাচের বাদল ভাই হিসেবেও রাজশাহীজুড়ে খ্যাতি ছিল তাঁর। এ বছর তার বয়স ছুঁয়েছিল ৯৫ বছরে। বয়সের ভারে কিছুটা নূব্জ্য হলেও মনের জোর ছিল প্রবল এ নৃত্যগুরুর। নৃত্যে শুধু স্থানীয় পর্যায়ে নয়, জাতীয় পর্যায়েও ছিল গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদান। কিন্তু সবাইকে শোক সাগরে ভাসিয়ে আজ রোববার বিকালে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। এরমাধ্যমে রাজশাহী হারালো এক গুণী শিল্পীকে।

এই নৃত্যগুরু বাদল রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান ‘স্বাধীনতা পদক’ পান ২০১৭ সালে।

জীবনে অনেক পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। তবে স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তিটা তাঁর কাছে র্ছিল অনেক খুশির। তিনি দীর্ঘজীবনে অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন রাজা-মহারাজার দরবারে নৃত্য পরিবেশন করে পেয়েছিলেন বিপুল সম্মান। মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসায় সিক্ত তিনি। শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। পেয়েছেন নৃত্যগুরু উপাধি।

এ দীর্ঘ জীবনে তিনি নাচ ছাড়া আর কিছুই করেননি। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন এ নায়ক। থাকতেন রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকায় মেয়ের বাসায়। ধ্রুপদি নৃত্যের চারটি বিভাগেই বজলুর রহমানের দক্ষতা ছিল সমান। এ ছাড়া ভরতনাট্যম, কথাকলি, মণিপুরি ও কত্থক নৃত্যেও ছিল তাঁর অসামান্য দখল।

বজলুর রহমান ১৯২৩ সালের ১৮ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা কলকাতার মানুষ ছিলেন। তাঁর দাদা আশাক হোসেন আমের ব্যবসা করতে এসে মালদহে বাড়ি করেছিলেন। সেখানেই তাঁর জন্ম। বাবার নাম আবুল কাশেম। মায়ের নাম সখিনা বিবি। ১৯৪৫ সালে মালদহ জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। পরের বছর নাটক করতে রাজশাহী আসেন। আর ফেরা হয়নি। এভাবে রাজশাহীতেই থেকে যান। প্রতি সপ্তাহে দুদিন রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে নাচের ক্লাস নিতেন তিনি।

ওস্তাদ বজলুর রহমানের বসার ঘরে থরে থরে সাজানো আছে বিভিন্ন সংবর্ধনায় পাওয়া সম্মাননা ক্রেস্ট। ঢাকাসহ সারাদেশে তাঁকে ৭৪টি সংবর্ধনা দেয়া হয়। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামানের দাদা সেই কবে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিলেন, সেই ছবিও ছিল তাঁর কাছে। আগে অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন রাজা-মহারাজার দরবারে নাচের আমন্ত্রণ পেতেন।

১৯৫১ সালে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার সঙ্গে নাচের মুদ্রা রপ্ত করে ফেলেন। তাঁর বিদ্রোহী নৃত্যের জন্য ২০১১ সালে তিনি নজরুল একাডেমি পুরস্কার পান। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার পান। বজলুর রহমানের ভাষায়, মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর তাঁকে ‘ইয়াং বয়’ বলে সম্বোধন করেন। দেশের খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী নিপা, শিবলী, লায়লা হাসান, জিনাত বরকতুল্লাহ সবার সঙ্গে ছিল তাঁর সখ্যতা। নৃত্যশিল্পী রিংকু, ওলি ও সাকিবকে তিনি নিজ হাতে নৃত্য প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এ নৃত্যগুরু।

স্বাধীনতা পুরষ্কারের জন্য নৃত্যগুরু ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল নির্বাচিত হলে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. তসিকুল ইসলাম রাজা। এছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন মহলের ভালোবাসা ও শুভেচ্ছায় সিক্ত হয়েছিলেন তিনি। আর আজ সেই গুণী শিল্পীকে হারালো রাজশাহী।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭ আগস্ট ভর্তি হন এ গুণী শিল্পী। দুদিন না যেতেই রাজশাহীবাসীকে ব্যাথাতুর করে চলে গেলেন আজ রোববার (১৯ আগস্ট) বিকালে।

স/শা