রাজশাহী স্টেশনের বিক্রি হওয়া টিকিটের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না যাত্রীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১০ জুন রাতে রাজশাহী মহানগর এলাকাতে লকডাউন ঘোষণা করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক। রেল কর্তৃপক্ষ লকডাউন ঘোষণায় পশ্চিমের কর্তৃপক্ষ রাজশাহী থেকে সকল যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেন।

রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল রাজশাহী ,গত ১১ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত বিক্রয়কৃত অগ্রিম বিক্রয়কৃত ট্রেনের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও অর্থ বিভাগের অর্থছাড়ে অপারগতায় সে টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হয়েছে‌ রাজশাহী রেল কর্তৃপক্ষ। এই চলমান লকডাউনের ভেতরও যাত্রীরা টিকিট ফেরত দিতে এসে স্টেশনের কাউন্টার থেকে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরছেন।

অপরদিকে প্রতিদিনই যাত্রীদের নানা প্রশ্ন ও বাক্যবাণে পড়তে হচ্ছে রাজশাহী রেল স্টেশনে দায়িত্বে থাকা বুকিং সহকারী, ইস্টিশন মাস্টার ও অনুসন্ধানে কর্মরত কর্মচারীরা।

তবে গত ১৪ জুন থেকে স্টেশনে মাইকিং করা হচ্ছে, লকডাউনের পর যাত্রা বাতিলের টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া হবে যাত্রীদের। প্রতিদিন অনেক মানুষ এই অনুসন্ধান কেন্দ্রে এসে টিকিট ফেরতের বিষয়ে জানতে চায়। আবার অনেকেই অনুসন্ধান কেন্দ্রের হটলাইন নম্বরে ফোন করে অনেক আজে-বাজেভাবে গালমন্দ করছেন বলে জানান অনুসন্ধানে দায়িত্ব থাকা রেলকর্মচারী।

এরপরও ধৈর্যের সঙ্গে ঊর্ধ্বতনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের বলা হয়েছে- লকডাউন খুললেই ক্রয়কৃত টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হবে। এ ঘটনায় সবথেকে বেশি বিরম্বনায় পড়েছেন স্টেশনে কর্তব্যরত বুকিং সহকারীরা। যাত্রীরা কাউন্টারে এসে ক্রয়কৃত টিকিটের টাকা ফেরত না পেয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ এমনকি মারমুখী আচরণ করছেন যাত্রীরা। সবকিছু ধৈর্য ধরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত তথ্য লকডাউনের পর থেকে টাকা ফেরত দেয়া হবে বলে যাত্রীদের অশস্থ করছেন তারা।

এ বিষয়ে রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘১০ জুন প্রায় ছয় লাখ টাকা ক্যাশ হাতে থাকায় তা ১১ জুন ভোর থেকে যাত্রীদের দেয়া হয়েছিল। কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় বাকি টিকিটের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুন ...সর্বাত্মক লকডাউনে রাজশাহীতে ট্রেন চলাচল বন্ধ, টিকিটের টাকা ফেরত নিতে কাউন্টারে ভিড়

তিনি আরো জানান, তিতুমীর ট্রেনের সব যাত্রীকেই টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বনলতা, পদ্ম, টুঙ্গিপাড়া, বরেন্দ্র ও ঢালারচর এক্সপ্রেসের কিছু যাত্রীদের টাকাও ফেরত দেয়া হয়েছে। তবে টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ যাত্রীর টাকা ফেরত দেয়া সম্ভব হয়নি। এখনো প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো ফেরত দিতে হবে যাত্রীদের।’

স্টেশনে টিকিটের টাকা ফেরত নিতে আসা যাত্রী ইসমাইল হোসেনের জানান, এই লকডাউনেও স্টেশনে এসেছিলাম টিকিটের টাকা ফেরত নিতে। কিন্তু তা পেলাম না। স্টেশন থেকে বলা হচ্ছে টাকা নেই, লকডাউনের পর থেকে টাকা ফেরত দেয়া হবে। তাই বাধ্য হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।’

পশ্চিম রেলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) বলেন, ‘১৩ জুন যাত্রীদের অগ্রিম টিকিটের টাকা ফেরত দেয়ার কথা ছিল। সেই লক্ষ্যে রাজশাহী রেলওয়ের অর্থবিভাগে একটি আবেদনও করা হয়েছিল। এতে পশ্চিমাঞ্চলের রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম), ডিভিশনাল কমার্শিয়াল অফিসারসহ (ডিসিও) স্টেশন ম্যানেজার এবং আমি, তাতে সুপারিশ করি। কিন্তু আইনগত জটিলতা ও অর্থ বিভাগের বাধ্যবাধকতায় কারন দেখিয়ে সেই আবেদন নাকচ করেন প্রধান অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান। এছাড়া শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণেও আমরা টাকা তুলে ফেরত দিতে পারিনি। তাই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক টাকাও ফেরত দিতে ব্যর্থ হই।’

যাত্রীরা টিকিটের টাকা আদৌ ফেরত পাবেন কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থবিভাগের সিদ্ধান্ত নাকচ হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। রেল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- লকডাউন খুললেই ট্রেন চালু হবে। তখন স্টেশনে টিকিটের বিক্রিত অর্থ থেকেই যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হবে। এই কার্যক্রম লকডাউন খোলার একমাস পর্যন্ত চলবে।

স/অ