রাজশাহী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাড়ে ৩ কোটি টাকার টেণ্ডারে অনিয়মের অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আউট সোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল সরবরাহের সাড়ে ৩ কোটি টাকার পুনঃটেণ্ডারে (স্মারক নং সিএস-রাজ/২০২২/১৪২৮হিঃ/৪৮৭) কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী, যোগ্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে গোপনে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার বিস্তর এই অভিযোগ উঠে। এই নিয়ে চেণ্ডার ড্রপ করা প্রায় ১৩ জন ঠিকাদার চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে পুনঃটেন্ডারের দাবি জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, পুনঃটেন্ডারের কাজ পেতে ১৪ টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেণ্ডার ড্রপ করে এবং সকল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দর সমান ছিল। কিন্তু গত ১০ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এই দরপত্রের বিজ্ঞপ্তির ১৫ নং শর্ত এবং সিডিউলের পাতা নং-০২ এর শর্ত নং-০২ এর (ক-ঢ) ভঙ্গ করে এবং সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) জারিকৃত শর্তাবলী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুসরণ করেননি। সেই সাথে টেণ্ডার সিউিউলের শর্ত মোতাবেক এবং সিপিটিইউ এর নিয়ম অনুযায়ী- সকলের দর সমান হলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যার স্বাস্থখাতে যার বেশি কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকবে তিনি এই কাজে অগ্রাধিকার পাবে।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে- গোপনে এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে তা অনুমোদনের জন্য ঢাকা স্বাস্থ অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। যাকে কাজ দেয়া হয়েছে নিয়ম অনুযায়ী তার কাজের অভিজ্ঞতাও কম বলে জানা গেছে। এছাড়া গোপনে একজনকে কাজ দিলেও এখন পর্যন্ত অন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে তা জানানো হয়নি এবং তাদের জমাকৃত বিডি ফেরৎ দেয়া হয়নি।

এদিকে গলফ সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাঃ লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গত ৬ মার্চ দরপত্রের বিজ্ঞপ্তির ১৫ নং শর্ত এবং সিডিউলের পাতা নং-০২ এর শর্ত নং-০২ এর (ক-ঢ) ভঙ্গ করে এবং সিপিটিইউ এর নিয়ম অনুসরণপূর্বক টেণ্ডার ড্রপকারী কোনো ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের জ¦াল কিংবা ভুয়া সনদপত্র আছে কিনা তা তদন্তের জন্য সিভিল সার্জন বরাবর একটি আবেদন দাখিল করেন। আবদনে সরকারের যেকোনো দরপত্রের স্বচ্ছতার জন্য সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্ত্বশাসিত/ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের জন্য সিপিটিইউ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট দরপত্রে জন্য যে নীতিমালা রয়েছে তা অনুসরণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়া সিপিটিইউ এর নির্দেশনা অনুযায়ী পুনঃদরপত্র আহ্বান করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ওই আবেদনে অনুরোধও জানানো হয়েছে।

গলফ সিকিউরিটি সার্ভিস প্রাঃ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অনামিকা সামাদ এব্যাপারে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আমার স্বাস্থখাতে কাজের অভিজ্ঞতা ও সনদপত্র সবার চেয়ে বেশি রয়েছে। কিন্তু গোপন সূত্রে জেনেছি- ইতোমধ্যেই নিয়ম না মেনে আমার চেয়ে কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে তা অনুমোদনের জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া দরদাতাদের দাখিলকৃত কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হতে সত্যতা প্রতিপালন পত্র প্রাপ্তি সাপেক্ষে সনদ না পেয়েই তড়িঘড়ি করে মূল্যায়ন কার্যক্রম শেষ করে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানকে নোয়া বা ওয়ার্ক অর্ডার প্রদানের ব্যবস্থা করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘উক্ত দরপত্র সিপিটিইউ এর নির্দেশনা অনুযায়ী পুনঃদরপত্র আহ্বান করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় সিপিটিইউসহ উচ্চ আদালতের দারস্থ হতে বাধ্য হবো।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন অফিসের টেণ্ডার যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য ডা. বাইজিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এব্যাপারে কোনো কথাই বলতে চাচ্ছি না। আপনি সিভিল সার্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বুধবার রাতে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘এখনো কাউকে টেণ্ডারের কাজ দেয়া হয়নি। আর আমি যাচাই-বাছাই কমিটিতেও নেই। নিয়ম অনুযায়ী, কমিটির সদস্যরা যাচাই-বাছাই করছে।’ কম যোগ্যতাসম্পন্ন দরদাতাকে কাজ দিয়ে অনুমোদনে জন্য ঢাকায় পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সব কথাই আসলে বলা যায় না। নিয়ম মেনেই কাজ হচ্ছে।’

এএইচ/এস