রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড দেশসেরা হওয়ার নেপথ্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

৯০ দশমিক ৩৭ শতাংশ পাসের হার নিয়ে দেশসেরা রাজশাহী। বরাবরের মতো ভালো ফলাফলের কারণ হিসেবে শিক্ষকরা দেখছেন, ক্লাস টেস্ট, মডেল টেস্ট, দুর্বল শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে পড়ানো ও অভিভাবকদের সভা। এ কয়েকটি বিষয়ের উপরে ভিত্তি করে এসএসসিতে এমন ভালো ফলাফল ধরা দিয়েছে।

আর শিক্ষাবোর্ড বলছে, সরকারের বিভিন্ন প্রণোদনার ফল এমন সাফল্য।

শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের অধিনে অংশগ্রহণ করা ৩০৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার শতভাগ। এবছর বোর্ডটিতে একটিও নেই ফেলকৃত প্রতিষ্ঠান। গতবছরের তুলনায় বেড়েছে জিপিএ-৫ এর সংখ্যা। এতে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীরা এগিয়ে। শুধু তাই নয়, গতবছর (২০১৯) সালেও দেশসেরা শিক্ষাবোর্ড হওয়ার গৌরব অর্জন করে রাজশাহী।

বরাবর এমন ভালো ফলাফলের মন্ত্র হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা মনে করছেন, শিক্ষার্থীদের বেশি বেশি ক্লাস টেস্ট পরীক্ষা নেয়া। ফলে শিক্ষার্থীদের দুর্বলতাগুলো ধরা পড়ে। এতে দুর্বল শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে পড়া ও পরীক্ষা নেয়া হয়। এছাড়া মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের মাধ্যমে বিভিন্ন চিত্র দেখিয়ে পড়াশোনা করানো হয়। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বন্ধসুলভ আচরণ করেন। পড়াশোনার বিষয়ে বিভিন্ন নোট প্রদান ও কাউন্সিলিং করা হয়। ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের টেলিফোনে খোঁজ-খবর নেয়া ছাড়াও অনুপস্থিত থাকার কারণ সন্তোষজনক না হলে অভিভবকদের স্কুলে ডাকা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিয়ে নিয়মিত সভা করা হয়। এসকল কার্যক্রমের ফলে কাক্সিক্ষত ফলাফল পাওয়া গেছে।

সরকারি পিএন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রী হাসিবা মোবাশিরা ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ছাত্র আবু সালেহ মোহাম্মদ ফাহিম জানান, ক্লাসের পড়া ক্লাসে করাতেন শিক্ষকরা। এছাড়া ক্লাস টেস্ট, মডেল টেস্ট পরীক্ষাগুলো বেশি বেশি করে নিতেন শিক্ষকরা।

তারা আরও জানায়, ভালো স্কুলে পড়াশোনা করলে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে। ভালো ফলাফলের পেছনে স্কুলের শিক্ষকদের পাশাপাশি পরিবারের ভূমিকাও রয়েছে। তারা দিনে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করতো।

রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের বিষয়ে রাজশাহী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (হেলেনাবাদ) স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসাবেলা সাত্তার জানান, ‘একটু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করলে ভালো ফলাফল করা সম্ভব। ভালো ফলাফালের পেছনে ভূমিকা রয়েছে শিক্ষকদের। তারা ছাত্রীদের পাঠ্যপুস্তকের বিভিন্ন অধ্যায়ের উপরে ক্লাস টেস্ট নিয়েছেন। অভিভাবকদের ডেকে ছাত্রীদের বিষয়ে মতবিনিময় করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বোঝাতে বড় ভূমিকা পালন করেছে মিল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম। ফলে শিক্ষার্থীরা সহজে বুঝতে পারে সবকিছু।

দুর্বল শিক্ষার্থীদের বিষয়ে তিনি বলেন, সব ছাত্রীদের একসঙ্গে পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষা শেষে যে কোনো দিন দুর্বল ছাত্রীদের চিহ্নিত করে আলাদা করে পরীক্ষা নেয়া হতো। পড়াশোনার বিষয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হয়।

তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীর জন্য এসএসসি জীবনের একটি বড় ধাপ। সেই বিষয়ের উপরে লক্ষ্য রেখে নবম শ্রেণিতে সিংহভাগ পড়াশোনা শেষ করা হয়। বাকি পড়াশোনা দশম শ্রেণিতে অল্প কয়েক মাসের মধ্যে শেষ করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের পুরো বইগুলোর উপরে পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা নেয়া হয়।

আবির হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ফলাফল আসলে কোচিং বা প্রাইভেট পড়ার কারণে হয় না। পড়াশোনার মূলভিত্তি স্কুলে গড়ে উঠে। সেখানেই ভালো ফলাফল করার মত পড়াশোনা হয়। তবে অভিভাবকরা আস্থা পায় না, তাই কোচিং বা প্রাইভেটে হাজার হাজার টাকা খরচ করে ভর্তি করে।

শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজশাহী গভ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ জানান, ১১৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের বাবা-মা মনে করেন, শিক্ষার্থীরা ভালো রেজাল্ট (ফলাফল) করে প্রাইভেট-কোচিং-এ পড়ার কারণে। আসলে বিষয়টি তা নয়, একজন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফলের পেছনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ব্যাপক। শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ পড়াশোনার স্থান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখানে পড়াশোনা করে সর্বোচ্চ ফলাফল করা সম্ভব।

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহা. মকবুল হোসেন বলেন, ভালো ফলাফল গত সাত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে হয়ে আসছে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাক্ষেত্রে দেয়া প্রণোদনা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে ভালো ফলাফলে। এতে শিক্ষার্থীরা হয়েছে শতভাগ স্কুলমুখি। ফলে কমেছে ঝরেপড়ার হার। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক মনিটরিং অব্যাহত থাকায় এমন ফলাফল সম্ভব হয়েছে।

স/অ