রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড: টাকা শেষ হয়, কিন্তু কোটেশন শেষ হয় না

নিজস্ব প্রতবিদেক:
কখনো ভবন সংস্কারের নামে, কখনো রাস্তা সংস্কারের নাম আবার কখনো রাস্তা নির্মাণের নামে একের পর কোটেশনের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা খরচ করা হচ্ছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে। সরকারি অর্থ তছরুপ করতেই একের পর কোটেশনের মাধ্যমে করা হচ্ছে এসব কাজ।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের খোদ চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা এই অর্থ তছরুপের নেপথ্যে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের অন্যান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ। উন্নয়নের নামে সরকারি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের বাসভবন রয়েছে নগরীর বেলদার পাড়া এলাকায়। ওই বাসভবন সংস্কার বাউন্ডারি প্রাচীর সংস্কারসহ বিভিন্ন কাজের বিপরীতে সেখানে দফায় দফায় খরচ দেখানো হয়েছে অন্তত ৪০ লাখ টাকা। সবগুলো টাকা খরচ করা হয়েছে একের পর এক কোটেশন করে। সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কোটেশন করার নিয়মের মধ্যে থেকে একের পর এক অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা।

নগরীর কাজীহাটা এলাকায় শিক্ষা বোর্ডের কন্ট্রোলারের বাড়ি সংস্কারের জন্য তিন দফায় খরচ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। পুরনো অফিস ভবন সংস্কারের নামে খরচ দেখানো হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা, রাস্তা নির্মাণের জন্য খরচ করা হয়েছে আরও প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এছাড়াও বোর্ডের ভিতরের প্রধান রাস্তা আরসিসি করণের জন্য প্রথম ধাপে ৫ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। তবে এখনো এই টাকার বিল বোর্ডে জমা দেওয়া হয়নি। এইসব কাজ করা হয়েছে বার বার কোটেশনের মাধ্যমে। সবমিলিয়ে কোটি টাকার ওপরে কাজ করা হয়েছে গত দেড় বছরের মধ্যে। কিন্তু এসব কাজের জন্য একটিও টেন্ডার করা হয়নি।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র মতে, টেন্ডারের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ করা হলে অর্থ তোছরুপের পরিমাণ কমে আসে। কিন্তু টেন্ডার ছাড়ায় ইচ্ছেমত কোটেশন করে লাখ লাখ টাকা তোঠরুপ করা হয়েছে। এ কারণেই টেন্ডারের ধারে-কাছে না গিয়ে বার বার কোটেশনের মাধ্যমেই কাজগুলো করা হয়েছে। ফলে উন্নয়নের নামে বড় ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা।

শিক্ষা বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শিক্ষা বোর্ডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ারের মাধ্যমেই বার বার টেন্ডার করে এই অনিয়মগুলো করা হয়েছে। গোলাম সারোয়ারের পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে কোটেশনের মাধ্যমে কাজগুলো করানো হয়েছে। ফলে একই ঠিকাদারকে একাধিবার কাজ দেওয়া হয়েছে।

এ নিয়ে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে এক কর্মকর্তার উচ্চবাচ্য হয় বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক সূত্র।

সূত্র আরও জানায়, উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক হলেন শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরির্দশক নেশার দেবাশীষ রঞ্জন। কিন্তু কখনো কখনো তাঁকেও কোটেশনের বিষয়ে অবহিত করা হয় না। ফলে কেবল চেয়ারম্যানের ইচ্ছেমতই কোটেশন আহ্বান করে উন্নয়নের নামে লাখ লাখ টাকা তোছরুপ করা হয়। উন্নয়ন কমিটির আরেক সদস্য উপসচিব ভান্ডার নেশার উদ্দিন আহম্মেদও এই কোটেশন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলেও একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

জানতে চাইলে শিক্ষা বোর্ডের নিরাপত্তা কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘আমি শুধু কাজগুলো দেখভাল করি। এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নাই। কাজেই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হওয়ারও সুযোগ নাই।’

জানতে চাইলে উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক দেবাশীষ রঞ্জন বলেন, ‘জরুরী কোনো কাজের প্রয়োজন হলে উন্নয়ন কমিটির অনুমতি নিয়েই করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে চেয়ারম্যানই হলো বোর্ডের সকল ক্ষমতার মূল। তিনিই ভালো বলতে পারবেন, কিভাবে কাজগুলো করা হয়। আমি এখানে নতুন এসেছি। কোটেশনের এই কাজগুলো নিয়ে অতটা বেশি বলতে পারব না।’

উপসচিব ভান্ডার নেশার উদ্দিনের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অনেক কাজই টেন্ডারের মাধ্যমে হয়েছে। কোটেশনের নিয়মের মধ্যে থেকেও কিছু কাজ হয়েছে। জরুরী কিছু করতে হত বলে এসব কাজ করা হয়েছে। তবে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। কেউ এর প্রমাণও দিতে পারবে না। কাজেই যারা এগুলো ছড়াচ্ছে-তা মিথ্যা।’

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একই কাজ বার বার করতে হচ্ছে-তাই বার বার কোটেশন করতে হচ্ছে। এখানেই উন্নয়ন কমিটির অনুমতি নিয়েই করা হচ্ছে। আমার একার কোনো সিদ্ধান্তে কোনো কাজ হচ্ছে না।’

 

স/আ