রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতাল: বছর না যেতেই জলে গেলো কোটি টাকার সংস্কারকাজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালটি সংস্কারের পর বছর পার হয়নি এখনো। প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয় এই হাসপাতালটির বিভিন্ন কক্ষ। কিন্তু বছর না যেতেই সংস্কার করা ছাড়ের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে। উইপোকারা বাসা বেধেছে। ছাদ দিয়ে পড়ছে এসির পানি। ছাদ চুয়ে পড়া এসির পানিতে স্টোরে রাখা ওষুধগুলোও নষ্ট হতে বসেছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে।

তাদের দাবি, পুরনো ভবনটি সংস্কারের নামে প্রায় এক কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। যে টাকা ব্যয়ে ভবনটি সংস্কার করা হয়েছে সেই টাকা দিয়ে এই মানের আরেকটি ভবনই তৈরী করা যেত। কিন্তু সংস্কারের লাভ বেশি দেখে রেলওয়ের তৎকালীন পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী ও পাকশি বিভাগীয় প্রকৌশলী দু’জনে মিলে ঝুঁকেছেন সংস্কারকাজে। ফলে বছর না যেতেই জলে যেতে বসেছে পুরো টাকা। আবার সংস্কারের আওতায় ভবনের দরজাগুলো পরিবর্তনের কথা বলা থাকলেও সেগুলোও পরিবর্তন করা হয়নি। ফরে পুরনো দরজায় উইপোকাদের বসবাস। কোনো কোনোটি আধভাঙ্গা হয়ে আছে। কিন্তু ভিতরে ও বাইরে নামেমাত্র চুনকাম আর টাইলস বসিয়ে সংস্কারের নামে সরকারি অর্থ লোপাট করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সরেজমিন রাজশাহী রেলওয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, এই হাসপাতালটির মূল ভবন তিন তলা। এখানে ছোট-বড় মিলে কক্ষ রয়েছে ২৭টি। কক্ষের ভিতর ও বাইরের ওয়ালগুলোতে সদ্য রং করার চিহ্ন লেগে আছে। কিন্তু চুনকামের ওপর করা রংগুলো এরই মধ্যে উঠে যেতেও শুরু করেছে। কোথাও কোথাও উইপোকার বাসা বেধেছে। আবার কোথাও কোথাও খসে পড়ছে পলেস্তারা। মূলত হাসপাতালের মূল ভবনটিই সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু মূল ভবনের প্রতিটি কক্ষের ছাদ থেকে চুইয়ে পড়ছে পানি। ছোপ ছোপ পানিগুলো কক্ষের ভিতরেও জমা হয়ে গেছে কোথাও কোথাও। স্টোর রুমেও এসি চলার কারণে ঠান্ডা হয়ে জমা হচ্ছে পানি। যা এর আগে কখনো হয়নি বলে জানান স্টোর কিপার আনোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘এসির ঠান্ডা সহ্য করতে পারছে না কক্ষের ছাদগুলো। এ কারণে পানি জমা হয়ে যাচ্ছে ছাদের। ভিতরের অংশে। সেই পানি আবার চুইয়ে পড়ছে ঘরের মেঝেতে। এতে করে স্টোরের ওষুধও নষ্ট হতে বসেছে। এই রকম আগে কখনো হয়নি। সংস্কার করার পর থেকেই এমন অবস্থায় পরিণত হয়েছে।’

আরেক কর্মচারী বলেন, ‘যত টাকা ব্যয় হয়েছে, তা দিয়ে এই রকম আরেকটি ভবন তৈরী করা যেত। প্রতিটি কক্ষের পেছনে বড় জোর ৫০-৩৫ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সেই হিসেবে ২৭টি কক্ষের পেছনে ব্যয় হয়েছে বড় জোর ১০ লাখ টাকা। কিন্তু প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে এই হাসপাতালটি সংস্কারে। সংস্কারের নামে লুটপাট করতেই এতো টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু এই সংস্কারকাজ কোনো কাজেই আসছে না। উল্টো এখন পানি চুইয়ে পড়ায় রুমের ভিতরে বসে থাকাও দায় হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে অধিকাংশ সময় স্টোর রুমের এসি, চিকিৎসকদের কক্ষের এসিও বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’

হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে এবং পাকশি বিভাগীয় প্রকৌশলীর তত্বাবধায়নে এই কাজটি করা হয়। তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী রমজান আলী ও বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে এ কাজ করা হয়। কিন্তু কাজের নামে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। ঠিকাদার রেন্টু এই কাজ করেন। এরই মধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানকে সব টাকাও পরিশোধ করা হয়। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী অন্তত তিন বছর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজটি রক্ষণাবেক্ষণের কথা বলা হলেও বিল তুলেই লাপাত্তা হয়ে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে সংস্কারের পরে নানা সমস্যা দেখা দিলেও পরবর্তিতে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এসব নিয়ে জানতে ঠিকাদার রেন্টুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

তবে বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আল ফাত্তাহ মো: মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু নতুন এসেছি এখানে। তারপরেও এই হাসপাতালে কি কাজ ছিল, কিভাবে করা হয়েছে, কেনো এমন সমস্যা হলো তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিব।’

 

স/আর