বগুড়ার তিন শিক্ষক সাময়িক বহিস্কার

রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়: নার্সিং কলেজের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষা স্থগিত


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত নার্সিং কলেজের বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে এবার। এ অভিযোগ পাওয়ার পরে গতকাল রবিবার রামেবির অধিভূক্ত নার্সিং কলেজগুলোতে বি.এস,সি ইন নার্সিং, বি.এস.মি ই পাবলিক হেলথ নার্সিং (পোস্ট বেসিক) এবং বি.এস,সি ইন মিডওয়াইফারি (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেটি হতে পারেনি।  তার আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গত ১ জানুয়ারি জরুরী বিজ্ঞপ্তি জারি ওই পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় রামেবি কর্তৃপক্ষ। রামেবির চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আনোয়ার হাবিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। আর এ নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম অসন্তোষ। এ ঘটনায় বগুড়া নার্সিং কলেজের তিন শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তারা হলেন- আবদুল বারী সরকার, মোস্তানুর সুলতানা ও গুলনাহার খাতুন। রামেবিতে প্রশ্নপত্র তৈরির সময় তারা ছিলেন।

রামেবি সূত্র মতে, রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর বিভাগের সকল সরকারি ও বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং কলেজ ও প্যারামেডিক্যাল কলেজ রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত। গতকাল অধিভূক্ত রবিবার নার্সিং কলেজগুলোতে কলেজগুলোতে বি.এস,সি ইন নার্সিং, বি.এস.মি ই পাবলিক হেলথ নার্সিং (পোস্ট বেসিক) এবং বি.এস.সি ইন মিডওয়াইফারি (পোস্ট বেসিক) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য সকল প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন সংশ্লিষ্ট কলেজগুলো। কিন্তু তার আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয় কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে।

একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, অসোন্তষ সৃষ্টি হয় রামেবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝেও। প্রশ্নপত্রের সার্বিক দায়দায়িত্ব হলো রামেবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের। কিন্তু ওই শাখা থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে কয়েক বার। কিন্তু এসব নিয়ে কখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবারকার বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জমা পড়ে। এর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। পাশাপাশি পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয় রামেবি কর্তৃপক্ষকে। এ নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হলে রামেবি কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে পরীক্ষা স্থগিত করে দেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, রামেবির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জদিত। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাদের কারণে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছে।’

সূত্র মতে, বগুড়া নার্সিং কলেজের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকে আবদুল বারী সরকার, মোস্তানুর সুলতানা ও গুলনাহার খাতুন রামেবিতে প্রশ্নপত্র তৈরির সময় তারা ছিলেন। গত ১৭ জানুয়ারি প্রশ্নপত্র তৈরি হয়। এরপর ৩০ জানুয়ারি ও ১ ফেব্রুয়ারি রামেবির নিজস্ব পরিবহনে এ অঞ্চলের সরকারী মেডিকেল কলেজগুলোর ভল্টে ভল্টে প্রশ্ন পাঠানো হয়। রোববার থেকে পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। এর আগে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আর ওই তিন শিক্ষককে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।

বগুড়া নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ আরশে আরা বেগম বলেন, ‘আমাদের আরও কয়েকজন শিক্ষক প্রশ্নপত্র করার সময় ছিলেন। তাদের মধ্যে তিনজনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে যে তারা প্রশ্ন ফাঁস করেছেন। সে জন্য গত বৃহস্পতিবার তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় গঠন করা তদন্ত কমিটির চিঠিতে বিষয়টি আমি জেনেছি।’

জানতে চাইলে রামেবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনোয়ার হাবিবের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের জন্য বার বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) এ. জেড. এম মোস্তাক হোসেন বলেন, ‘পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্তও করবে। তারা একটি তদন্ত কমিটি গঠনও করেছে। এখন দেখা যাক কারা এর সঙ্গে জড়িত।’

স/আর