রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়: শুরুতেই নিয়োগে অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র পাঁচ মাস হলো। কিন্তু এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিময়ের অভিযোগ উঠেছে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ১১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ীভিত্তিতে। এদের কয়েকজন জামায়াতপন্থী বলে জানা গেছে। এ নিয়োগে স্বজনপ্রীতি এবং অর্থের লেনদেনও ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।

জানা গেছে, গত বছরের ৭ নভেম্বর এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের আগের ভবনেই শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। তারপর বিভিন্ন সময় একে একে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়।

যাদের অধিকাংশই জামায়াত-বিএনপি পরিবারের সদস্য। কেউ কেউ বিএনপি সরকারের আমলে চাকরি পেয়েই পরে চাকরি হারায়; তাদের কেউ কেউ এখন আবার এ রাজশাহী মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছে।

রাজশাহী মেডিক্যালের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগে জানায়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে ইউজিসি থেকে সার্কুলারের মাধ্যমে বিভিন্ন পদে মোট ৫১ জনকে নিয়োগ দিতে বলা হয়। কিন্তু নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করে ১১ জনকে অস্থায়ীভাবে নেওয়া হয়েছে। আরো কয়েকজনকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরে তাদের স্থায়ী করা হবে। নতুন নিয়োগে বিপুল অঙ্কের অর্থের বাণিজ্যও হয়েছে বলেও অভিযোগ করে তারা।

নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন সেকশন অফিসার জামাল উদ্দিন। তিনি বিএনপি আমলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাইকারি হারে যে ৫৪৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অফিস সহকারী পদে চাকরি পেয়েছিলেন। রাজশাহী চারুকলা মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করতেন তিনি। তাঁর বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জে। একই পদে নিয়োগ পাওয়া আরেকজন হলেন আমিনুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি নওগাঁ জেলায়। নিয়োগ পাওয়া আরেক কর্মকর্তা নাজমুল হক। তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে হিসাবরক্ষক পদে চাকরি করতেন। তাঁকেও সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ফাইন্যান্সের অ্যাসিসট্যান্ট ডাইরেক্টর করা হয়েছে। একই পদে রাজশাহী নগরীর বিনোদপুর এলাকার রাশেদুল ইসলাম, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের উচ্চমান সহকারী সোবহান আলী নিয়োগ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রাশেদুল ইসলাম ইউজিসির সচিবের ব্যক্তিগত অফিসার ছিলেন। কুড়িগ্রাম জেলার উম্মে হাবিবা নামের এক কলেজছাত্রীকেও একই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

উপাচার্যের ব্যক্তিগত অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ইসমাইল হোসেন। তিনি রাজশাহীর  লক্ষ্মীপুরে অবস্থিত মাইক্রোপ্যাথ ক্লিনিকে রোগীদের তালিকা তৈরি করতেন।

এ ছাড়া অফিস সহকারী পদে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল এলাকার নূরে রায়হান এমএলএসএস পদে,  চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল এলাকার জামায়াতপন্থী জহিরুল ইসলাম এবং ভিসির গাড়িচালক হিসেবে বগুড়ার মাহাবুব রহমানকে এবং এমএলএসএস পদে মাহবুবের ভায়রা ভাইয়ের ছেলে মেহেদী হাসানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নাচোলের দুজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের সাবেক সচিব একরামুল হক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে পদগুলো পূরণ করার জন্য ইউজিসি থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু সে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চাপ সামলাতে গোপনে অস্থায়ী ভিত্তিতে একের পর এক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন উপাচার্য। পরে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে এসব লোককেই ফের একই পদে বসানো হবে। তখন অনেক পদেই শুধু লোক দেখানো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চাকরিপ্রার্থীদের হয়রানি করা হবে। ’

গতকাল দুপুরে এ ব্যাপারে উপাচার্য মাসুম হাবিবের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘গোপনে নিয়োগের বিষয়টি সঠিক নয়। প্রয়োজনের কারণেই কাউকে কাউকে অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে কোনো বাণিজ্য হয়নি। ’

উপাচার্য মাসুম হাবিব ‘প্রয়োজনের তাগিদে’ অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ নিয়োগ অনুমোদন দেয়নি। তিনি নিজে কোনো স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

স/আর