সভাপতি রাসিক কাউন্সিলর, সম্পাদক ঠিকাদার

রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগে চরম স্থবিরতা

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা বেশ স্থবির হয়ে পড়েছে । নেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে নেতাকর্মীদের বেড়েছে দূরত্ব। সংগঠন পরিচালনার জন্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে রয়েছে চরম সমন্বয়হীনতা। কমিটির অধিকাংশ নেতাই নিষ্ক্রিয়। সভাপতি বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি জনপ্রতিনিধি। সিটি ভবনে ব্যয় করেন দিনের সিংহভাগ সময়। আর সাধারণ সম্পাদক ব্যস্ত ঠিকাদারিতে। দীর্ঘ এক দশক আগের কমিটি দিয়ে চলছে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মকাণ্ড।

সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে সম্মেলনের নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত না হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ এবং অসন্তোষ বিরাজ করছে।

অভিযোগ উঠেছে— কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। এ কারণেই রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হচ্ছে না।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটি সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন গত ৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে। জয়পুরহাটে সম্মেলন হয়েছে গত ৫ অক্টোবর। হবিগঞ্জে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৫ সেপ্টেম্বর। খুলনা জেলা ও মহানগরী সম্মেলনও ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইভাবে দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় ইতোমধ্যে সম্মেলন শেষ হয়েছে। নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ২৫ অক্টোবর। এ ছাড়া সারা দেশের বেশ কয়েকটি জেলা ও মহানগরীতে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি জেলার কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সর্বশেষ কমিটি ঘোষণা করা হয়। আবদুল মোমিনকে সভাপতি ও জেডু সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটি গঠনের পর রাজশাহী মহানগরীর ৩৭টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র পাঁচটি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করা হয়। অন্য ওয়ার্ডগুলোতে কমিটি গঠন করতে না পারার কারণে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এ অঙ্গ সংগঠনটি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে পারেনি। এমনকি রাজনীতির মাঠেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। সর্বশেষ করোনাকালেও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ছিলেন নিষ্প্রভ।

এদিকে রাজশাহী মহানগন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা অধিকাংশই এখন নিষ্ক্রিয়। সভাপতি আব্দুল মোমিন ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার কারণে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সিংহভাগ সময় দেন। এ ছাড়া দাপ্তরিক কাজে সিটি ভবনে সময় দিতে হয়। আর সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার ঠিকাদারি ও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। অধিকাংশ সময় তিনি ঠিকাদারিতে ব্যয় করেন। ফলে শীর্ষ এই দুই নেতার সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের দেওয়ার মতো সময় নেই।

এ ছাড়া সভাপতি মোমিন ও সাধারণ সম্পাদক জেডু রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দুই বলয়ে অবস্থান করছেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ। একসময়ের ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু হলেও মোমিন ও জেডুর মধ্যে রাজনৈতিক সমন্বয় নেই। এ কারণেই বর্তমানে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, কমিটির এক নম্বর সহসভাপতি নাজমুল ইসলাম কমিটি গঠনের পর থেকেই নিষ্ক্রিয়। তিনি মূলত ফার্নিচার ব্যবসা ও ঠিকাদারির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এক নম্বর যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিক আলম বর্তমানে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত। আরেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ টিটো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করছেন।

এক নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক সিদ্ধার্থ শংকর সাহা বর্তমানে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। এর আগে তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। তিনিও নিষ্ক্রিয়। তিন নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন রেলওয়ের ঠিকাদার। তার সঙ্গেও নেতাকর্মীদের নেই সাংগঠনিক যোগাযোগ। মূলত সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সবাই তাদের ব্যক্তিগত ব্যবসা এবং কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

এদিকে রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ধিত সভার পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ছিল ২৩ অক্টোবর। এ সভায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শাহ জালাল মুকুলের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, কেন্দ্র থেকে বার বার বর্ধিত সভা এবং সম্মেলনের জন্য তাগাদা দেওয়া হলেও অদৃশ্য কারণে বর্তমান সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে আগ্রহী নন।

অপরদিকে রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে সভাপতি পদে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার এবং রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষের নাম শোনা যাচ্ছে। করোনার সময়ে রকির ইতিবাচক কার্যক্রমের কারণে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।

এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মহিদুল ইসলাম মোস্তফা এবং ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমান কমিটির দপ্তর সম্পাদক অরবিন্দ দত্ত বাপ্পীর নাম শোনা যাচ্ছে।

এ ছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আরও কয়েকজন নেতা আলোচনায় রয়েছেন। কমিটির নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করে বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক জেডু সরকার বলেন, নেতারা রুটি-রুজির কারণে ব্যস্ত। তবে তারা সংগঠনকে সময় দেন না এ অভিযোগ ঠিক নয়। কিছুটা সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। নতুন সম্মেলন হলে সেটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

রাসিক কাউন্সিলর বর্তামান কমিটির সভাপতি আব্দুল মোমিন বলেন, জনপ্রতিনিধি হওয়ার কারণে সংগঠনকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারছি না। তবে সাধারণ সম্পাদক জেডুর সঙ্গে আমার রাজনৈতিক সমন্বয় নেই, এ অভিযোগ ঠিক নয়। আগামী ১৩ নভেম্বর বর্ধিতসভার সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা অনুমতি দিলে সে সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সার্বিক বিষয়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ জালাল মুকুল বলেন, কমিটির মেয়াদ দীর্ঘদিন হওয়ার কারণে রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কিছু নেতা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। সংগঠনে গতি আনতে দ্রুত বর্ধিতসভার আহ্বান করা হবে। ওই সভাতেই সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। আমরা সারা দেশেই সম্মেলন করছি। রাজশাহীতেও সম্মেলনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রাণ ফিরে পাবে।

এএইচ/এস