রাজশাহী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণে জমি দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজশাহী নগরীর খড়খড়ি এলাকায় অন্যের জমি দখল করে নিজস্ব ভবন নির্মাণ করছে বেসরকারী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব সম্পত্তি এবং জোর করে দখল করা সম্পত্তিতে নতুন এই ক্যাম্পাসটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে শেষ সম্বল হারাতে বসেছেন স্থানীয় আয়নাল হক নামের এক অসহায় ব্যক্তি।

জমি ফিরে পেতে বা নায্য মূল্য পেতে তিনি বরেন্দ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন দিনের পর দিন। কিন্তু প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আয়নাল হককে কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না। অথচ তার প্রায় ৫ কাঠা জমি রয়েছে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাসের একেবারে মাঝখানে।

অভিযোগ উঠেছে, শুধু এই আয়নাল হকেরই নয় এমনকি সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি জায়গায়ও তারকাঁটা দিয়ে ঘিরে রেখেছেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

 

আয়নাল হক জানান, পৈত্রিক সূত্রে রাজশাহী নগরীর খড়খড়ি বাইপাশ এলাকায় তাঁর প্রায় ৫ কাঠা জমি রয়েছে। ওই জমির পাশে তাঁর অপর চার ভাইয়েরও জমি ছিল। কিন্তু ২০১০ সালে ওই চার ভাই তাঁদের পৈত্রিক সম্পত্তিগুলো বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্রি করে। তবে একমাত্র আয়নাল হকই তাঁর পৈত্রিক শেষ সম্বলটুকু হারাতে চাননি বলে বিক্রি করেননি এখনো।

আয়নাল হক অভিযোগ করে আরো জানান, তিনি জমি বিক্রি না করলেও তাঁর জমিটিও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জোর করে গত মাস দুয়েক আগে দখল করে নেয়। এরপর গত ৩০ নভেম্বর ওই জমিতে থাকা ৫টি বিশালাকার আমগাছ ও একটি খেজুর গাছও কেটে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এসময় বাধা দিতে গেলে তারা নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে আয়নাল হক ও তার পরিবারের লোকজন। এছাড়াও জমিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে নামেমাত্র মূল্য দিয়ে বিক্রি করার জন্যেও চাপ প্রয়োগ করতে থাকে।

আয়নাল হক বলেন, তাঁর জমির মূল্য এখনকার বাজারদর অনুযায়ী অন্তত ১৫ লাখ টাকা কাঠা। কিন্তু বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাত্র ৬ লাখ টাকা কাঠা হিসেবে দিতে চাচ্ছে। কিন্তু আমি এই মূল্যে জমি বিক্রি করে অন্য কোথাও একই পরিমাণ জমি কিনতে পারবো না। আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য বাড়ির ভিটার প্রয়োজনে আমার জমি দরকার আছে। তাই আমি জমি হারালে আর জমি কিনতে পারব না।’

আয়নাল হক জানান, তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। তিনি কৃষিকাজ করে কোনোমতে জীবন-যাপন করেন। এই অবস্থায় প্রভাবশালী বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি পরিবার নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন। জমি দখল ও গাছ কাটার অপরাধে তিনি স্থানীয় চন্দ্রিমা থানায় লিখিত অভিযোগও করেছেন। এছাড়াও বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেও ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এখন পর্যন্ত।

স্থানীয় হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, এই জায়গার বর্তমান বাজারের চেয়ে অর্ধেক দামও এখন আর দিতে চাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আয়নাল হক ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজনের জমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একই কায়দায় দখল করে নিয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন দালাল ও প্রভাবশালী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভয়ে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ রয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।’

বিষয়টি নিয়ে নগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসি হুমায়ন কবির বলেন, ‘এ নিয়ে অভিযোগ আমি পেয়েছি। কিন্তু জমি নিয়ে কিছু করার নাই আমার। তারা আদালতে মামলা করতে পারে।’

জানতে চাইলে বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী পরিচালক শামীম আহসান পারভেজ  বলেন, ‘এ নিয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। কথা বলতে হলে আমার অফিসে আসেন। তবে আমরা কারো জমি দখল করছি না।’

বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটির রেজিস্টার মহিউদ্দিন  বলেন, এই বিষয়টি আমি দেখছি না প্রজেক্ট ডাইরেক্টর দেখছেন, তিনিই ভালো বলতে পারবেন।’

স/র