রাজশাহী নভোথিয়েটার উচ্ছ্বাসিত দর্শনার্থীরা, হাত দিয়ে ধরা যায় আকাশ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছয়টি প্রজেক্টরে ভেসে উঠছে পুরো আকাশ। যেন হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় মহাকাশ। এত কাছ থেকে মহাকাশ দেখার স্বপ্ন বাস্তবে রুপ দিয়েছে রাজশাহীতে নির্মাণ করা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার। এ নভোথিয়েটারে মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্য থেকে পৃথিবীর সৃষ্টি, সূর্য, চাঁদ, গ্রহ, নক্ষত্র সবই এক পর্দায় ভেসে উঠছে নিমেষেই।

নিখুঁত সাউন্ডের জন্য পুরো হলে লাগানো হয়েছে ডলবি ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম। যা প্রদর্শনীর মাধ্যমে নিয়ে যাবে সরাসরি মহাশূন্যে গ্রহ-নক্ষত্রের খুব কাছে। থ্রিডি প্রজেক্টরের মাধ্যমে একসঙ্গে ১৫০ দর্শনার্থী দেখতে পাচ্ছেন মহাকাশ। যাদের মহাকাশ নিয়ে নানা কৌতুহুল আগে থেকেই, তারা ছুটে আসছেন রাজশাহীর কেন্দ্রীয় উদ্যানের পাশে সদ্য নির্মিত অত্যাধুনিক বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটরে।

এছাড়াও এখানে এরই মধ্যে চালু করা হয়েছে থ্রিডি চশমা চোখে দিয়ে এক ঘন্টার দুটি মুভি দেখার সুযোগ। মহাকাশ সম্পর্কিত একটি ফ্লিম ও জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী সম্পর্কিত একটি ফ্লিম দেখানো হচ্ছে থ্রি-ডি চশমার মধ্যে। এছাড়া ৩টি চশমা চোখে দিয়ে ফাইভডিতে দেখানো হচ্ছে রোলার কোস্টার। যেটি শিশুদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এরই মধ্যে। ফলে প্রতিদিন বাড়ছে ভিড়ের পরিমাণ। দিনে অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি শো চালানো সম্ভব। এখন দুটি করে শো চালানো হচ্ছে। শীতকাল শেষে চলবে পাঁচটি শো আর গরমকালে চলবে ছয়টি শো।

গত ১৬ আগস্ট খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ নভোথিয়েটার। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এ নভোথিয়েটারটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ওইদিন থেকে। এর আগে গত ১৪ নভেম্বর প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজশাহীর গণপূর্ত অধিদপ্তর গত জুলাই মাসে নভোথিয়েটারটির পুরো কাজ শেষ করেছে।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ২০১৮ সালে রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার সামনের অংশে শুরু হয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার’এর নির্মাণ কাজ। করোনা মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধসহ নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় চলতি বছরের জুলাই মাসে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এ প্রকল্পের মূল আকর্ষণ হিসেবে থাকছে প্ল্যানেটেরিয়ামসহ ফাইভ-জি হল ও আধুনিক অবজারবেটেড টেলিস্কোপ; যা দেশে প্রথম। এটা দিয়ে মহাকাশ গবেষকেরা নভোমণ্ডলের গবেষণা আরও এগিয়ে নিতে পারবেন। এ নভোথিয়েটারে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে তিন তলায় যেতে ভেতরে দুটি বড় সিঁড়ি ছাড়াও রয়েছে লিফট ও এস্কেলেটর ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। তৃতীয় তলায় পূর্ব-উত্তর কোনায় বসানো হয়েছে ডুম বা গম্বুজ। সফটওয়্যার চালুর সঙ্গে সঙ্গে ক্লিক করলেই গম্বুজের চারপাশ থেকে হালকা আলোয় আলোকিত হতে শুরু করছে মাথার ওপরের সাদা পর্দা।

চারপাশের মোট পাঁচটি প্রজেক্টর একসঙ্গে চালু হয়ে শুরু হচ্ছে পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য দ্য বিগ ব্যাং শো। কক্ষটিতে প্রবেশ করতে হচ্ছে জুতা খুলে। কারণ ভেতরে খুবই স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। নভোথিয়েটারটি প্রতিটি ফ্লোরে লাইটিং, ভবনের সম্মুখে সুদৃশ্য পানির ফোয়ারাসহ করা হয়েছে আধুনিক ডেকোরেশন। পুরো ভবনে সেন্ট্রাল এসি স্থাপন, টিকিটিং সিস্টেম পুরোপুরি অটোমেটেড ও ডিজিটাল। এছাড়া মেঝেতে বিছানো হয়েছে মূল্যবান মাদুর। সারি সারি লাল রঙের আরামদায়ক চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। এর পর চালু হবে রাইডসিমেলেটর। এ রাইডে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরবে। এছাড়াও থাকবে সাইন্টিফিক ২০টি। এখানে রোবট থাকবে, শিশুদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে। এগুলো দেখে মুগ্ধ হবে শিশু শিক্ষার্থীসহ সব ধরনের দর্শনার্থীরা।

এ বিজ্ঞান গবেষণা ও মহাকাশ প্রদর্শনী কেন্দ্রটি বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আধুনিক ভবন হয়েছে রাজশাহীতে। রাজশাহী গণপূর্ত-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ জানান, প্রকল্পে শুধু ভবন তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। বাকি অর্থ ব্যয় হয়েছে নভোথিয়েটারের যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য খাতে। শুধু প্ল্যানেটেরিয়াম ছাড়াও এখানে রয়েছে বিশাল জায়গা। যেকোনো বিজ্ঞান প্রদর্শনী ছাড়াও চাইলে শিক্ষাবিষয়ক নানা অনুষ্ঠান এখানে করা সম্ভব।

ঢাকার পরে বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে এটিই দ্বিতীয় নভোথিয়েটার। এ নভোথিয়েটরের উপ-পরিচালক শামসুর রেজা রেজা বলেন, এখনো আমরা এ অথ্যাধুনিক নভোথিয়েটরটি পুরোপুরি চালু করতে পারিনি। জনবলও সঙ্কট আছে। জনবল নিয়োগ দেওয়ার পক্রিয়া চলছে। নিয়োগ সম্পন্ন হলে এবং আরও কিছু চোট ছোট কাজ বাকি আছে, সেগুলো সম্পন্ন হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে ৪টি ইভেন্টই চালু করতে পারবো। তখন দর্শণার্থীর সংখ্যা আরও বাড়বে।

তিনি আরও জানান, এ নভোথিয়েটরে আধুনিক ফায়ার প্রোটেকশন ও ডিটেকশন ব্যবস্থাসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতে লাগানো হয়েছে ১৪০টিরও বেশি সিসি ক্যামেরা। দর্শনার্থীদের জন্য আরও থাকছে অন্তত ১০০টি কার পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।

এখন যে দুটি ইভেন্ট চালু আছে, সেগেুলোর মধ্যে ফ্লিম দেখতে নেওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা এবং মহাকাশ দেখতে নেওয়া হচ্ছে ৬০ টাকা করে টিকিট।