রাজশাহী নগরে ফেরা ২১০৩ প্রবাসীর কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করেছে করোনাযোদ্ধা পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সারাদেশে করোনার প্রভাবে যখন কঠিন সময় পার করছে, সেখানে রাজশাহী মহানগরীতে করোনা পরিস্থিতি যথেষ্টই নিয়ন্ত্রণে। এর অন্যতম কারণ হলো, করোনাযুদ্ধের শুরুতেই আরএমপি পুলিশের কঠোর অবস্থান। তাদের দক্ষতায় এখন পর্যন্ত এ নগরীতে আসা ২১০৩ জন প্রবাসীর সম্পূর্ণ কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়। এর বাইরেও করোনাভাইরাসের মহামারী আক্রমণ দেখে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ রাজশাহী মহানগরকে করোনামুক্ত রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়।

বিশ্বব্যাপী করোনার আক্রমণে প্রবাসীদের দেশে ফেরার ঢেউয়ে রাজশাহী মহানগরীতেও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ফেরত আসেন, যাদের অনেকেই করোনা প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়া দেশ থেকে এসেছিলেন। বিমানবন্দর এবং অন্যান্য স্থল বন্দরে ইমিগ্রেশন থেকে প্রদত্ত তথ্যতে দেখা যায়, ১ মার্চ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত সর্বমোট ২ হাজার ১০৩ জন প্রবাসী রাজশাহী মহানগরীতে এসেছেন। মহানগর পুলিশের সকল থানা একযোগে নিজ নিজ এলাকায় এ সকল ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করেছেন।

কাজটি ছিল বিশাল কর্মযজ্ঞ। কেন না বেশীর ভাগ ব্যক্তিরই পাসপোর্টে প্রদত্ত ঠিকানার সাথে মিল না থাকায় তাদের খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য ছিল। পরে নগর বিশেষ শাখা পাসপোর্ট অফিসের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে ঐ সমস্ত পাসপোর্টে প্রদত্ত দ্বিতীয় যোগাযোগ ও মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের কে চিহ্নিত করে এবং কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করে।

রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার হুমায়ুন কবিরের নির্দেশনায় নগরীতে প্রবেশ ও চলাচল সীমিত করার উদ্দেশ্যে নগরীর প্রবেশদ্বার গুলোতে দিন-রাত ২৪ ঘন্টার জন্য চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়নগরীর সুরক্ষার জন্য ৬ এপ্রিল প্রবেশদ্বারগুলোতেও লকডাউন করে দেয়া হয়। শহরের অধিকাংশ অটোরিক্সা গ্যারেজগুলোতে পুলিশের সদস্যরা নিয়মিত টহলের মাধ্যমে অটোরিক্সার চলাচলে সীমিত করে দেওয়া হয়।

শহরের কাঁচা বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় কমাতে নেয়া হয় বিভিন্ন কৌশল। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার জন্য বাজারে চলাচলে সময়সীমা বেধে দেয়া হয়। প্রায় ২০০ ভ্যান প্রস্তুত করে ভ্যানের মাধ্যমে কাঁচা সবজি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের উদ্যোগে। বাজারের ভিতরের রাস্তা গুলিতে ভিড় কমাতে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।

সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আরএমপি পুলিশের ওয়াটার কেনন গাড়ীগুলো দিয়ে জীবাণুনাশক পানি ছিটানো হয়।

এর পাশাপাশি জনগনকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। ইউনিট এবং থানাগুলোর প্রবেশ মুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়। মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত মাইকিং করা হয়। মসজিদে লিফলেট বিলিসহ সচেতনতামূলক প্রচারনা চালানো হয়।

সচেতনতামূলক ব্যানার ও ফেস্টুন লাগানো হয়। ফেসবুক পেজের মধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে ডিজিটাল প্রচারণা চালানো হয়। বিশেষ করে কোয়ারেনটাইন থাকা ব্যক্তির পরিবার ও প্রতিবেশীদের মধ্যে অযথা ভয় দুর করে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত কাউন্সিলিং করা হয়।

আরএমপি সূত্র মতে, দেশের ঢাকা, চট্রগ্রামসহ অন্যান্য মহানগরীতে যখন অসংখ্য মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে তখন রাজশাহী মহানগরীতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত মাত্র ১২ জন। এ সকল রোগীদের প্রত্যেককেই পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানাগুলির মাধ্যমে যথাযথ নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার হুমায়ুন কবির বলেন, সরকারি-বেসরকারী অফিসসমূহ এবং গণপরিবহন সীমিত আকারে চালু করায় পুলিশের জন্য সামনের দিনগুলিতে আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কিন্তু আমরা রাজশাহী মহানগরবাসীর প্রত্যাশা এ চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত আছি। পুলিশ এই নগরবাসীর জন্য রাতদিন পরিশ্রমক করে যাচ্ছে।

স/আর