রাজশাহী নগরজুড়ে ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনকে ঘিরে নগরীর তেরোখাদিয়া স্টেডিয়ামের সামনে গোল চত্বর ঘিরে অন্তত পাঁচ হাজার ব্যানার, ফেস্টুন এবং পোস্টার টাঙ্গানো হয়েছে। হেভিওয়েট দুই মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ব্যানার, ফেস্টুন এবং পোস্টারের পাশাপাশি রয়েছে নগরীর তিন ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের ব্যানার, ফেস্টুন এবং পোস্টার। এই মোড়টির দক্ষিণ দিকে তিন নম্বর ওয়ার্ড এবং উত্তর দিকে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড।

দুটি ওয়ার্ডের ১৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর ব্যানার, ফেস্টুন এবং পোস্টারেও ছেয়ে গেছে মোড়টি। ফলে মোড়ের বিদ্যুতের পিলার থেকে শুরু করে, গাছের ডাল, সড়ক ডিভাইডার, মাথার ওপর দড়ি টাঙ্গিয়েও ব্যানার, ফেস্টুন এবং পোস্টারে ভরে দেওয়া হয়েছে।

ওই মোড়ে চা পান করছিলেন ষাটার্দ্ধো ব্যক্তি নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, নির্বাচনী ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারের ছেয়ে গেছে।এসময় পাশের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ভাই এখন প্রচারেই সব। ভোটের রাজনীতিতে প্রচার না হলে হয়। তাই যত পারছে বেশি করে প্রচার-প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করছে ব্যানার, ফেস্টুন আর পোস্টারের মাধ্যমেও। বাড়ি বাড়ি যাওয়ার চেয়ে যত বেশি এগুলো টাঙ্গানো যাবে-তত বেশি প্রচারণা হবে-সেটি মনে করেই হয়তো এগুলো বেশি করে টাঙ্গানো হচ্ছে।’

রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার ‘প্রজাপতি ডিজিটাল সাইন ল্যাবের’ একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিটি তিন দশমিক তিন স্কোয়ার ফিটের একটি করে ফেস্টুন তৈরী করতে খরচ হচ্ছে গড়ে অন্তত ১৭১ টাকা করে। প্রতিটি পোস্টার লেমেনেটিংসহ তৈরী করতে খরচ হচ্ছে গড়ে অন্তত ৭ টাকা, একটি করে হ্যান্ডবিল বা লিফলেটের পেছনে খরচ হচ্ছে দেড় টাকা করে এবং একটি করে ব্যানার তৈরীতে খরচ হচ্ছে গড়ে ৫০০-১০০০ টাকা বা তার চেয়েও বেশি।

এদিকে গত মঙ্গলবার প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারণা শুরু হয়। এর পর থেকে নগরীর সবকটি রাস্তার ধারে, বিদ্যুতের পোলের সঙ্গে, রাস্তার ডিভাইডারে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওয়ালের সঙ্গে অথবা দড়ি টাঙ্গিয়ে রাখ লাখ পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ভরে গেছে। পাশাপাশি প্রার্থীদের পক্ষ থেকেও তাদের নেতাকর্মীরা ভোটারদের কাছে গিয়ে হ্যান্ডবিল বা লিফলেট বিতরণ করছেন। ফলে সবমিলিয়ে রাজশাহী নগরী যেন নির্বাচনী প্রচারণা মাধ্যমের নগরীতে পরিণত হয়েছে। আর এগুলোর পেছনে এরই মধ্যে ব্যয় হয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকা।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৫ জন মেয়র প্রার্থী, ৫২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ১৬০ জন কাউন্সিলর প্রার্থী যেযার মতো করে ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও হ্যান্ডবিল তৈরী করে টাঙ্গাচ্ছেন বা বিতরণ করছেন। এতে করে বলা যায় ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার বা হ্যান্ডবিল নয় উড়ছে টাকা।

রাসিক নির্বাচনে ৫ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও মহানগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নৌকা প্রতীক নিয়ে, বিএনপি মনোনীত ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ধানের শীষ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন) মনোনীত মেয়র প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব কাঁঠাল, ইসলামী সংহতি আন্দোলনের প্রার্থী শরিফুল ইসলাম হাতপাখা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ মোর্শেদ হাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এছাড়াও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিল এবং সাধারণ কাউন্সিলররা বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এঁদের মধ্যে নগরজুড়ে সবচেয়ে বেশি ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার লক্ষ্য করা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের। বাদ যাচ্ছেন না বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলও। তবে লিটনের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার নগরজুড়ে এতো বেশি পরিমাণ টাঙ্গানো হয়েছে যে জায়গায় পাচ্ছেন বুলবুলের নেতাকর্মীরা।

এ নিয়ে গতকাল বুলবুল অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার টাঙ্গানোর জায়গা দেওয়া হচ্ছে না। এতে করে নির্বাচনী লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী হচ্ছে না।’

তবে লিটন বলেন, ‘দলীয় প্রতীকব নিয়ে নির্বাচন হচ্ছে। আগে থেকেই যারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, তারাই জায়গা দখল করে ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার টাঙ্গাচ্ছে। এখানে কাউকে সুবিধা দেওয়ার বিষয় নয়। যারা যতবেশি প্রস্তুতি নিতে পারবে, তারা প্রচারণার দিক থেকে ততই এগিয়ে যাবে। এটিই নিয়ম।

 

স/আর