রাজশাহী দাঁপিয়ে বেড়ানো সাংবাদিক নামধারী এরা কারা?

কারও কমরে ঝুলছে কার্ড, কারও গলায় ঝুলছে কার্ড।  মোটরসাইকেলের সামনে লিখা প্রেস বা কোনো একটি ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টাল বা অনলাইন আইপিটিভির নাম। এসব গণমাধ্যমের নাম হয়তো আমি আপনি কেউ জানি না। এসব সাংবাদিককে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও বা বড় ধরনের কোনো সংবাদস্থলে আপনি দেখতে পাবেন না। বা রাজশাহীর সরকারি-বেসরকারী কোনো দপ্তরের বড় আয়োজনেও তারা ব্যতয়। তার পরেও শহর থেকে গ্রামজুড়ে দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

এদের কোনো প্রতিবেদনও হয়তো আমি আপনি পড়ি না। তবে এরাই বড় সংবাদ প্রকাশের কথা বলে তটস্থ করে রাখেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে প্রশাসনের লোকজনকে।

এখন প্রশ্ন হলো, তাহলে এরা কারা? এর উত্তরও হয়তো অনেকের জানা। অনেকের জানা নাই। তবে এদের বাড়ির বা এলাকার আশেপাশের লোকজন এদের খুব ভালো করেই চেনেন। কারণ এরা কিছুদিন আগেও হয়তো কেউ ছিলো মাদকসেবী, কেউ মাদক কারবারী, কেউ বখাটো, কেউ ছিঁচকে সন্ত্রাসী বা কেউ বড় ধরনের প্রতারক। তাদের কাররই নির্দিষ্ট কোনো আয় নেই। এরা আগে অধিকাংশই ছিলেন বেকার। ফলে এলাকায় এদের বেশ পরিচিতি। কিন্তু আমি বা আপনি হয়তো এদের অনেককেই চিনি না, বা জানি না। তবে তারা ঠিকই যেখানেই যান সঙ্গে ঝুলানো কার্ড বা মোটরসাইকেলে লাগানো স্টিকার দেখে আপনি বুঝে নিতে পারবেন তারা হয়তো সাংবাদিক। তবে যারা আগে থেকেই চেনেন, তারা এদের ডাকেন সাংঘাতিক।

এই সাংবাতিক নামের সাংঘাতিকরা কেউ আবাসিক হোটেল থেকে চাঁদা তোলেন, কেউ বা দালাল, কেউ পুলিশের দালাল, কেউ মাদকসেবী, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ নিজেই কখনো পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েও থাকেন বলে খবর রয়েছে। আবার কেউ ইন্সুরেন্স কম্পানীতে প্রতারণার পর চাকরি ছেড়ে নিজেই এখন সম্পাদক।

একেকজন একেকটি গ্রুপের সদস্য। এদের বেশিরভাগ সদস্যরই কাজ হলো মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি প্রতারণা ও মাদকসেবন করা। একেকটি গ্রুপ ভাগ হয়ে কখনো কখনো মাইক্রোবাস ভাড়া করেও গ্রামে গিয়ে সহজ-সরল মানুষদের নানাভাবে প্রতারণার জালে ফেলে। এদের অনেকের নামেই রয়েছে প্রতারণা, চাঁদাবাজি,মারপিট, মাদক, অস্ত্রবাজি, জমি দখলসহ নানা ধরনের মামলা। তার পরও এদের ভয়েই তটস্থ পুলিশ প্রশাসন। নিজের ক্ষমতা জাহির করতে একেকজন একেকটি অফিস নামের যেন চাঁদাবাজির দোকান ঘর খুলে বসে আছেন। এদের বেশিরভাগই এসএসসি পাসও না। কেউ কেউ সম্পাদক বনে গেলেও তারাও হয়তো কেউ ব লিখতে কলম ভাঙেন।

অন্যের নিউজ কপি করে, বা কারো দ্বারা লিখে নিয়ে এরা অনেকেই কেবলমাত্র ফেসবুক সাংবাদিক। এই ফেসবুক সাংবাদিকরা ফেসবুকে নানা পোস্ট দিয়েও চাঁদাবাজি করে থাকেন। নিজেদের বড় বা সিনিয়র সাংবাদিক দাবি করে নানাভাবে জাহির করতে থাকেন। কিন্তু এদের কারোরই এক টাকা বেতন নেই বা নিয়োগভূক্ত সাংবাদিক নন। এরা বেশিরভাগই নিজেদের তৈরীকৃত ভূঁইফোড় গণমাধ্যমের আইডি কার্ড বহন করে। অথবা কোনো ভূঁইফোড় গণমাধ্যমের দেয়া কার্ড নিয়ে চোষে বেড়ায়।

রাজশাহীর সাংবাদিকদের ভাষ্য, এসব নামধারী বেতনহীন সাংবাদিকদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছেন মূলধারার গণমাধ্যমেরও কোনো কোনো সাংবাদিক। তারাও বিভিন্ন ভুঁইফোড় সংগঠনের বড় পদ দখল করে চোষে বেড়াচ্ছেন শহর থেকে গ্রাম। দিনের পর দিন এরা রাজশাহী জুড়ে নানা অপকর্ম করে গেলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় চরম বেপরোয়া তারা।

সময় এসেছে এখন এসব সাংবাদিকের মুখোস খুলে দেয়ার। প্রশাসন এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের তার জন্য অগ্রণী ভুমিকা রাখতে হবে। তবে প্রকৃত সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরী হলে প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে সহজেই ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও মনে করি।

এছাড়াও সরকার যে গণমাধ্যম নীতি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, সেটি দ্রুত কার্যকর হলেও কথিত এসব সাংবাদিকরা ঝরে পড়বে বলেও মনে করি।

লেখক: মাজদার রহমান সানী