রাজশাহী জেলা আ. লীগের সম্মেলন: বাদ পড়ছেন ফারুক, ঝুঁকিতে আসাদও

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ রবিবার। বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে সকালে এর উদ্বোধন করবেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।

জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে তা অনেকটাই নিশ্চিত। বাদ পড়তে পারেন বর্তমান সভাপতি ফারুক চৌধুরী। সে ক্ষেত্রে সাবেক সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লার সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাধারণ সম্পাদক পদে কাকে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে গতকাল বিকেল পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারেননি দায়িত্বশীল কোনো নেতা। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ একই পদ ধরে রাখার বিষয়টি নিয়ে ঝুঁকিতে আছেন বলেও জানা গেছে। দলীয় একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই পাওয়া গেছে।

সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন এবং ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক বলে পরিচিত বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন লাভলু ও রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা আসতে পারেন বলে প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

তবে মেরাজ উদ্দিন মোল্লা সভাপতি হলে এমপি আয়েন উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক করা নাও হতে পারে—এমনটিই দাবি দলের কেন্দ্রীয় একজন নেতার। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, একই এলাকা থেকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুটি শীর্ষ পদ হয়তো দলীয় সভানেত্রী দিতে রাজি হবেন না। এ কারণে শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ পাওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে যাবেন এমপি আয়েন উদ্দিন।

সে ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকেও রাখা হতে পারে ওই পদেই। আবার আসাদকে বাদ দিয়ে আসতে পারেন আবদুল ওয়াদুদ দারা বা লায়েব উদ্দিন লাভলু বা অন্য কেউ-এমনটিও মনে করছেন অনেকেই।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূলের নেতাদের চাওয়া অনুযায়ী এবং বিতর্ক এড়াতে গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত সম্মেলনে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে কাউন্সিলরদের ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি ছিল জেলার নেতাদের। তবে ভোট ছাড়াই সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা এমনটাও বলছেন অনেকে। ভোট ছাড়া কাউকে নেতৃত্বে আনা হলে তা শুধু দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে হবে বলেই জানিয়েছেন দলের স্থানীয় নেতারা।

সম্মেলনে সভাপতি পদে তাঁকে আর দেখা যাবে না বলে এরই মধ্যে জানিয়েছেন ওমর ফারুক চৌধুরী এমপি। দলীয় সভায় তিনি বলেছেন, এবার সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি। প্রার্থী তালিকায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নাম প্রথম দিকে শোনা গেলেও তিনিও জানিয়েছেন জেলা সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছেন না তিনি। তবে সভাপতি প্রার্থী থাকছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু, সাবেক এমপি রায়হানুল ইসলাম রায়হান, সাবেক এমপি জিন্নাতুননেছা তালুকদার, সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, জেলার বর্তমান সহসভাপতি মকবুল খান, বাগমারা আসনের এমপি এনামুল হকসহ আরো কয়েকজনের নামও সভাপতি প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে

অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীরা হচ্ছেন—রাজশাহী-৫ আসনের এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আদিবা আঞ্জুম মিতা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আসাদুজ্জামান আসাদ, বাগমারা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলামসহ আরো কয়েকজন।

সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা অংশ নেবেন। তবে কাউন্সিলর থাকবেন ৩৬০ জনের মতো। এবার জেলা আওয়ামী লীগের ২১ জন উপদেষ্টাও কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কাউন্সিলররা চাইছেন, এবার ভোটের মাধ্যমেই যেন নেতা নির্বাচন করা হয়।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সব শেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর। ওই সম্মেলনে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে চলে যান কেন্দ্রীয় নেতারা। এর প্রায় এক বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

স/আর