রাজশাহী জেলা আ.লীগের সম্মেলন: সভাপতি-সম্পাদক পদে ভোট চান তৃণমূল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

৫ বছরেরও বেশি সময় পরে হতে যাচ্ছে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এই সম্মেলন ঘিরে নানা সমিকরণ কষছেন দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর পদাগ্রহী নেতারা ছুটছেন দলের শীর্ষ নেতাদের দরবারে। বিশেষ করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে যাঁদের ভূমিকা থাকবে কেন্দ্রীয় সেসব নেতাদের দ্বারে ছুটছেন পদে পেতে আগ্রহী নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের দুটি সর্বোচ্চ পদ পেতে এবার আগ্রহীদের তালিকা বেশ লম্বা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। এই তালিকা দীর্ঘ হতে হতে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই ডজনে গিয়ে ঠেকেছে।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ক্ষমতাসিন দলটির রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের আগের দিন পর্যন্ত এই তালিকা বাড়তে থাকবে। আবার তৃণমূলের নেতারা কাকে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচন করবেন নাকি দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এসে এবারো এ দুটি পদে দু’জনকে বসিয়ে দিয়ে ঢাকায় দৌড় দিবেন-এ নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। তবে তৃণমূলের অনেক নেতাই দাবি করেছেন এবার দুটি শীর্ষ পদে নির্বাচন করে নেতৃত্ব আসুক। আবার কেউ কেউ বলছেন উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কাউন্সিলও হয়নি দীর্ঘদিন ধরে। বর্তমান জেলা কমিটির নেতাদের পছন্দমতোই হয়েছে এসব কমিটি। ফলে জেলা কমিটির সম্মেলন নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি-সম্পাদক করা হলে পুরনোরাই আবার আসার সুযোগ পাবেন বেশি। কাজেই আগামী দিনে দলের প্রয়োজনে যোগ্য নেতা কেন্দ্রীয় নেতারাই নির্বাচন করুক-এমনটিও দাবি করেছেন নতুন করে নেত্ব পেতে আগ্রহী নেতারা।

তিন বার আগে-পিছে করে শেষ পর্যন্ত আগামী রবিবার (৮ ডিসেম্বর) রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগে সম্মেলনের দিন নির্ধারণ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এর আগে প্রথমে ৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ ছিল। পরে সেটিকে ৮ ডিসেম্বর এবং সেটিকেও পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মাঝের ৮ ডিসেম্বরই সম্মেলনের তারিখ পাকা করা হয়। রাজশাহী মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে এ সম্মেলনে অংশ নিবেন ৩৫০ জন কাউন্সিলর। এর মধ্যে জেলা কমিটির নেতা রয়েছেন ৬৪ জন। আর উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন কমিটি থেকে থাকবেন বাকি কাউন্সিলররা।

দলীয় সূত্র মতে, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর। ওই সম্মেলনে শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে চলে যান কেন্দ্রীয় নেতারা। এর প্রায় এক বছর পরে নানা কাঠ-খোড় পুড়িয়ে পুর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। গত সম্মেলনে এই কমিটিতে সভাপতি-সম্পাদক পেতে আগ্রহীদের তালিকা ছিল সর্বসাকূল্যে ডজন খানেক। কিন্তু এবার তালিকাটা বেশ লম্বা।

এবার সভাপতি পড়েই রয়েছেন প্রায় ডজন খানেক নেতা। আর সম্পাদক পদে আরো একজ ডজন নেতা রয়েছেন আগ্রহীদের তালিকায়। সবমিলিয়ে দুই ডজন নেতা এখন সভাপতি-সম্পাদক পদের জন্য হন্নে হয়ে মাঠে ঘুরছেন। কেউ ছুটছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না শর্তে জানান, এবার সভাপতি পদে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনাই বেশি। গত ৫ বছর ধরে নানা বিষয়ে বিতর্কের শীর্ষে থাকা রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও এমপি ফারুক চৌধূরির এবার কপাল পুড়তে পারেন বলেই ধরে নিচ্ছেন দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। আবার তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক রক্ষাকারী হিসেবে পরিচিত দলের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদকে নিয়েও নানা বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু দলের প্রয়োজনে তাঁকে সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে অন্তত একটি পদে রাখা হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই। আর তাঁকে এই দুটি পদের একটি রাখতেই তৃণমূলের নেতারা এবং সম্মেলনের কাউন্সিলররা চাইছেন এবার ভোটের মাধ্যমে দুটি পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হোক। কিন্তু আসাদবিরোধী নেতাকর্মীরা চাইছেন ভোটের মাধ্যমে নয় বিতর্ক সরাতে এবার নতুন নেতৃত্ব বেছে নিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা।

দলীয় সূত্র মতে, এবার রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি পদে প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন বর্তমান সভাপতি ও তানোর-গোদাগাড়ী আসনের এমপি ফারুক চৌধুরী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক ভিবি নূরুল ইসলাম ঠান্ডু, বর্তমান জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক এমপি রায়হানুল ইসলাম রায়হান, সাবেক এমপি জিন্নাতুন নেছা তালুকদার, সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, বর্তমান সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মকবুল খান, হর আরো কয়েকজন নতুন মুখ শেষ পর্যন্ত আসতে পারে বলেও শোনা যাচ্ছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল মজিদ বলেন, ‘এবার আমাদের চাওয়া কাউন্সিলরদের ভোটে দুটি পদে অন্তত নেতৃত্ব নির্বাচন করা হোক। তাহলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ এবার সভাপতি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু ভোট না হলে হয়তো তিনি সভাপতি হতে পারবেন না।’

দলের আরেকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এবার সভাপতি পদে দলের প্রবীণদের মধ্যে কোনো নেতাকে দায়িত্ব দিয়ে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আসাদকেই রাখা হতে পারে।’

এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছে বর্তমান জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী-৫ আসনের সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, এমপি আদিবা আঞ্জুম মিতা, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ ও আহসানুল হক মাসুদ, বাগমারা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ফকরুল ইসলাম নাম শোনা যাচ্ছে।

স/আর