রাজশাহী কলেজে ৩০ শিক্ষার্থী নির্যাতন: অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশসেরা রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে টর্চার সেলে সাংবাদিকসহ সাধারণ শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বহিষ্কারের সুপারিশ করবে বলে অঙ্গীকার করেন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত। তবে অঙ্গীকারের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম পার হলেও সেটি বাস্তবায়ন হয়নি। কোনো সুপারিশ। উল্টো অভিযুক্তদের বহিষ্কার চেয়ে সুপারিশের এখতিয়ার নেই বলে দাবি করেন এই ছাত্রনেতা।

এদিকে কলেজ ছাত্রলীগের সুপারিশ না পেলেও দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে অভিযুক্তদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ। নগর ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক রুদ্র ধর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাহরুখ আলম, কাওসার আজম রাফি ও রাজু আহমেদকে শোকজ করা হয়।

শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযুক্তদের পাঠানো শোকজ বার্তায় জানানো হয়, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কার্যকলাপের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার উপযুক্ত কারণসহ লিখিত জবাব আগামী এক কার্য দিবসের মধ্যে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে নগর ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, যাদেরকে দোষী মনে হয়েছে তাদের প্রাথমিকভাবে শোকজ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবো। আজকে শাহরুখ আলম, কাওসার আজম রাফি ও রাজু আহমেদকে শোকজ করা হয়েছে।

তবে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত বলছেন ভিন্ন কথা। অভিযুক্তরা রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের পদে না থাকায় তাদের ব্যবস্থা গ্রহণ চেয়ে লিখিত সুপারিশ করার এখতিয়ার নেই তাদের। তাই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত সুপারিশ না করে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। যদিও তা অস্বীকার করেছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি।

কলেজ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে কোনো সুপারিশ পেয়েছেন কি না প্রশ্নের উত্তরে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি সিয়াম বলেন, তারা আমাদেরকে এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি। আমরা আমাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে ওপরের নির্দেশনায় শোকজ করেছি। তারা কেন আমার সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে নি আমি তা বলতে পারবো না।’

রাশিক দত্ত বলেন, আমাদের রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। সেজন্য লিখিত সুপারিশ করতে পারবো না। আর তারা মহানগরীর পোস্টে আছে, তাই মহানগর একদিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। কালকে ওরা যে রিপ্লাই দিবে তারপর ওদের বহিষ্কার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মৌখিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। তারা রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের পদে থাকলে আমাদের পেডে সুপারিশ করতে পারতাম। তারা মহানগরীর হওয়ায় সিয়াম ভাই (নগর সভাপতি), সবুজ ভাই (নগর সম্পাদক) শোকজ করেছে বলে দাবি রাশিকের।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি, রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন (আরইউজে) ও রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আরটিজেএ) নেতাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তকে। এই সময়ের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত সুপারিশ করতে প্রতিশ্রুতিও দেন রাশিক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রাবাস সুপার ও ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আনিসুজ্জামান মানিক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’

স/আর