নিজস্ব প্রতিবেদক: এক সপ্তার ব্যবধানে রাজশাহী নগরী ও দুই উপজেলার চারটি বাড়িতে মারা পড়লো ১৮২ গোখরা। আর বড় একটি গোখরা জীবিত অবস্থায় ধরেছেন এক সাপুড়ে। উদ্ধার করা হয়েছে শতাধিক সাপের ডিম। সোমবার দুপুরে পাওয়া গেল আরো ৩১টি গোখরা সাপ। অল্প সময়ের ব্যবধানে এ ধরনের বিপুলসংখ্যক সাপ মারা পড়ায় এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে সাপের প্রজননকাল চলছে। এছাড়া ডিমপাড়াও সময় এখন। বিভিন্ন এলাকায় ঝোঁপঝাড় নষ্ট হয়ে যাবার কারণে ডিমপাড়ার নিরাপদ স্থান হিসেবে সাপ মাটির বাড়িকে বেছে নিচ্ছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে সর্বশেষ জেলার দুর্গাপুর উপজেলার দুই বাড়িতে মেলে ৩১টি গোখরা সাপ। এই দুই বাড়িতে পাওয়া যায় ৯০টি সাপের ডিমও। তবে ৩০টি বাচ্চা সাপ পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। ডিমগুলোও ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে একটি বড় আকারের সাপ ধরে নিয়ে গেছেন সাঁপুড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের হোজা অনন্তকান্দি পশ্চিমপাড়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম তার বাড়িতে বড় আকারের একটি গোখরা সাপ দেখতে পান। সাপটি বাড়ির একটি গর্তে লুকিয়ে যায়। পরে তিনি প্রতিবেশিদের ডাকাডাকি শুরু করেন।
এরপর তারা মাটি খুঁড়তে শুরু করেন। এ সময় গর্ত থেকে একে একে বেরিয়ে আসে ৩০টি সাপের বাচ্চা। আতঙ্কিত লোকজন এ সময় সব সাপগুলোকেই পিটিয়ে মেরে ফেলেন। ওই গর্তে ৪৫টি ডিমও পাওয়া যায়। সেগুলোকেও ভেঙে নষ্ট করা হয়। তবে বড় সাপটিকে আর সেখানে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, গত ৪ জুলাই রাজশাহী মহানগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা মাজদার আলীর বাড়িতে ২৭টি গোখরা সাপের বাচ্চা মারা হয়। এর পরদিন ওই বাড়িতে পাওয়া যায় আরও একটি সাপ। এর দুই দিন পর জেলার তানোর উপজেলার ভদ্রখণ্ড গ্রামের কৃষক আক্কাস আলীর বাড়িতে মেলে ১২৫টি গোখরা সাপের বাচ্চা। পাওয়া যায় ১৩টি ডিমও। সাপগুলোকে পিটিয়ে মারা হয়, ডিমগুলোও ধ্বংস করা হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক এম খালেকুজ্জামান বলেন, শহর কিংবা গ্রাম বলে কোনো কথা না, কম-বেশি সবখানেই সাপ আছে। সাপেরা সাধারণত ঝোঁপঝাড়ের ভেতর ইঁদুরের গর্তে ডিম পাড়ে। কিন্তু প্রতিনিয়ত ঝোঁপঝাড় কমছে। ফলে সাপেরা বসতবাড়ির ইঁদুরের গর্তে গিয়ে ডিম পাড়ছে।
এই গবেষক বলেন, তারা গবেষণা করে দেখেছেন- মিলনের পর পুরুষ সাপটি অন্য জায়গায় চলে যায়। আর মা সাপটি গর্তে গিয়ে ডিম পাড়ে। ডিম দেয়া শেষ হলে সেও অন্য কোথাও চলে যায়। ৬০ দিন পর সাপের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এর এক সপ্তাহ পর বাচ্চা সাপগুলোর খোলস বদল হয় এবং চোখ ফোটে। এরপরই প্রায় সব সাপ একসঙ্গে গর্ত থেকে বের হতে শুরু করে।
এম খালেকুজ্জামান বলেন, সাপ মানুষকে প্রচণ্ড ভয় পায়। কিন্তু বাধ্য হয়ে তারা মানুষের বাড়িতে গিয়ে ইঁদুরের গর্তে ডিম পাড়ছে। আরও কারো বাড়িতে সাপ নেই, তা নয়। থাকতেই পারে। তবে সাপ নিজে আক্রান্ত না হলে কাউকে কামড় দেয় না। সাপের আতঙ্ক থাকলে বাড়িতে কার্বলিক অ্যাসিড রাখা যেতে পারে। এতে বাড়িতে সাপ যাবে না।
রাজশাহীর সহকারী বন সংরক্ষক একেএম রুহুল আমিন বলেন, গত তিন বছরে রাজশাহীসহ সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলে রাসেল ভাইপার ও গোখরা সাপ অধিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অচিরেই তারা জনসচেতনামূলক কার্যক্রম হাতে নেবেন। এতে জীববৈচিত্র রক্ষা পাবে বলে মনে করেন বনবিভাগের এই কর্মকর্তা।
স/আ