মায়ের বুক খালি করে চুরি করে নিয়ে যাওয়া নবজাতকের হদিশ মেলেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় অবস্থিত নগর মাতৃ সদন আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার থেকে অভিনব কায়দায় চুরি হওয়া নবজাতকের হদিশ মেলেনি এখনো। ঘটনার পরে প্রায় ৪০ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও নবজাতকটিকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া সেই প্রতারক নারী চোরেরও কোনো সন্ধান পায়নি পুলিশ। ফলে আঁধারেই রয়েছে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ওই নারীর সন্ধান তথ্য।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে নবজাতকটি চুরি হয়। রাজশাহীর পবার চর শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর নাসির উদ্দিনের স্ত্রী মুক্তি খাতুনের প্রথম ছেলে সন্তানটি চুরি করে নিয়ে যায় ওই নারী।

 

  • এ ঘটনায় নবজাতকটির নানী রোজিনা খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাত এক নারীসহ নগরীর দাশমারী এলাকার তোহুরা নামের আরেক নারীকে আসামি করে নগরীর শাহমখদুম থানায় একটি মামলা করেছেন। পুলিশ তোহুরাকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়াও ওই ক্লিনিকের নার্স এলিজাবেথকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

 

নগরীর শাহমখদুম থানার ওসি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘এইভাবে প্রতারণার মাধ্যমে শিশু চুরির ঘটনা এটিই প্রথম ঘটলো রাজশাহীতে। এর আগে হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এমন প্রতারণার কৌশল সত্যিই অভিনব।’

 

ওসি সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে মামলার আসামি তোহুরা খাতুন ও ওই ক্লিনিকের নার্স এলিজাবেথকে আটক করা হয়েছে। তাদের শুক্রবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো তথ্য উদঘাটন করা যায়নি। তবে নবজাতকটি উদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

অভিনব কায়দায় যেভাবে চুরি হয় নবজাতকটি:

নবজাতকটির বাবা নাসির উদ্দিন জানান, গত বৃহস্পতিবার দিনমজুর স্ত্রী মুক্তি খাতুনের প্রসব বেদনা ওঠে। ওইদিনই প্রসূতি নারীদের নিয়ে কাজ করছেন বলে অজ্ঞাত এক নারী নাসিরের বাড়িতে যান। এসময় অজ্ঞাত ওই নারীর ছিলেন নগরীর দাশপুকুর এলাকার হুমায়ন কবিরের স্ত্রী ও আরবান হেলথ কেয়ারের মাঠকর্মী তোহুরা খাতুন।

 

এরপর মুক্তি খাতুনকে তাঁর পরিবারের লোকজন নগরীর দাশমারী আরবান ক্লিনিকে ভর্তি করাতে চাইলে ওই নারী তাতে আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘এখানকার চেয়ে নদাপাড়ার আরবান ক্লিনিকটি অনেক ভাল। ওখানেই প্রসূতিকে ভর্তি করাতে হবে।’ অজ্ঞাত ওই নারী এবং তার সহযোগী তহুরার কথামতো প্রসূতি মুক্তি খাতুনকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে নগরীর নদাপাড়া আরবান ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

 

  • এরপর সিজারিয়ানের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তান জন্ম দেন মুক্তি। সিজারের প্রাথমিক খরচ বাবদ ৪ হাজার টাকা আরবান ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে প্রদান করেন অজ্ঞাত ওই নারী।   

মামলার বাদী ও নবজাতকটির নানী রোজিনা খাতুন জানান, নবজাতকটি জন্ম নেওয়ার আগ থেকেই মামলার প্রধান আসামি তোহুরা বেশ কয়েকবার প্রসূতির বাড়িতে যান। প্রসব বেদনা ওঠার দিনই তোহুরা অজ্ঞাত ওই নারীকে সঙ্গে নিয়ে তোহুরা মুক্তিদের বাড়িতে যান এবং নবজাতক জন্ম নেওয়ার পরও তোহুরা এবং অজ্ঞাত ওই নারী ক্লিনিকেই ছিলেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে নবজাতকটির নানী ঘুমিয়ে পড়লে তার নিকট থেকে নবজাতকটিকে নিয়ে দাদীর কাছে রাখার কথা বলে অজ্ঞাত ওই নারী সটকে পড়েন।
এসময় ক্লিনিকের দায়িত্বে ছিলেন এলিজাবেথ নামের এক নার্স। তার পরামর্শেই নবজাতকটিকে অজ্ঞাত ওই নারীর হাতে তুলে দেন তার নানী।

 

  • নবজাতকটির মামা শহিদুল ইসলাম বলেন, যখন নবজতাকটিকে নিয়ে চলে যায় ওই নারী, সেইসময়ে ক্লিনিকটের নিচের দরজা বন্ধ থাকার কথা ছিল। কারণ তার আগেই আমাদের সকলকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। রাতে কোনো পুরুষ থাকতে পারবে না বলে আমাদের বের করে দেওয়া হয়। এরপর শুধু প্রসূতির সঙ্গে তার নানী ও দাদীকে থাকতে দেওয়া হয়। আর সেই সুযোগেই রাতে নবজাতকটিকে চুরি করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত ওই নারী।

এদিকে গ্রেপ্তার হওয়া তোহুরা জানান, তিনি যে নারীকে প্রসূতির বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন তার বয়স আনুমানিক ৪০ বছর। তিনি প্রসূতি নিয়ে কাজ করার জন্য ঢাকা থেকে রাজশাহী আসেন বলেন সম্প্রতি তাঁকে জানান। এরপর থেকেই নগরী নওদাপাড়া এলাকায় অবস্থিত নগর মাতৃ সদন আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ারে কয়েকবার যান ওই নারী।

 

সেই সূত্র ধরেই প্রসূতি মুক্তির বাড়িতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। গরীব প্রসূতিদের নিয়ে তিনি কাজ করছেন বলেও জানিয়েছিলেন তোহুরাকে। এরই অংশ হিসেবে মুক্তির সিজারের আগে ৪ হাজার টাকাও দেন ওই নারী।
স/আর