রাজশাহী অঞ্চলে হুহু করে বাড়ছে করোনা রোগী, জট কাটাতে নমূনা যাচ্ছে ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক :

দেশের উত্তর-পশ্চিামাঞ্চলের সীমান্ত জেলা রাজশাহী, চাঁপানবাবগঞ্জ ও নওগাঁয় যেন হুহু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। প্রতিদিন ৭০০-৮০০ রোগীর নমূনা আসছে ল্যাবে। কিন্তু এতো রোগীর পরীক্ষা একদিনে করানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাড়ছে নমূনা জট। কিন্তু চার-পাঁচ শিফটে পরীক্ষা করেও সেই জট ছাড়ানো যাচ্ছে না। ফলে নমূনা ঢাকায় পাঠাতেও হচ্ছে। তার পরেও নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। আবার রাজশাহীতে জিনোর সিকোয়েন্সিংয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্টে কারা আক্রান্ত হচ্ছেন সেটিও সনাক্ত করা যাচ্ছে না। ফলে ক্রমেই যেন করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে এই অঞ্চলে। পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যু হারও। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত রাজশাহী হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত হয়ে ৩ জন মারা গেছেন। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরও ৫ জন। সবমিলিয়ে গত ৮ জন রোগী মারা গেছেন। যারা সবাই করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক সাইফুল ফেরদৌস গতকাল সাংবাদিকদের জানান, এ হাসপাতালে সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত মোট ৮ জন মারা গেছে। যাদের ৩জন করোনা পজেটিভ এবং ৫ জন উপসর্গ নিয়ে করোনা নিয়ে ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আগেরদিন সোমবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের করোনা ল্যাবে মোট ৩৮৫ জনের নমূনা পরীক্ষা ১৭৯ জনের পজেটিভ পাওয়া গেছে। যা ওই ল্যাবে গড় আক্রান্তের হার ৪৬.৪৯ ভাগ।

অন্যদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ র‌্যাবে ৩৭২ জনের নমূনা পরীক্ষা করে ১৮১ জনের পজেটিভ ধরা পড়ে। এদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৭৩টি নমূনা পরীক্ষা করে ১০৫ জন, রাজশাহীর ১৯৮টি পরীক্ষা করে ৭৫ জন ও নওগাঁর একটি করে একটিরই পজেটিভ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিলেন ভর্তি ছিলেন ২৫৭ জন। ২৩২টি শয্যার বিপরীতে এ পরিমাণ রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মথ্যে রাজশাহী ১২৭, চাঁপাইনবাগঞ্জের ১০২, নওগাঁর ৯, নাটোর ১১, পাবনার ৪, কুষ্টিয়ার ৩ ও জয়পুরহাটের ১ জন। এছাড়াও আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ১৭ জন। সোমবার থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ভর্তি হয়েছেন ৩৩ জন রোগী। যাঁদের মধ্যে রাজশাহীর ১৬ জন, চাঁপাইনবাগঞ্জের ১৪, নওগাঁর ১ ও নাটোরের ২ জন।

এদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবের ইনচার্জ সাবেরা গুলনেহার বলেন, ‘প্রতিদিন যে হারে করোনা নমূনা আসছে, তাতে চারটি শিফটে পলীক্ষা করেও শেষ করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ নমূনা আসছে। কিন্তু চারটি শিফটে পরীক্ষা করা যাচ্ছে ৩৭৬ািট। এর মধ্যে আমরা একদিন ৫শিফটে পরীক্ষা করেও নমুনা জট ছাড়াতে পারেনি। পরে বাধ্য হয়ে ৪০০টি নমূনা ঢাকার ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তারপরেও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের করোনা পরীক্ষা ল্যাবে প্রতিদিনই বাড়ছে নমুনা জট। এখনো প্রায় সাড়ে ৮০০ নমূনা আছে। এতে করে নমূনা পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা নিয়েও শঙ্কা তৈরী হচ্ছে।

অপরদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরচিালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালের করোনা রোগীগের চাপ দিনের পর দিন বাড়ছে। চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অক্সিজেন সরবারহ দিতে। এছাড়াও একের পর এক ওয়ার্ড বাড়িয়েও পার পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীর সংখ্যা বাড়ার কারণে সব ওয়ার্ড ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে রাজশাহীতে ১০০ শয্যার আরেকটি করোনা হাসপাতাল খোলার জন্য রাজশাহীর পুরনো সদর হাসপাতালকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, রাজশাহী অঞ্চলে ভারতীয় ডেল্টা ভেরিয়েন্টের রোগী কি পরিমাণ আছে সেটি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।