রাজশাহীসহ ট্রেনে কোন রুটে কত টাকা বাড়ছে ভাড়া?

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

যাত্রীরা ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে গেলে ভাড়ার ক্ষেত্রে ছাড় (রেয়াত) দিত বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু আগামী ৪ মে থেকে এ ছাড় প্রত্যাহার করায় বাড়ছে সব ধরনের ট্রেনের ভাড়া। এতে দূরের গন্তব্যে ট্রেনের ভাড়া সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাবে।

সোমবার বাংলাদেশ রেলওয়ে এ-সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দূরত্বভিত্তিক ও সেকশনভিত্তিক রেয়াতি প্রদান করা হয়। ২০১২ সালে ‘সেকশনাল রেয়াত’ রহিত করা হলেও দূরত্বভিত্তিক রেয়াত বলবৎ থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে যাত্রীবাহী ট্রেনসমূহে ভাড়া বৃদ্ধি না করে শুধু বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের যাত্রীবাহী ট্রেনে বিদ্যমান দূরত্বভিত্তিক রেয়াত প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি আগামী ৪ মে ২০২৪ থেকে কার্যকর করা হবে।

এর আগে গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাৎ আলী রেলের ভাড়া বাড়ছে বলে জানিয়েছিলেন। বর্ধিত ভাড়া ১ এপ্রিল থেকেই কার্যকর করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তখন রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম দেশ রূপান্তরকে বলেছিলেন, ‘ঈদের আগে কোনোভাবেই রেলের ভাড়া বাড়বে না। এমনকি নিকট ভবিষ্যতেও রেলের ভাড়া বাড়বে না।’

রেল মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, সর্বশেষ ২০১৬ সালে রেলের ভাড়া ৭ থেকে ৯ শতাংশ বাড়ানো হয়। এই সময়ের মধ্যে সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাছাড়া রেল প্রতি বছরই লোকসান গুনছে। এসব কারণে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি করা দরকার।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুতের পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে এমনিতেই দৈনন্দিন খরচ জোগাতে গিয়ে মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে আপাতত ট্রেনের ভাড়া না বাড়িয়ে দূরপাল্লার যাত্রীদের রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে রেলে প্রতি কিলোমিটারে ভিত্তি ভাড়া ৩৯ পয়সা। এর সঙ্গে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) ও অন্যান্য উচ্চ শ্রেণির বিভিন্ন হারে ভাড়ার সঙ্গে ভ্যাট যোগ হয়ে মোট ভাড়া নির্ধারণ করা হয়।

রেলওয়ে সূত্রমতে, রেলের ভাড়ার ক্ষেত্রে সরকার ১৯৯২ সালে দূরত্বভিত্তিক রেয়াতি সুবিধা চালু করে। সারা বিশ্বেই বাড়তি ভ্রমণে উৎসাহী করতে ছাড় দেওয়া হয়। এ সুবিধার কারণে স্বাভাবিক ভাড়ার তুলনায় ১০০ কিলোমিটার পরে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২০ শতাংশ, ২৫১ কিলোমিটার থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২৫ শতাংশ, ৪০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে যাত্রার জন্য ৩০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হয়। অবশ্য গত বছরের শেষের দিকে চালু হওয়া ঢাকা-কক্সবাজার পথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে কোনো ছাড় রাখা হয়নি। সরকার এখন সব রুটের ট্রেনে এই রেয়াতি সুবিধা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজনে অনেক সময় এক বা একাধিক কামরা ভাড়া করে থাকে। এ ক্ষেত্রে রেলওয়ে তাদের পরিকল্পিত কোচের চেয়ে বাড়তি কোচ সংযোজন করে থাকে। কামরার আসনসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে স্বাভাবিকভাবে যাত্রী পরিবহন করলে যে ভাড়া আসে, তাই গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করে রেলওয়ে। এতে জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ দিতে হচ্ছে। যাত্রীর আবেদনে সংযোজন করা এসব অতিরিক্ত বগির ভাড়া বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে রেলের। এ ক্ষেত্রে সংযোজিত বগির শোভন শ্রেণিতে ২০ শতাংশ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (স্নিগ্ধা) ও অন্যান্য উচ্চ শ্রেণিতে ৩০ শতাংশ রিজার্ভেশন সার্ভিস চার্জ যোগ করা হবে।

রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার এবং রিজার্ভেশন চার্জ আরোপের ফলে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব বাড়বে বলে রেলওয়ে প্রাক্কলন করেছে। বর্তমানে বছরে রেলের লোকসানের পরিমাণ গড়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নতুন তালিকা অনুযায়ী আগামী ৪ মে থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৪০৫ টাকা ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বেড়ে হবে ৭৭৭ টাকা।

ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ১৫০ ও ২৮৮ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ১৬০ ও ৩০৫ টাকা।

ঢাকা-রাজশাহী রুটে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩৪০ ও ৬৫৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৪০৫ ও ৭৭১ টাকা।

ঢাকা-নোয়াখালী রুটে উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২৭৫ ও ৫২৪ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩১০ ও ৫৯৩ টাকা।

ঢাকা-সিলেট রুটে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৩২০ ও ৬১০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৩৭৫ ও ৭১৯ টাকা।

ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুটে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২২০ ও ৪২৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৫০ ও ৪৭২ টাকা।

ঢাকা-খুলনা রুটে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০০ ও ৯৫৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬২৫ ও ১১৯৬ টাকা।

ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০৫ ও ৯৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৩৫ ও ১২১৪ টাকা।

ঢাকা-রংপুর রুটে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫০৫ ও ৯৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৩৫ ও ১২১৪ টাকা।

ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪২৫ ও ৮১০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৫১২ ও ৯৭৫ টাকা।

ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটে কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৫১০ ও ৯৭২ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬৪৫ ও ১২৩৭ টাকা।

ঢাকা-চিলাহাটি রুটে চিলাহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪৯৫ ও ৯৪৯ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬২০ ও ১১৮৫ টাকা।

ঢাকা-বেনাপোল রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ৪৮০ ও ৯২০ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ৬০০ ও ১১৫০ টাকা।

ঢাকা-ভূঞাপুর রুটে জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২৬০ ও ৪৯৫ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৯৫ ও ৫৭০ টাকা।

ঢাকা-দেওয়াগঞ্জ রুটে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া ২২৫ ও ৪২৬ টাকা থেকে বেড়ে হবে যথাক্রমে ২৫০ ও ৪৭৬ টাকা।

এছাড়া শোভন চেয়ার ও এসি চেয়ার বাদে সব আন্তঃনগর ট্রেনে ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে এসি সিট ও বার্থ এবং প্রথম শ্রেণির সিট ও বার্থ আসনের ভাড়াও আনুপাতিক হারে বাড়বে।