রাজশাহীর সড়কগুলোর খানা-খন্দক যেন একেকটা মরণফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মহাসড়কে প্রতিনিয়তই ঘটছে অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা। বেপরোয়া গাড়ি চালকদের অবাধ গতিতে প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে অগনিত মানুষ। এসব দুর্ঘটনায় কখনও ধংস হচ্ছে একটি পরিবার আবার সর্বোস্ব হারাচ্ছেন অনেকেই। শুধু বেপরোয়া গাড়ী চালনায় নয় এমন অনেক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সড়কগুলোও।
বর্ষায় রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন মহাসড়কগুলোর বেহাল অবস্থায়। খানা-খন্দকের কারণে একেকটি সড়ক কোথাও কোথাও মরণফাঁদেও পরিণত হয়েছে। কোথাও খানা খন্দ আবার কোথাও বিশালাকার গর্ত। এতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে বাড়ছে ঝুঁকি। আর ঝুঁকি নিয়ে যারা প্রতিদিন সড়কগুলোরে উপর দিয়ে যাচ্ছেন তাদের অবস্থা বর্ণনাতীত।

14359617_1800497713572666_90712003_o-copy
বর্ষা শুরুতে নগরীর রেলগেট থেকে তালাইমারী পর্যন্ত ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে দেখা যায় খানা খন্দ। এর পর সেখানে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের পর রীতিমতো গর্তে পরিণত হয়েছে। রাজশাহী হতে ঢাকা রুটে চলাচলের এই প্রধান সড়কটিতে গর্ত থাকার কারণে ক্ষণে ক্ষণে ছোট খাট দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।
শুধু তাই না, প্রধান এই সড়কটিতে গর্ত থাকার কারণে পারপার হতে গিয়ে বিলম্ব হচ্ছে। ছোট যানবাহনগুলোর কারণে বাস, ট্রাক চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। এতে কখনও মাঝারি থেকে দীর্ঘ যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে।
রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় গিয়ে কথা হয় অটোরিকশা চালক মাহাবুবের সাথে। তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকে তিনি ওই রাস্তায় অটো নিয়ে চলাচল করছেন। রাস্তায় গর্ত থাকার কারণে কখনও সে গর্তে গাড়ির চাকা পড়লে ঠেলে ওঠানো লাগে। আবার গাড়ী আটকে থাকলে যানজট বেধে যায়।  বড় গাড়িগুলো পার হয়ে গেলে রিকশা কিংবা অটোরিকশার জন্য পার হওয়া দায় হয়ে যায়।
রেলওয়ে ষ্টেশন পার হয়ে প্রায় ১ কিলোমিটার পূর্বে ভদ্রা বাস ষ্টেশন। এই সড়ক দিয়ে রাজশাহী এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বাসে করে অথবা ছোট যানবাহনে চড়ে অফিস যাওয়া আসা করেন। কিন্তু খানা-খন্দের কারণে প্রতিদিনই এই সড়কে কোন না কোন দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় এসব মানুষদের। ভদ্রার গোল চত্বরের কোল ঘেঁষেই তৈরী হয়েছে গর্ত। আর যান বাহনের টার্নিং পয়েন্ট হওয়ায় সেখানে অনেকটা প্রাণ হতে নিয়েই পারাপার হচ্ছেন নগরবাসী।
এর থেকে আর কিছুটা দূরে গেলে তালাইমারী মোড়। বাস যোগে রাজশাহীতে প্রবেশের মূলত এটিই প্রধান পথ। তালাইমারী মোড় থেকে ভদ্রা আসতে সড়কে চোখে মেলে বিশালাকার এক গর্ত। এক গর্তে পুরো সড়কের বুক যেন ঝাজরা করে দিয়েছে। শুধু গর্ত নয় স্তরে স্তরে খাম জখমে অসহায় হয়ে পড়েছে সড়কটি।

14317458_1267171936660828_1743706146801389264_n-copy
জানা যায়, এমন বেহাল অবস্থা দেখে ঈদুল আযহার আগে রাজশাহী সিটি করপোরশেনের উদ্যোগে রাস্তাটি সংস্কার করার জন্য আসে। কিন্তু পুডিং মারার মতো ইট ফেলে চলে যায় তারা।

 

স্থানীয়রা সিল্কসিটি নিউজকে জানায়, তিন নম্বর ইট ফেলে কোনো মতে রাস্তা সমান করে চলে যায়। আবার সমান করতে নেয়া হয়নি রোড রোলারের সাহায্য। ঠিক যেন থুতু দিয়ে ছাতু মাখা। অত:পর গর্তটি পুনরায় জেগে উঠলে ক্ষোভ বাড়ে স্থানীয়দের মাঝে।
বৃহস্পতিবার সকালে সড়কের পাশে খোঁজ নিতেই স্থানীয় ট্রাক চালক আনিসুর রহমান সিল্কসিটি নিউজকে বলেন, আপনারাই একটু অভিযোগ দেন ভাই। আমাদের কথা কেউ শোনেনা। ঈদের আগে একবার শুধু ইট ফেলে রেখে গেছে। রুলার দিয়ে ডলাও দেইনি। কদিন হলো ঈদের। আবার গর্ত হয়ে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, এই রাস্তা দিয়ে গেলে ট্রাকের বা বাসের এক্সেলের ক্ষতি হয়। গাড়ি রিপেয়ার করতে অনেক টাকা খরচ হয়। কবে থেকে এই অবস্থায় পড়ে আছে। এসব দেখার কেউ নাই।
স্থানীয় রুহুল আমিন  বলেন, রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে থাকতেই দেখি কখনও অটো উল্টে যাচ্ছে কখনও রিকশা। দৌড় দিয়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে লোকজন। এটা নিত্য দিনের বিষয় হয়ে গেছে।
বাসের হেলপার হাসিবুল বলেন, পুরো সড়ক ঘুরে এসে রাজশাহী ঢুকতে গেলেই আমাদের সমস্যা হয়ে যায়। এই রাস্তাটিতে আসলেই গাড়ি কাত হয়ে যায়। কখনও পানি জমে থাকার কারনে বোঝা যায় না গর্ত আছে কি নাই। এমন সময় একটু গতিতে থাকলেই গাড়ি উল্টে যেতে লাগে।
কার্পেটিং উঠতে শুরু করেছে ভদ্রা সংলগ্ন রেশম ভবনের সড়কটিতেও। উপর স্তরের কার্পেটিং শেষে  ক্রমেই ক্ষয় হতে শুরু করেছে দ্বিতীয় স্তরটি। অবিলম্বে এই সড়কটি সংস্কার না করা হলে কয়েক দিনের মধ্যেই জখম হতে শুরু করবে এই সড়কটিও।
নগরজুড়ে প্রধান সড়ক গুলোর এমন বেহাল অবস্থা দেখেও নীরব ভুমিকাতে সিটি করপোরেশন। গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়কের অবস্থা দিন দিন আরও নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। নগর ব্যবস্থাপনায় এবং সৈান্দর্য বর্ধনে সড়ক বিভাগ নিশ্চুপ। রাস্তা সংস্কার হবে কবে সে দুশ্চিন্তায় নগরবাসী।

স/আর