রাজশাহীর ঘোড়ার গাড়ি, দিন দিন হয়ে যাচ্ছে রুপকথার গল্প!

নূপুর মাহমুদঃ

যেখানে ঘোড়া গাড়িতে চেপে কল্পনায় ভেসে যাওয়া। তবে এসব দিন দিন হয়তো কাল্পনিক হয়ে রুপকথার গল্পে পরিনত হতে যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের কাছে। হয়তো নতুন প্রজন্ম পাবে না ঘোড়া গাড়িতে চড়ে ঘুরতে যাওয়ার মজা, বুঝবে না কিভাবে ঘোড়া তার বাহনের সাথে মানুষ বহন করে ঘুরে আর দৌড়ায়, কথা গুলো বলছিলেন রাজশাহীর নূর মোহাম্মদ কোচওয়ান।

তিনি বলেন, রাজশাহী মহানগরীর আদি যানবাহন ঘোড়ার গাড়ি (টমটম) যা এককালে জমিদার ও তার কমর্চারীদের প্রধান যানবাহন ছিল তা আজ হারাতে বসেছে। বর্তমানে রাজশাহীতে হাতে গোনা ৩ থেকে ৪টি ঘোড়ার গাড়ির দেখা মিলবে।

এ কথা গুলো শেষ গতে না হতেই, ফাঁকা গাড়ি নিয়ে বসে বসে নিজের মনে তিনি যেন কি ভাবতে লাগলেন তিনি। দেখে মনে হলো হয়তো পুরনো কিছু মনে হতেই আনমনে কিছু ভাবছেন।এই যেন এক কল্পনার জগতে ভেসে যাওয়া।

কিছুক্ষণ পর একজন বলে উঠলেন, মামা যাবেন তিনি হাসিতে উত্তর দিলেন যাবো মামা চলেন কোথায় যাবেন। এ কপা দুপা করে অনেকে এগিয়ে এলো চড়ার জন্য।

ঘোড়া গাড়িতে বসে থাকা তৌফিক কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি এর আগে গাড়িতে ঘোড়ার গাড়ি তে বসিনি তবে খুব ভালো লাাগছে। আমরা রাজশাহীর রাস্তায় ১ থেকে ২টি টমটম দেখতে পাচ্ছি। তবে হয়তো আর কিছু দিন গেলে তাও আর চোখে পরবে না।

রাজশাহীর টি-বাঁধ এলাকায় বিকেলে গেলে সাথে দেখা মিলে এই ঐতিহ্যের ঘোড়া গাড়ির। জানতে চাইলে ঘোড়াগাড়ী চালক নূর মোহাম্মদ আবারো বলেন, তিন পুরুষ ধরে এই পেশায় আছি। কিন্তু পরবতীতে আর কারো দেখা মিলবে কি না আমি জানিনা (চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট)। তবে আমি শুধুমাত্র সংসার চালানোর দায়েই নয়, পৈতৃক এই পেশাকে বৃদ্ধ বয়সে এসে হারাতে চাই না। বিধায় শতকষ্ট সত্ত্বেও এই পেশা ছাড়তে পারছিনা।

নূর মোহাম্মদের আদি ও বর্তমান নিবাস নওহাটা পৌরসভার মথুরা গ্রামে। তিনি আরও জানান, তাঁর দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। কিন্ত ছেলেরা আর এই পেশায় আসতে চায় না। আর এ পেশায় আয়-রোজগার তেমন নেই।

তিনি বলেন, এ কসময় তাদের মথুরা গ্রামে ২৮টিসহ রাজশাহী নগরীতে প্রায় শতাধিক টমটম গাড়ি ছিল। সূত্রে জানা যায়, নগরীতে টমটমের সংখ্যা কমতে কমতে এখন দাড়িয়েছে মাত্র ৩ থেকে ৪টিতে। তারপর ও সেগুলোর দেখা পাওয়া মুশকিল, বলেই সেই গ্রামের বর্তমান কোচোয়ান সংখ্যা কমে এসে দাঁড়িয়েছে।

জানা যায়, তিনি টমটম চালান নওহাটা পৌরসভা থেকে সাহেব বাাজার টি-বাঁধ পর্যন্ত। টমটম থেকে প্রতিদিন আয় হয় ১৫০-২৫০ টাকা হয়। যা দিয়ে বর্তমান সময়ে সংসার চালানো খুব কষ্টকর। খুব শখ করে বাচ্চারা ওঠে ঘোড়া গাড়িতে। এখন তাদের মনে হয় কোচোয়ানরা তাদের নিজেদের পরিচয়ই হারিয়ে ফেলছে।

একসময় এটিই প্রধান যানবাহন থাকলেও এখন আর এর চল খুব একটা নেই। তবে এখন বিভিন্ন রকম উৎসব যেমন, পহেলা বৈশাখ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা শখ করে ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়ায়। ঘোড়ার খাবার হিসেবে তাদের প্রতিদিন মোট ১ কেজি ছোলা, ৫ কেজি ধানের কুঁড়া, ১ কেজি গমের ভুষি, ও ১ কেজি লালিগুড় কিনতে হয়। আর এইসব খাবারের দিনের মোট খরচ প্রায় ১২৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। কোচোয়ানদের রোজগারের এই টাকা শুধুমাত্র ঘোড়াকে খাওয়ানো আর সংসার চালানোতেই খরচ হয় না বরং এ গাড়ি চালাতেও তাদের ট্যাক্স গুণতে হয় বছরে ১৫০ টাকা।

এদিকে নূর মোহাম্মদ আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, “আমাদের সাথেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে যুগ-যুগ ধরে চলে আসা এই টমটম চালানোর পেশা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি এখনও কৌতূহলের বিষয় হলেও ভবিষৎ প্রজন্ম হয়ত আর দেখবে না এই টমটম গাড়ি। জানতেও পারবেনা রাজশাহীর এই টমটমের কথা “

স/অ