রাজশাহীতে ৭ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি- বিস্ফোরকসহ তিন ‘সন্ত্রাসী’ গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে ৪টি বিদেশি রিভলবার, ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৪টি ম্যাগজিন ও বোমা তৈরীর সরঞ্জাম ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্যসহ তিন ‘সন্ত্রাসীকে’ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। আজ শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ভোর পৌনে ৬টার দিকে মহানগরীর কাটাখালী থানার কাপাশিয়া পাহাড়পুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-৫ এর রাজশাহীর সিপিএসসি মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের একটি দল এসব আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্যসহ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় র‌্যাব-৫ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক (সিইও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- কাটাখালীর কাপাশিয়ার পাহাড়পুর এলাকার মো. আব্দুল মতিনের ছেলে মো. আতিকুর রহমান ওরফে আতিক (৩৫), তার সহযোগী নগরীর চরকাজলা এলাকার মো. ঝড়ু মিয়ার ছেলে মো. শাহীন আলী (২৫) এবং নগরীর ধরমপুর পূর্বপাড়া এলাকার মো. নেকছার আলীর ছেলে মো. শহিদুল ইসলাম (২৬)।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি- রাজশাহীতে একটি বড় অস্ত্রেও চালান সীমান্তবর্তী চর এলাকা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) পাশ্ববর্তী এলাকায় আসছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৫ এর সিপিএসসি অভিযানিক দল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশেপাশের এলাকায় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাবের ওই চৌকস দল কাপাশিয়া এলাকার স্বাধীনতাবিরোধী একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সক্রিয় সদস্য আতিকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। এসময় গ্রেপ্তারকৃত আতিক এসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, বিস্ফোরকদ্রব্য তার মুরগির খামারের পাশের একটি ছোট্ট ঘরে রেখেছিল। ঘরটির ভেতরের দিক কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। পরে গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর সে তার মুরগির খামারের পাশের ওই ছোট ঘর ও মুরগির খামার থেকে ৪টি বিদেশি রিভলবার, ৩টি বিদেশি পিস্তল, ৪টি ম্যাগজিন, ৮ রাউন্ড তাজা গুলি, ৪ রাউন্ড গুলির খোসা, এক কেজি ১০০ গ্রাম গান পাউডার, বোমা বা ককটেল তৈরীর কাজে ব্যবহারের জন্য ৭৫০ গ্রাম ছোট ছোট পাথর, স্প্লীন্টার হিসেবে ব্যবহৃত লোহার বল ও তারকাটা, ২টি মোবাইল ও ৪টি সিমকার্ড অস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্যগুলো বের করে নিয়ে আসে। এসময় তার মুরগির খামারে রাখা ককটেল ও বোমা তৈরীর বিভিন্ন উপকরণ র‌্যাবের হাতে হস্তান্তর করে।’

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘গ্রপ্তারকৃত আসামি আতিকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তার সহযোগী মো. শাহীন আলী ও শহিদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়Ñ সীমান্তবর্তী অজ্ঞাত স্থান থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. তানজিম (২৭) ও মো. আব্দুর রহিমের (২৮) মাধ্যমে অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্যগুলো সরবরাহ করত। এদের মূল টার্গেট রাজশাহী তথা বাংলাদেশের শান্তি-শৃক্সক্ষলা বিনষ্ট করা। রাবির এই শিক্ষার্থী স্বাধীনতাবিরোধী একটি সংগঠনের সদস্য বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদেরকে ধরতে বিশ^বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী একটি ছাত্রাবাসে অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু তাদেরকে সেখানে পাওয়া যায়নি। তবে তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে র‌্যাব অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আশা করছি, দ্রুত তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হবো।’

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন গোষ্ঠি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। এরই ধারাবাহিকতায় উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র, গোলা-বারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্যগুলো রাজশাহীতেই ব্যবহার করার জন্য সরবরাহ করা হচ্ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশে অভ্যন্তরীণ অবৈধ বিদেশি অস্ত্রের চাহিদা বাড়ছে জন্যই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের চালানও ইদানিং বেড়ে গেছে। গত তিন মাসে রাজশাহীতে অস্ত্র উদ্ধারের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- গত আগস্ট মাসে র‌্যাব-৫ ১৬টি, সেপ্টেম্বর মাসে ৪০টি এবং চলতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে অবৈধ বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রের (রিভলবার ও পিস্তল) বিশাল চালান ধরা পড়েছে। তার মানে হচ্ছে, আগামী নির্বাচন ও সরবারবিরোধী আন্দোলনের নামে দেশকে অশান্ত পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি এসব অস্ত্র সরবরাহ করছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। আমরা আরও বেশি সতর্ক অবস্থানে আছি, যাতে সীমান্তবর্তী রাজশাহীতে সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্রের অবৈধ জোগান কিংবা সরবরাহ করতে না পারে।’

এএইচ/এস