রাজশাহীতে লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা রাজশাহীতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মহানগর এলাকায় ঘোষিত সর্বাত্মক লকডাউনের বিধি-নিষেধ বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানসহ প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।  শুক্রবার সকাল থেকেই মহানগর এলাকার জনগণকে কঠোর এই লডকাউন (শুক্রবার বিকেল ৫ টা থেকে ১৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত) বাস্তবায়নে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগীতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

এছাড়া লকডাউন বাস্তবায়নে প্রশাসনকে শুক্রবার সকাল থেকে চলমান বিধিনিষেধ জোরদার করার পাশাপাশি নানা ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। এরই অংশ হিসেবে লকডাউন সম্পর্কে অবহিত করতে মাইকিং করে সবাইকে জানানোসহ বিধিনিষেধ না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সতর্ক করা হয়। এদিকে সর্বাত্মক এই লকডাউ বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা করার সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক। সপ্তাহব্যাপী সর্বাত্মক লকডাউন শুরুর প্রাক্কালে শুক্রবার বিকাল ৫টায় মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে লকডাউন বাস্তবায়ন কর্মসূচি সম্পর্কে আলাপকালে তিনি এই আহ্বান জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন জারি করেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল জলিল। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে ১৭ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শপিং মল, বিপণিবিতান, দোকান, রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে। তবে ওষুধ, কাঁচাবাজার, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন ও সৎকারের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান এই লকডাউনের আওতাবহির্ভূত থাকবে।

প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়- এই বিধিনিষেধ চলাকালে বাস, ট্রেনসহ কোনো ধরনের যানবাহন রাজশাহী মহানগরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং রাজশাহী মহানগর থেকে বের হতে পারবে না। তবে আমসহ কৃষিপণ্য, খাদ্যসামগ্রী পরিবহন, রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবাদানকারী পরিবহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে।

প্রজ্ঞাপনে জনসমাবেশ হয় এমন যেকোনো ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের জমায়েত বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া সব ধরনের পর্যটনস্থল, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। এসব বিধিনিষেধ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে রাজশাহী নগরে লকডাউন ঘোষণার পর রাত থেকেই রাজশাহী মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানো হয়। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, রাত থেকেই লকডাউনের বিষয়ে বিধিনিষেধগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পুলিশ মাইকিং করা হয়। নগরে এই সাত দিন কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, সে বিষয়ে মানুষকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই প্রচারণা আরও ব্যাপকভাবে চালানো হয়।

তিনি আরও বলেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের ১২ থানার পাশাপাশি লকডাউন বাস্তবায়নে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। মহানগর পুলিশের সঙ্গে রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সও কাজ করবে। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের কাছে আনসার সদস্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। লকডাউন চলাকালে বিধিনিষেধ অনুযায়ী মহানগরের সব প্রবেশপথে পুলিশ শক্তভাবে অবস্থান নেবে। কোনোভাবেই নগরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না এবং নগর থেকেও বাইরে বের হওয়া যাবে না।

এদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন দুটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করতেন। শুক্রবার বিকেল থেকে চারটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার জেলা সার্কিট হাউসে রাত ৯টা থেকে রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত রাজশাহীর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি সভা শেষে রাজশাহীতে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়ার ঘোষণা দেন বিভাগীয় কমিশনার মো. হুমায়ুন কবীর।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে ঈদের পর থেকে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর হারও। ৪ জুন রাজশাহী মেডিকেলে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ৬ জনই ছিলেন রাজশাহীর বাসিন্দা। এছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনই রাজশাহীর বাসিন্দা। জেলায় করোনা শনাক্তের হারও কয়েক দিন থেকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ও জিন-এক্সপার্ট মেশিনের করোনা ফলাফল বাদে শুধু পিসিআর ল্যাবে ৫০ শতাংশের বেশি করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুও বাড়ছে। এ অবস্থায় রাজশাহী নগরে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ঘোষণা এলো।

স/অ