রাজশাহীতে যৌতুকলোভি রেল কর্মচারী দিয়েছেন তৃতীয় স্ত্রীকে গলাকেটে হত্যার হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মাত্র ২৮ বছর বয়সেই একে একে বিয়ে করেছেন তিনটি। যৌতুকের দাবিতে তিন স্ত্রীর মধ্যে একের পর এক নির্যাতনের কারণে প্রথম স্ত্রী আত্মহত্যা করেছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সংসারে একটি কন্যা সন্তান জন্ম নিলেও তাঁকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের পর তালাক দিয়েছেন। সর্বশেষ তৃতীয় স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের পর বাড়ি থেকে বের করে দেন। এমনকি বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পরে সেই স্ত্রীকেও তালাক দিয়েছেন। তৃতীয় স্ত্রী থানায় মামলা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে এবার গলাকেটে হত্যা করার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল  এই ধরনের একটি অডিওসহ সাবেক স্বামী রাশেল ইসলামের নানা অপকর্মের আরও কিছু তথ্য তৃতীয় স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন দিয়েছেন। রাশেল রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল জোনের খালাসি পদে চাকরি করেন। তিনি বর্তমানে পাবনার ঈশ্বরর্দী স্টেশনে ফুয়েল সেকশনে কর্মরত রয়েছেন। সুরাইয়ার বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকরে।

তাঁর চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরর্দীর সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী ওসমান গনি বলেন, ‘রাশেল এখানে খালাসি পদে চাকরি করেন। তবে তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের কোনো অভিযোগ আছে কিনা জানি না।’

পুঠিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে সুরাইয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় পুঠিয়ার দিঘলকান্দি গ্রামের বাসিন্দা রাশেল ইসলামের। বিয়ের সময় রাশেল ইসলামকে ছয় লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছিলেন সুরাইয়ার পরিবার। সেই টাকা দিয়ে রাশেল রেলওয়েতে চাকরি নেন। কিন্তু চাকরি পাওয়ার বদলে যান রাশেল। এরপর আবারো যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন করতে থাকেন সুরাইয়াকে। কিন্তু পুনরায় যৌতুক না দেওয়ায় রাশেল গত ১৫ জুন স্ত্রীকে সুরাইয়াকে নির্যাতনের পর বাড়ি থেকে বের করে দেন।
এরপর সুরাইয়া গত ২৯ জুন পুঠিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় এখন পুলিশের খাতায় পলাতক আসামি রাশেল। কিন্তু মামলা দায়েরের পর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি স্ত্রীকে জবাই করার হুমকি দিয়েছেন। সম্প্রতি মোবাইলে দেওয়া সেই হুমকির সময় রাশেল তাঁর স্ত্রীকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আর কোথাও যদি অভিযোগ করিশ, তাহলে তোকে জবাই করে ফেলবো। আমার চাকরি যদি চলে যায়, তাহলে তোকে আমি ছাড়বো না।’

সুরাইয়া বলেন, ‘বিয়ের সময় নানা প্রলোভনে রাশেল আমাকে বিয়ে করে। আমি তাকে সবকিছু বিক্রি করে ছয় লাখ টাকা দিয়েছি। টাকা গ্রহণের তার লিখিত ডকুমন্টেও আছে আমার কাছে। কিন্তু সে আরও যৌতুকের আমার সঙ্গে এখন আর সংসার করতে চাই না। আমি এই প্রতারণার বিচার চাই।’

এদিকে যোগাযোগ করা হলে রাশেল বলেন, ‘আমার স্ত্রীই আমাকেই নানাভাবে নিযাতন করত। তার কারণে আমি অতিষ্ঠ। এ কারণে তাকে তালাক দিয়েছি। কিন্তু আমি তাকে কোনো হুমকি দেয়নি। ওটা আমার ভয়েস না। সে মামলা করেছে আমি আইনের মাধ্যমেই বিষয়টির ফয়সালা করবো।’

জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার ওসি রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘ওই নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। প্রধান আসামি পলাতক রয়েছে। তবে বাদীকে হত্যার হুমকির বিষয়টি জানা নাই। এই ধরনের ঘটনা ঘটনা থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।