রাজশাহীতে মাঠ দখলে আ.লীগ রাতে বাড়িছাড়া বিএনপি নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের সমান সুযোগ তৈরি করা প্রধান শর্ত। বাস্তবে রাজশাহীতে তেমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাস ছয়েক আগ থেকে ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টাঙানো বা ঝোলানোর হার বেড়ে যায় কয়েক গুণ। ফলে রাস্তার ধারের কোনো কোনো গাছ হয়ে ওঠে ফেস্টুনময়। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক, রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক, রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়কসহ জেলার আন্ত উপজেলা সড়কগুলোরে দুই ধারের গাছপালা আওয়ামী লীগের প্রচারণা চোখে পড়ে। মাঝে মাঝে কোথাও কোথাও বিএনপি নেতাদেরও ব্যানার, ফেস্টুন চোখে পড়ে। তবে সেগুলো অনেকটা পুরনো হয়ে গেছে। নতুন করে কোথাও বিএনপি নেতাদের ব্যানার, ফেস্টুন তেমন চোখে পড়ছে না। এতে বোঝা যায় রাজশাহীর নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ এখন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দখলে।

গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার সবখানে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনাও বেশি। আবার নিজেদের শোডাউন থেকে শুরু করে উঠান বৈঠক, মিছিলও করছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরাই। কিন্তু বিপরীতে মাঠপর্যায়ে কোনো কার্যাক্রম নেই বিএনপির প্রার্থীদের। বলা যায়, অনেকটা নিস্তব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পুলিশ চালাচ্ছে বিএনপি নেতাদের ধরপাকড়। এ কারণে আরো ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে। ফলে নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণা তো দূরের কথা বেশির ভাগ চিহ্নিত নেতাকর্মী এখন বাড়িতে রাতে ঘুমাতে সাহস পাচ্ছে না।

পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুরের বাসিন্দা মুনসুর রহমান বলেন, ‘সবখানেই এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ব্যানার, ফেস্টুন। বিএনপি বা অন্য কোনো দলের চোখে পড়ছে না। আবার নির্বাচনে কারা প্রার্থী হবেন, এটা নিয়েও আওয়ামী লীগের লোকজনের মুখেই বেশি শোরগোল শোনা যাচ্ছে। কোন প্রার্থী কোন নেতাকে ভাগিয়ে নেবেন, এ নিয়েও তাঁদের মধ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। কিন্তু বিএনপির নেতাদের তেমন তৎপরতা চোখে পড়ছে না। বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকটা ভয়ে ভয়ে আছে দেখছি। ’

পবা উপজেলার হরিপুরের বাসিন্দা নেজারত আলী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের লোকদের মুখেই বেশি কথাবার্তা শুনছি, যা বিএনপির লোকদের মুখে নেই। আবার বিএনপির লোকদের পোস্টারও চোখে পড়ছে না। গ্রেপ্তারের ভয়ে তারা রাতে বাড়ি থাকতে পারছে না। ’

এদিকে দলীয় সূত্র মতে, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজশাহীর ৩৩ জন আওয়ামী লীগের নেতা ছয়টি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। গত শুক্রবার থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম এতগুলো আওয়ামী লীগ নেতা দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ফরম সংগ্রহ করেছেন। গত শনিবার থেকে তাঁরা আবার ফরম জমা দিতেও শুরু করেছেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বৃহৎ দল হিসেবে একাধিক প্রার্থী থাকবে—এটাই স্বাভাকি। কিন্তু আমাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আমরা সবাই একযোগে কাজ করছি নৌকার পক্ষে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এখন পোলিং এজেন্ট বাছাই চলছে। আশা করছি, দ্রুত পোলিং এজেন্টদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে দিতে পারব। ’

এদিকে রাজশাহী জেলা বিএনপির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, ‘সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশ থাকলে আমরাও সমানতালে প্রচারণায় নামতে পারতাম। কিন্তু আমাদের কোনো কর্মসূচি না থাকলেও গায়েবি মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করা হচ্ছে। নেতাকর্মীরা রাতে যেখানে শান্তিমতো বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না সেখানে প্রচারণা চালাবে কী করে?’

নির্বাচনে সমান সুযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যেসব স্থানে এখনো ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড আছে, আগামী ১৪ তারিখের মধ্যে সেসব সরাতে বলা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ উদ্যোগে এগুলো সরিয়ে নেবেন। যদি না সরান, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনে সবাই যেন সমান সুযোগ পান, আমরা সেটি নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। ’