রাজশাহীতে মরিচের ঝাল বেড়েছে,ঝাঁজ অপরিবর্তিত রয়েছে রসুন-পেঁয়াজের

স্মৃতি আক্তার:

করোনা মহামারীর এই সময়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজশাহীতে প্রায় সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। তবে কয়েক দিনের চেয়ে যেন মরিচের ঝাল কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় শুক্রবার (৩০ জুলাই) মরিচের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকা। তবে রসুন কিংবা পেয়াজের ঝাঁজ (দাম) অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে। এদিকে মাছের বাজার ঘুরে দেখো গেছে- গত সপ্তাহের চেয়ে শুক্রবার মাছের দাম কিছুটা কম ছিল। তবে অপরিবর্তিত ছিল মাংসের বাজার।

বিক্রেতারা বলছেন- করোনা মহামারীর এই সময়ে কঠোর লকডাউনের কারণে আমদানি কম, তাই কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে। ঈদের কারণে লকডাউনের এই সময়েও এ সপ্তাহে সবজির দাম তুলনামূলক কম।

রাজশাহী সাহেব বাজার মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে- গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে কাঁচামরিচ ছিলো ৬০ টাকা। এ সপ্তাহে দাম বেড়ে হয়েছে ৮০ টাকা কেজি। ক্রেতারা বলছেন, কোনো অজুহাত পেলেই ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেন। তবে সবজি কিছুটা কম দাম কিন্তু কাঁচামরিচের দাম বাড়লো। হঠাৎ আবার কখন সবজির দাম বেড়ে যাবে বলা যায় না।

কাঁচাবাজারে সবজি ক্রয় করতে আসা নগরীর টিকাপাড়া এলাকার চাকরিজীবী শরিফউদ্দিন বলেন, ‘সব ধরনের সবজির দাম আজ অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে কাঁচা মরিচের দাম বেশি। বৃষ্টি হলেই ব্যবসায়ীরা মরিচের দাম বাড়িয়ে দেয়। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।’

তবে কাঁচাবাজারের সবজি ব্যবসায়ী মো. ইউনুছ আলী বলেন,  ‘লকডাউনের কারণে সব ধরনের পণ্যের দামই বাড়ার কথা ছিল। তবে শুধু কাঁচামরিচের দাম একটু বেড়েছে। বাকি প্রায় সব ধরনের সবজির দামেই কিন্তু কমেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ যেকোনো পণ্যের চাহিদা বেশি হলে দাম বৃদ্ধি পায়। আবার চাহিদা কম হলে দাম কমে। যেহেতু কয়েকদিন আগেই কোরবানির ঈদ ছিল। সেজন্য ক্রেতারা মাংস খাওয়ার কারণেই অন্যান্য সবজির চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। যার কারণে দামও গত সপ্তাহের তুলনায় একটু কম। তবে মরিচ ছাড়া তো তরকারি রান্না করা অসম্ভব, এজন্য কাঁচামরিচের দাম একটু বেড়েছে।’

শুক্রবার (৩০ জুলাই) নগরীর মাস্টারপাড়া কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা কেজি। রসুন ১০০ থেকে ১৮০ টাকা ও পেঁয়াজের কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। প্রতি বাজারে দাম কমেছে আলু, পটল, বেগুন, চটেমোসহ অন্যান্য সবজির। আলু গত সপ্তাহে ছিলো ২০ থেকে ২৫ টাকা, এ সপ্তাহে দাম কমে হয়েছে ২০ টাকা। বেগুনের দাম ৪০ টাকা থেমে কমে ৩০ টাকা, করলা ৪০ টাকা থেকে কমে ৩০ টাকা, কচু গতসপ্তাহে ছিলো ৫০ টাকা, এসপ্তাহে ৪০ টাকা, পটল ৩০-৩৫ টাকা থেকে  কমে ২০ টাকা কেজিতে নেমেছে।

এছাড়া পেঁপে ৩০ টাকা, শসা ৩০ টাকা, ঢেঁড়স ২০ টাকা, ঝিঙে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা থেকে শুক্রবার ছিলো ১২০ টাকা কেজি। টমেটো গত সপ্তাহে ছিলো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি। তবে দাম কমে শুক্রবার হয়েছে ১০০ টাকা কেজি। বরবটি দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা, সজনে ডাটা ১০০ টাকা। প্রতি পিস লাউ ও চালকুমড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা। সাকের মধ্যে কাঠুয়া ডাটা ও পুঁইসাক ৩০ টাকা। লালসাক ও সবুজ সাক ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এদিকে চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়- প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল ৪৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ সপ্তাহে ৪৬ টাকা দরে বিক্রি। নতুন আটাশ ৫০ থেকে ৫৮ টাকা, এ সপ্তাহে আটাশ ৫০ থেকে ৫২ টাকা। নতুন মিনিকেট ৫৬ টাকা, পুরোনো মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ টাকা, বাসমতি ৬৮, এ সপ্তাহে বাসমতি ৬৫ টাকা। নাজিরশাল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। পোলাও চাল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, কাটারিভোগ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের মধ্যে- প্রতি কেজি গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাশির মাংস ৮০০ টাকা ও বকরির মাংস ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়াও ব্রয়লার মুরগি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, সোনালীর দাম ২০০ টাকা, সাদা লেয়ার ১০ টাকা কমে ১৯০ টাকা, দেশি মুরগি কেজিতে ৪২০ টাকা। হাস ২০০ দরে বিক্রি হয়েছে।

তবে মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে- সব ধরনের মাছ তুলনামূলক একটু কম দরে বিক্রি হয়েছে। বড় ধরনের রুই মাছ  ২২০ টাকা ২৪০ টাকা কেজি; যা গত সপ্তাহে ছিল ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি। এছাড়া মাগুর মাছের কেজি গত সপ্তাহে ছিল সাড়ে ৪ শত টাকা আর শুক্রবার এই মাগুর মাছ বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজিতে। এছাড়া ছোট চিংড়ি গত সপ্তাহে ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে দেখা গেলেও শুক্রবার কেজিতে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এমনিভাবে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হয়েছে।

কারণ হিসেবে মাছ ব্যবসায়ীরা কোরবানির ঈদকেই দায়ি করছেন। তারা বলছেন, কোরবানির ঈদের কারণে কয়েকদিন থেকে ক্রেতারা মাংসই বেশি খাচ্ছে। যার কারণে মাছের চাহিদা একটু কম। এজন্য দামও কিছুটা কমেছে।

এএইচ/এস