রাজশাহীতে ব্যাংকের আউটলটে চাকরি নিয়ে প্রতারণার ফাঁদে দেড় শতাধিক যুবক-যুবতী!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

রাজশাহীতে একটি ব্যাংকের এ্যাজেন্ট ব্যাংকের ১২টি আউটলেট খুলে দেড় শতাধিক যুবকের নিকট থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। রাজশাহী নগরীর কোর্ট এলাকার বাসিন্দা সেলিম রেজা নামের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভূক্তভোগী যুবক-যুবতীরা এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়েও অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রতারক সেলিমকে গতকালকেই এবি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে ডেকে নিয়ে কারণ দর্শাতে বলাতে হয়।

জানতে চাইলে ব্যাংকটির এ্যাজেন্ট ব্যাংকিং লিড কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। আমরা রাজশাহীর ওই আউট লেটগুলোর সত্বাধিকারীকে ডেকেছি। তিনি কি উত্তর দেন, তার ওপর নির্ভর করে পরবর্তি ব্যবস্থা নিব। আমরা চাই না আমাদের ব্যাংকের নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ যুবকদের সঙ্গে কোনো প্রতারণা হোক।

গতকাল সরেজমিন এবি ব্যাংকের রাজশাহীর দুর্গাপুরের আমগাছী হাট এ্যাজেন্ট আউটলেট ঘুরে দেখা গেছে, ৫-৭ জন যুবক-যুবতী আউটলেটে বসে আছেন। কেউ গল্প করছেন, কেউ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। তেমন কাজ-কর্ম না থাকায় তারা প্রতিদিন এভাবেই অধিকাংশ সময় কাটিয়ে বাড়ি চলে যান বলে জানান আদরি খাতুন নামের এক যুবতী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে তেমন কাজ নাই। প্রতিদিন প্রায় বসে থেকেই সময় কাটে। দুই-একজন নতুন গ্রাহক আসলে আমি ফরম পূরণ করে দেয়। গত জানুয়ারি মাসে আমি নিয়োগ পেয়েছি। এখানে আইটলেট খুলেছেন সেলিম রেজা নামের একজন। তাঁকে তিন লাখ টাকা দিয়েছি জামানত হিসেবে। প্রথম দুই মাস ৬ হাজার টাকা করে বেতন দিয়েছেন। এর পর থেকে আমাকে আর কোনো বেতন দেওয়া হয়নি।’

আদরি আরও বলেন, আমি চাকরি না পেয়ে এখানে ধার-দেনা করে টাকা দিয়ে চাকরি নিয়েছি। এখন বেতন না পেয়ে খুব কষ্টে আছি।’

ওই আউচলেটের ইনচার্জ মিঠুন আলী বলেন, ‘আমাকে ১২ হাজার টাকা বেতন দিবেন বলে দুই লাখ টাকা নিয়েছেন সেলিম রেজা। কিন্তু প্রথম দুই মাস মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতন দিয়েছেন। এর পর গত ৮ মাস ধরে আমাকে আর বেতন দেয়া হয়নি। এখানে ১২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল ২-৪ লাখ টাকা করে নিয়ে। তাদের মধ্যে কয়েকজন আর আসেনই না বেতন না পেয়ে। কিন্তু আমরা এখনো আশা ছাড়িনি। আমাদের টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা ঢাকাতেও অভিযোগ করেছি।’

মিঠুন আলী বলেন, ‘আমাদের কাজ হলো আউটলেটে বসে গ্রাহকদের সেবা দেওয়া। কিন্তু আমাদের দিয়ে প্রথম দিকে এনজিও করানোর চেষ্টা করেন সেলিম রেজা। এনজিও’র মাধ্যমে গ্রাহস তৈরী করে সেই টাকা ডিপোজিট করার চেষ্টা করেছিলেন সেলিম রেজা। তাঁর স্ত্রী সাদিয়া রোমানা আউটলেটের সত্বাধিকারী। কিন্তু সমস্ত নিয়োগ এবং দেখা-শোনা করতেন সেলিম রেজা। তবে গত প্রায় ৬ মাস ধরে তিনি আর আসেন না। আমাদের বেতন চাইলেও দিবো-দিচ্ছি করে ঘুরানো হয়। বাধ্য হয়ে আমরা ঢাকায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগ করেছি।’

ভ্যাংকটির আলিপুর আউটলেটের ইনচার্জ ফরহাদ রেজা বলেন, আমার নিকট থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন সেলিম রেজা। কিন্তু আমাকেও ঠিকমতো বেতন দেওয়া হয়নি। তার পরে আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে আবারও টাকা নিয়ে আরকেজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। মূলত নিয়োগের নামে প্রতারণা করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় মূল উদ্দেশ্য সেলিম রেজার।’

আউটলেটের রবিউল ইসলাম নামের আরেক যুবক বলেন, ‘রাজশাহী জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো ১২টি আউটলেট খুলে আমার মতো প্রায় দেড়শ’ কর্মী নিয়োগ দিয়েছেন সেলিম রেজা। যাদের নিকোট থেকে অন্তত দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাউকেই দুই মাসের বেশি বেতন দেওয়া হয়নি। প্রত্যেককে বেতনের জন্য ঘুরানো হচ্ছে। যাদের প্রভাব আছে, তারা এরই মধ্যে সেলিম রেজার নিকট থেকে জামানতের টাকা আদায় করেছেন। কিন্তু আমাদের কেউ নাই বলে আমরা টাকা তুলতে পারছি না। আবার বাড়িতেও খরচ দিতে পারছি না। কিন্তু জমি বন্ধক রেখে আমি তিন রাখ টাকা দিয়েছিলাম সেলিম রেজাকে।’

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে আউটলেটের সত্বাধিকারী সাদিয়া রোমানার স্বামী সেলিম রেজা দেড়শ’ টাকা নিয়ে যুবক-যুবতীকে নিয়োগ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে স্বাক্ষাতে কথা হবে। আমি ঢাকায় আছি ব্যাংক থেকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।’

জানতে চাইলে এবি ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ম্যানেজার এটিএম নূরুল্লাহ বলেন, ‘আমরা কিছু শর্তসাপেক্ষে আউটলেটের অনুমোদন দেয়। তার পরেও বিষয়টি নিয়ে প্রধান কার্যালয়ের এ্যাজেন্ট ব্যাংকিং শাখা ভালো বলতে পারবেন। তবে বিষয়টি নিয়ে আমরা সুরাহার চেষ্টা করছি।’