রাজশাহীতে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রমজানের শুরুতে রাজশাহীর বাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম। রমজানে চাহিদা বেড়েছে বিভিন্ন রকমের ডালের। চাহিদার সাথে সাথে বেড়েছে দামও। গত সপ্তাহের তুলনায় ডালের দাম কেজি প্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যাদিও প্রতিবছর রমজানে ইফতারসামগ্রীতে বাজার ভরে গেলেও এবার ভিন্ন চিত্র। বাজারে নেই ইফতারসামগ্রীর পসরা।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে- গত সপ্তাহে মসুর ডালের দাম ছিলো কেজি প্রতি ৮০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৯০ থেকে ১২০ টাকা। ছোলা দাম ছিলো ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। কিন্তু এখন ছোলার দাম কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত। খেসারি ডাল কেজি প্রতি ১০ টাকা করে বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিলো ৮০ টাকা। রমজানের শুরুতেই দাম বেড়ে হয়েছে ৯০ টাকা।

ডালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে বিভিন্ন রকমের মশলারও। দারুচিনি কেজি প্রতি দাম ছিলো ৩২০ টাকা। এখন দাম বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি ৩৬০ টাকা। জিরা ছিলো কেজি প্রতি ২৯০ টাকা। তবে দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২১০ টাকা। জিরা এখন ৫০০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। তেমনি লং এর দাম বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি ১২০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও দাম ছিলো ১ হাজার টাকা।

উর্দ্ধমুখী দাম এলাচের। এলাচের কেজি ৪ হাজার টাকা। তবে কিছুদিন আগেও দাম ছিলো ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এখন এলাচ ৪০০ টাকা সোয়া হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে। মশলা ছাড়াও দাম বেড়েছে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের। পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম তুলনামুলক গত রমজানের তুলনায় অনেক বেশি। পোঁয়াজের দাম ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। তবে কিছুদিন আগেও দাম ছিলো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। রসুন আগে ছিলো ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। তবে এখন দাম বেড়ে হয়েছে ১৪০ টাকা।

বাড়তি দাম আদারও। আদা আাগে ছিলো ২৪০ টাকা। তবে দাম বেড়ে হয়েছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি। শুকনো মরিচের দাম এখন কেজি প্রতি ৪০০ টাকা। তবে কয়েকদিন আগেও ছিলো দাম ৩৫০ টাকা। দাম কম নেই হলুদ গুড়াও। হলুদ গুড়া ১৯০ টাকা কেজি থেকে ২০০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

আদা, রসুনের মতো বাড়তি দাম বিভিন্ন সবজির। ঝিঙ্গা এখন কেজি প্রতি ৫০ টাকা। তবে কিছুদিন আগের দাম ছিলো ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। ক্রেতাদের লেবু কিনতে হচ্ছে দ্বিগুণ দামে। লেবুর দাম ২০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৪০ টাকা হালি হয়েছে। টমেটো ছিলো ১০ থেকে ২০ টাকা। এখন হয়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। পটলের দাম ছিলো ২০ থেকে ২৫ টাকা। তবে এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। বাড়তি দাম গাজরেরও। গাজরের দাম কিছুদিন আগে ছিলো ২০ থেকে ২৫ টাকা। তবে এখন দাম বেড়েছে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। শসার দাম ছিলো ২০ থেকে ৩০ টাকা। এই রমজানে দাম বেড়ে হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজিতে।

সবজির মতো বাড়তি দাম মাছ ও মাংসেরও। পাঙ্গাস মাছ ১৭০ টাকা কেজি ছিলো। তবে এখন ১৮০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। পাবদা মাছ একদিন আগেও ছিলো ৩২০ টাকা। তবে শনিবার দাম বেড়ে হয়েছে ৪০০ টাকা। মৃগেল মাছের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকা করে। এখন এই মাছ ১৪০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

দাম বেড়েছে মাংসেরও। ব্রয়লারের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫ টাকা করে। কয়েকদিন আগেও দাম ছিলো কেজি প্রতি ১২০ টাকা। তবে রমজানের প্রথম দিনে ১২৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছেন বিক্রেতারা। গরুর মাংস ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে কেজি প্রতি ৪৪০ থেকে ৪৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে কয়েকদিন আগও দাম ছিলো কেজি প্রতি ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকা পর্যন্ত। একদিনের ব্যবধানইে দাম বেড়েছে ডিমের। ডিম ২৫ টাকা হালি থেকে এখন হয়েছে ২৮ টাকা। রোজায় এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাথে দাম বেড়েছে বিভিন্ন রকমের ইফতারী পণ্যেরও।

বিভিন্ন ধরনের পাপড় এর দাম বেড়েছে ১০ টাকা করে। আগে দাম ছিলো ৫০ টাকা। তবে এখন দাম বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। কিশমিসের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ৫০ টাকা করে। আগে দাম ছিলো ৩৫০ টাকা। তবে এখন দাম হয়েছে ৪০০ টাকা। রুহ আফজা’র দাম ছিলো ২৩০ টাকা। তবে এখন দাম বেড়ে হয়েছে ২৫০ টাকা।

নগরীর সাহেববাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, এখন আমদানি কম। তাই সবকিছুর দামই বেশি। কিছু কিছু পণ্য তো পাওয়ায় যাচ্ছে না। তিনি বলেন, রমজানে বুনদিয়ার চাহিদা বেশি। কিন্তু বুনদিয়া এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। আমদানি বাড়লে দাম হয়তো কমে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রমজানের প্রথম দিন নগরীর মাস্টারপাড়ায় বাজার করতে এসেছিলেন আহসান হাবীব। তিনি জানান, গতবারের রোজার তুলনায় এবার সবকিছুর দাম অনেক বেশি। এখন বেশিরভাগ মানুষের আয় কমে গেছে। কিন্তু বাজারে কোন পণ্যের দাম কমেনি। সব কিছুর দামই বেশি। দাম কমলেই স্বস্তি পাওয়া যাবে। এখন রোজা ও করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা দরকার।

এদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে রোজার প্রথম দিন বাজার মনিটরিং করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফ জানান, হয়, মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন না করার অপরাধে জরিমানা করা হচ্ছে।