রাজশাহীতে বেপরোয়া মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:

গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে রাজশাহী নগরীর অভিযান উপশহর এলাকার এক নম্বর সেক্টরে অবস্থিত ব্লু-বার্ড কোচিং সেন্টার থেকে বের হয় জাকিয়া সুলতানা নামের এক স্কুলছাত্রী। নবম শ্রেণির এ ছাত্রী কোচিং সেন্টার থেকে বের হয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে রাস্তা এসে দাঁড়ায় রিকশার জন্য।

ঠিক ওই মুহূর্তে দুজন মোটরসাইকেল আরোহী এসে জাকিয়া সুলতানাকে ছুরি দিয়ে আঘাতের ভয় দেখিয়ে তার হাতে থাকা এনড্রয়েড মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগে হঠাৎ করে এমন ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে ওই ছাত্রী অনেকটায় ভেঙে পড়ে। পরে স্থানীয়রা এসে তাকে রিকশা ডেকে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

শুধু এই ঘটনাটিই নয়, এভাবে প্রায় প্রতিদিন রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ছেন পথচারীরা। বলা যায়, নগরীতে আবারো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারীরা। গত কিছুদিন রাত-দিন সমানে চলছে ছিনতাইকারীদের দাপট। বিশেষ করে দামি মোটরসাইকেল নিয়ে এসব ছিনতাইকারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যাচ্ছে। এদের দাপটে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে কেউ কেউ হারাচ্ছেন স্বর্বস্ব।

ভুক্তভোগীদের অধিকাংশ নতুন করে হয়রানির ভলে থানায় মামলা বা অভিযোগও করছেন না। তার পরেও ছিনতাইয়ের ঘটনায় নগরীতে বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে। কিন্তু সেগুলো আলোর মুখ দেখছে না। ফলে ধরা পড়ছে না ছিনতাইকারীরা।

ছিনাইকারীদের কবলে পড়ে ছাত্রী জাকিয়া সুলতানার বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আবু তাহের বলেন, ‘মেয়ের মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনার পরে বাড়িতে এসেও কাঁদতে থাকে আতঙ্কে। এই ধরনের ঘটনা রাস্তা-ঘাটে ঘটলে ছেলে-মেয়ে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে যাবে কিভাবে?

আবু তাহের জানান, তিনিও গত ৩১ আগস্ট ছিনাতাইয়ের কবলে পড়েছিলেন। ঢাকা থেকে রাত ১২টার দিকে রাজশাহীতে এসে রিকশা করে তোরাখাদিয়া এলাকায় তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে নামেন। ঠিক ওইসময় দু’জন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলযোগে গিয়ে তার ওপর হামলার চেষ্টা করে। এসময় তাঁর কাছে ছেলের চিকিৎসার জন্য বেশকিছু টাকাও ছিল একটি ব্যাগে।

তিনি বুদ্ধি করে সেই ব্যাগটি পানিতে ফেলে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছিনতাইকারীরা আবু তাহেরকে ছুরি দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করেন। কিন্তু বিষয়টি টের পেয়ে তিনি চিৎকার দিলে আশে-পাশের লোকজন বের হয়ে আসেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে তখন ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যায়।

আবু তাহের বলেন, দুটি ঘটনা নিয়ে তিনি থানা পুলিশকে শুধু ফোনে জানিয়েছেন মাত্র। তবে এ নিয়ে পরবর্তি হয়রানির ভয়ে মামলা করেননি।

এদিকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী নগরীর পার্ক গেট এলাকায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পিস্তল ঠেকিয়ে এক নারীর সাড়ে চার লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুই মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারী। পরে ওই নারী নগরীর রাজপাড়া থানায় অজ্ঞাত দু’জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। তার নাম রাইয়ানা রহমান। তিনি নগরীর ভেড়িপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তারা স্বামী ঢাকায় একটি বেসরকারী কম্পানীতে চাকরি করেন।

ওই নারী তার অভিযোগ করেন, তিনি বাসা থেকে টাকা নিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক রাজশাহী শাখায় যান। তবে কিছু সমস্যার কারণে নগরীর কাজিহাটা এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঞ্চয়পত্র না কিনে আবার বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। এসময় বাড়ির সামনে পেছন থেকে এসে দু’জন মোটরসাইকেল আরোহী তাঁকে পিস্তল ঠেকিয়ে ভ্যানেটি ব্যাগসহ টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।

বিষয়টি স্বীকার করেন রাজপাড়া থানার ওসি হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ঘটনাটি এখনো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এর সাথে কারা জড়িত থাকতে পারে-তা বের করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার ককরা যায়নি।

নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকার চা দোকানদার দুলাল হোসেন বলেন, রাজশাহীর উপশহর থেকে তেরোখাদিয়া স্টেডিয়ামের এই রাস্তাটিতে প্রায় পথচারীদের পথরোধ করে ছিনতাইকারীরা মোবাইল থেকে শুরু করে টাকা-পয়সা কেড়ে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। কিন্তু কখনো কোনো ছিনতাইকারী আটক হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

স্থানীয়রা জানায়, নগরীর রেলগেট থেকে বহরমপুর মোড়ের রাস্তা এবং ফায়ার ব্রিগেড রাস্তাটিতেও প্রায় ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। অধিকাংশ সময় দামি মোটরসাইকেল আরোহী যুবকরাই এসব ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত হতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু তাদের ধরতে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না বলে দাবি করেন ওই এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র ইফতে কায়ের আলম বলেন, ‘নগরীতে প্রায় কিছু ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। আমরা এরই মধ্যে কয়েকজনকে আটকও করেছিল। কিন্তু এখনো এসব ঘটনা ঘটেই চলেছে। তবে পুলিশ ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে ব্যস্থা নিতে তৎপর রয়েছে।’ পাশাপাশি স্থানীয়দেরও এ বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিতে আহ্বান জানান ওই কর্মকর্তা।

আরকে প্রশ্নের জবাবে ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘আমরা মোটরসাইকেলগুলো নিয়মিত তল্লাশি করছি। মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চৌকি বসানো হচ্ছে। তার পরেও অধিকাংশ সময়ই সন্ধ্যার পরে এসব ঘটনা ঘটছে।’

স/আর