রাজশাহীতে বিশ্ব মুগুর পা দিবস উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
ক্লাবফুট বা পায়ের পাতার অভিশাপ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে র‌্যালি মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস। রোববার অর্থোপেডিকস্ সার্জারী বিভাগ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও গ্লেনকো ফাউন্ডশেন ”ওয়াক ফর লাইফ” প্রকল্প এর উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয় ।

সকালে হাসপাতালের মেইন গেট থেকে হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. জামিলুর রহমান এর নেতৃত্বে ক্লাবফুটের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়া অনেক শিশু ও তাদের বাবা মায়েদের সাথে নিয়ে একটি র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশ প্রদক্ষিণ করে বহিঃবিভাগ গেট গিয়ে শেষ হয়।

র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ এম.এ.কে সামস্উদ্দিন, বিভাগীয় প্রধান- অর্থোপেডিক বিভাগ; অর্থোপেডিক বিভাগের সম্মানিত অধ্যাপকবৃন্দ ও চিকিৎসকবৃন্দ সহ আরও অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। এছাড়াও দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশন ওয়াক ফর লাইফ প্রকল্পের রাজশাহীতে কর্মরত সকল কর্মকতা ও কর্মচারীবৃন্দ উক্ত র‌্যালীতে অংশগ্রহন করেন।

ক্লাবফুট একটি জন্মগত শারীরিক সমস্যা যেখানে শিশুর পায়ের পাতা ভিতরের দিকে বাঁকানো থাকে এবং বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০০০ হাজার শিশু এই জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সঠিক সময়ে এটার চিকিৎসা না করালে শিশু সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। পনসেটি মেথড এর মাধ্যমে এর সহজ ও সঠিক চিকিৎসা হয়ে থাকে। আমেরিকান অর্থোপেডিক সার্জন ডা. ইগনেসিও পনসেটি বহু গবেষনার মাধ্যমে এ পদ্ধতিটি আবিস্কার করেন। তার এ আবিস্কারকে স্মরণীয় রাখতে সমগ্র বিশ্বব্যাপী তার জস্মদিন ৩রা জুন কে বিশ্বক্লাবফুট দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ওয়াক ফর লাইফ প্রকল্পটি ১লা মে, ২০১০ইং সাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ বর্হি বিভাগের রুম নং-৩২ এ ক্লাবফুট (মুগুর পা) শশিুদের বিনামূল্যে চকিৎিসা প্রদান করে আসছে। হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডাঃ এম.এ.কে শামস্উদ্দিনের তত্বাবধান ও সার্বিক সহযোগিতায় এবং সহঃ অধ্যাপক ডাঃ ওবায়দুল হকের তত্বাবধানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপালে ওয়াক ফর লাইফ এর ক্লাবফুট ক্লিনিকটিতে ১১৫৫ জন শিশুর ক্লাবফুট বা মুগুর পা চিকিৎসার আওতাভুক্ত করেছে। সপ্তাহে প্রতি রবি,মঙ্গল ও বৃহস্পতিরার হাসপাতালের বহিঃবিভাগের অবস্থিত ওয়াক ফর লাইফ ক্লিনিকটিতে বিনামূল্যে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. জামিলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে একটি শিশুকেও যেনো ক্লাবফুটের সমস্যা নিয়ে বেঁচে থাকতে না হয়। এটা যে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হয় তা মানুষকে জানাতে হবে। ক্লাবফুট বা বাঁকা পা নিয়ে জন্মানো শিশুদের চিকিৎসাসেবায় এ হাসপাতালের পক্ষে যা যা করা সম্ভব তার সবকটুই এ করা হবে। তিনি ওয়াক ফর লাইফ এর উদ্দ্যেগকে স্বাগত জানান।

দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি জানান, ২০০৯ সাল থেকে মে ২০১৮ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে বাঁকা পা বা ক্লাবফুট নিয়ে জন্ম নেয়া ২১৮০০ শিশুর পা চিকিৎসার আওতাভুক্ত করে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং অস্ট্রেলিয়ান দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশনের ওয়াক ফর লাইফের প্রকল্পের সহায়তায় এ চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে এবং এ মহতী চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমটি এখনো সমগ্র দেশব্যাপী ২৯ জেলায় অব্যাহত রয়েছে। সংস্থাটি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্লাবফুট এর প্রতিবন্ধকতা মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

সব বাবা মায়েরই ইচ্ছে থাকে তাদের প্রত্যাশিত শিশুটি সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিবে। কিন্তু প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে সবসময় সম্মিলন হয়না। প্রতিবন্ধক হয় জন্মগত প্রতিবন্ধিতা। নবজাতক শিশুর জন্মগত ত্রুটি হিসেবে যে কয়েকটা সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে ক্লাবফুট (মুগুর পা) বা পায়ের পাতা বাঁকা সমস্যা অন্যতম।

ক্লাবফুট বা “মুগুর পা” নিয়ে জন্মানো কোন শিশুকে যেন সুচিকিৎসার অভাবে প্রতিবন্ধী জীবনের শিকার না হতে হয় এবং বাংলাদেশে ক্লাবফুট নিয়ে জন্মানো সকল শিশুদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ও তথ্যদানের মাধ্যমে শিশুর তিন বছর বয়স পেরোনোর আগেই চিকিৎসা নিশ্চিত করাই ছিল মূলত এ দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য।
স/শ