রাজশাহীতে বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী ডায়াবেটেকি এসোসয়িশেন জেনারেল  হাসপাতাল এর সামনে ক্লাবফুট মুক্ত শিশুদের আনন্দ উৎসবে আজ মুখরিত। কে বলবে এসব শিশুরাই একদিন জন্মগত বাঁকা পা নিয়ে জন্মেছিল। ওয়াক ফর লাইফ উদ্দ্যেগে এ চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে এবং এ মহতী চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমটি সমগ্র দেশব্যাপী ২৯ জেলায় অব্যাহত রয়েছে।

ক্লাবফুট একটি জন্মগত শারীরিক সমস্যা যেখানে শিশুর পায়ের পাতা ভিতরের দিকে বাঁকানো থাকে এবং বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪০০০ হাজার শিশু এই জন্মগত ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সঠিক সময়ে এটার চিকিৎসা না করালে শিশু সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।

ক্লাবফুট বা পায়ের পাতার অভিশাপ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে রাজশাহী ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন জেনারেল হাসপাতালে একটি র‌্যালির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে বিশ্ব ক্লাবফুট দিবস। বৃহস্পতিবার( ০৩ জুন ) রাজশাহী ডায়াবেটিক এসোসিয়েশন জেনারেল হাসপাতাল ও দি গ্লেনকো ফাউন্ডশেন ”ওয়াক ফর লাইফ” প্রকল্প এর উদ্যোগে এটি আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর দিবসটি প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ” সঠিক পনসেটি চিকিৎসায়, ক্লাবফুট সম্পূর্ন ভাল হয়”।

উৎসবমূখর এ র‌্যালীটি ক্লাবফুটের অভিশাপ থেকে মুক্ত হওয়া অনেক শিশু ও তাদের বাবা মায়েদের সাথে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অর্থোপেডিক সার্জারী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা: আলমগীর হোসন, সহকারী অধ্যাপক ডা: অবাইদুল হক, রাজশাহী ডায়াবেটিক এসোসিয়েশেন জেনারেল হাসপাতাল এর ডেপুটি ডিরেক্টর মো. মামুনুর রহমানসহ উক্ত হাসপাতালরে চিকিৎসকবৃন্দ, ও দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশন ওয়াক ফর লাইফ প্রকল্পের রাজশাহীতে কর্মরত সকল কর্মকতা ও কর্মচারীবৃন্দ উক্ত র‌্যালীতে অংশগ্রহণ করেন।

র‌্যালীর শুরুতে অতিথিবৃন্দ জন্মের পরপর চিকিৎসা শুরুর গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন। এছাড়া অত্র এলাকায় ক্লাবফুট নিয়ে জন্মানো সকল শিশুরা যাতে জন্মের সাথে সাথে চিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারে তার জন্য হাসপাতালের পক্ষে যা যা করা প্রয়োজন তার সবকটুই এ করা হবে। এটা যে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো হয় তা মানুষকে জানাতে হবে। ক্লাবফুট চিকিৎসায় কার্যক্রমে ওয়াক ফর লাইফ এর অবদানের জন্য সংস্থাটিকে ধন্যবাদ জানান।

রাজশাহী ওয়াক ফর লাইফ এর ক্লাবফুট চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয় ২০১০ সালের মে মাসে এবং শুরু থেকে এ পর্যন্ত অর্থাৎ ১ মে ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত শুধু এ ক্লিনিকটিতে প্রায় ১৫৩৫ অধিক জন শিশুর ক্লাবফুট বা মুগুর পা “ওয়াক ফর লাইফ”তাদের চিকিৎসার আওতাভুক্ত করেছে। সপ্তাহে প্রতি রবি,মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার হাসপাতালের ২২০নং রুমে অবস্থিত ওয়াক ফর লাইফ ক্লিনিকটিতে এ চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। অর্থোপেডিক সার্জারী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ওবায়দুল হক এর তত্বাবধানে ও সার্বিক সহযোগিতায় এ ক্লাবফুট ক্লিনিকটি পরিচালিত হয়

দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মো. মেহেদী হাসান জানান, ২০০৯ সাল থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে বাঁকা পা বা ক্লবফুট নিয়ে জন্ম নেয়া ২৮০০০ শিশুর পা চিকিৎসার আওতাভুক্ত করে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং অস্ট্রেলিয়ান দি গ্লেনকো ফাউন্ডেশনের ওয়াক ফর লাইফের প্রকল্পের সহাতায় এ চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে এবং এ মহতী চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমটি এখনো সমগ্র দেশব্যাপী ২৯ জেলায় অব্যাহত রয়েছে। সব বাবা মায়েরই ইচ্ছে থাকে তাদের প্রত্যাশিত শিশুটি সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিবে। কিন্তু প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে সবসময় সম্মিলন হয়না। প্রতিবন্ধক হয় জন্মগত প্রতিবন্ধিতা। নবজাতক শিশুর জন্মগত ত্রুটি হিসেবে যে কয়েকটা সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে ক্লাবফুট (মুগুর পা) বা পায়ের পাতা বাঁকা সমস্যা অন্যতম। ক্লাবফুট বা “মুগুর পা” নিয়ে জন্মানো কোন শিশুকে যেন সুচিকিৎসার অভাবে প্রতিবন্ধী জীবনের শিকার না হতে হয় এবং বাংলাদেশে ক্লাবফুট নিয়ে জন্মানো সকল শিশুদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ও তথ্যদানের মাধ্যমে শিশুর তিন বছর বয়স পেরোনোর আগেই সঠিক পনসেটি পদ্ধতির চিকিৎসা নিশ্চিত করাই ছিল মূলত এ দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য।

স/জে