রাজশাহীতে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের পর দফায় দফায় সন্ত্রাসী হামলা


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীতে বাড়িঘর ভাঙচুর এবং লুটপাটের পর এবার দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর থেকে পর্যন্ত বেশ কয়েক দফা হামলার এ ঘটনা ঘটেছে। নগরীর চণ্ডিপুর এলাকায় এ ঘটনায় হামলার শিকার লোকজন চরম আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

গত সোমবার বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের পর থেকে সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা শোডাউন করায় এলাকাবাসীও রয়েছেন নিরাপত্তাহীনতায়। মঙ্গলবার দুপুরে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত দুই নারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার চণ্ডিপুর এলাকার বাসিন্দা হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শরিফুজ্জামান তার বাড়ি ভিটার সংস্কার কাজ করছিলেন। এসময় প্রতিবেশি শামীম তাকে বাধা দেন। এ ঘটনায় উভয়ের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। একপর্যায়ে শামীম, তার ভাই টনি, মনি, আপন চাচাত ভাই জনি এবং সজিবসহ ৮-১০ জন সন্ত্রাসী দেশীয় ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোটা নিয়ে শরিফুজ্জামানের বাড়িতে হামলা চালায়।

এসময় শরিফুজ্জামানের মামা শশুর প্রতিবেশি বাবর আলী এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তার ওপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসীরা বাবর আলীর বাড়ির গেট, দরজা এবং বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। লুট করে নগদ টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কার। সন্ত্রাসীরা এসময় বাবর আলীর স্ত্রী আলেয়া বেগম এবং বাড়ির অন্য নারীদের ওপর হামলা চালায় এবং শ্লীলতাহানি ঘটনায়। এ ঘটনায় আহত বাবর আলী এবং তার স্ত্রী আলেয়া বেগম প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।

এরপর রাতে শরিফুজ্জামানের আরেক মামা শশুর হাজী আব্দুস সবুর বাড়ি ফেরার সময় তার ওপর আরেক দফা হামলা চালায় শামীম এবং তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় শরিফুজ্জামানের শ্যালিকা সেলিনা পারভীন নগরীর রাজাপাড়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এ ঘটনার জের ধরে মঙ্গলবার সকালে শামীম, তার ভাই টনি এবং সনিসহ আবারও বাবর আলীর বাড়িতে হামলা চালায়। এরপর ঘটনা¯’লে পুলিশ আসলে সন্ত্রাসীরা আশেপাশের এলাকায় আত্মগোপন করে। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ চলে গেলে শামীম এবং তার ভাই টনির নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা বাবর আলীর বাড়িতে আবারও হামলা চালায়।

এসময় তারা বাড়ির দরজা-জানালাসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। শামীমের ভাই টনি এ সময় বাবর আলীর বোন উম্মে হানু (৫২) এবং আরেক বোন মৃত সানোয়ারা বেগমের মেয়ে সেলিনা পারভীনকে (৪০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে কোপায়। এরপর আহতদের উদ্ধার করে হাজী আব্দুস সবুর ও তার ছেলে রাজশাহী ইনস্টিটিউট অফ হেলফ টেকনোলজি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকের পথরোধ করে মারপিট করে শামীম ও তার সহযোগীরা। আহত ছাত্রলীগ নেতা ওমর ফারুক প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। আহত উম্মে হানু এবং সেলিনা পারভীনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রামেক হাসপাতালের ৭ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

পরিবারের সদস্য এবং নিকটাত্মীয়দের নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হাজী আব্দুস সবুর বলেন, গত সোমবার থেকে আমার ভাই এবং ভাগ্নি (বোনের মেয়ে) জামাইয়ের বাড়িতে কয়েক দফা হামলা হয়েছে। সোমবারের হামলায় আমার ভাই বাবর আলী এবং তার স্ত্রী আলেয়া বেগম আহত হয়েছেন। মঙ্গলবারের হামলায় আমার বোন, ভাগ্নি ও ছেলে আহত হয়েছে। এই দুই দিনে আমাদের দুই বাড়িতে ব্যাপক হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারী টনি ও সনি চাঞ্চল্যকর ডাবলু হত্যামামলার আসামি। কয়েক দফা হামলার পরেও তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দি”েছ। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি। এ ঘটনায় আমি মামলা দায়েরের প্রস্ততি নিচ্ছ।

এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, পুলিশ হামলার বিষয়ে অবগত আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখছি। অপরাধীরা কেউ ছাড় পাবে না। তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। আর হামলার শিকার যারা হয়েছেন, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।

এস/আই