বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষ : ঘাতক বাসচালক গ্রেপ্তার, নিহত ১৭ জনের লাশ হস্তান্তর

হানিফ পরিবহনের বাসচালক আব্দুর রহিম

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে হানিফ পরিবহনের একটি বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে মাইক্রোবাসে থাকা গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ১৭ জনের মরদেহ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।শনিবার (মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগার থেকে শোকে হতবিহ্বল স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তর করা হয়। তার পরপরই লাশ নিয়ে তারা রংপুরের পীরগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এদিকে ঘাতক হানিফ পরিবহন নামক ওই বাসের চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার দুপুর ২টার দিকে পুঠিয়া উপজেলার মাহিন্দ্র বাইপাস থেকে কাটাখালি থানা পুলিশ ওই বাসচালককে গ্রেপ্তার করে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস। গ্রেপ্তারকৃত বাস চালকের নাম আব্দুল রহিম। তিনি পুঠিয়া উপজেলার বাড়ইপাড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে।

গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, শুক্রবার রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহতের ঘটনায় হানিফ বাসের চালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। কাটাখালি থানার এসআই নুর মোহাম্মদ বাদি হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ১৭ জনকে হত্যা ও কয়েকজন জখমের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই মামলায় বাস চালক আব্দুর রহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অপরদিকে সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু আসলামকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে তাদের দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল।

তিনি বলেন, নিহতদের দাফনের জন্য প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছে। এছাড়াও লাশ তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালি থানার সামনে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি বাসের (ঢাকা মেট্রো-ব ১৫-৩৮১০) সঙ্গে রংপুর থেকে রাজশাহী অভিমুখী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে মাইক্রোবাসটি গ্যাস সিলিণ্ডার বিস্ফোরণ হওয়ায় মূহুর্তের মধ্যেই এতে আগুন ধরে যায়। কালো রংয়ের হাইস মাইক্রোবাসটিতে চালকসহ ১৮ জন যাত্রী ছিল। শুধু পাভেল (২৭) নামের এক যুবক ব্যতিত বাকি সবাই মারা যায়। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জের ডারিকাপাড়া গ্রামে মোখলেসুর রহমানের (৪৮) ছেলে। সড়ক দুর্ঘটনায় মোখলেসুর রহমান ও তার স্ত্রী পারভীন বেগমও (৪৫) মারা গেছেন।

জানা গেছে, মাইক্রোবাসের ১১ জন যাত্রী আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। বাস-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাসটি দুমড়েমুচড়ে যাওয়ায় ৭ যাত্রী মাইক্রোবাস থেকে ছিটকে দূরে পড়ে। এজন্য তাদের শরীর পুড়ে না গেলেও শুধু পাভেল ছাড়া বাকি ৬ জনই মারা যায়। তবে পাভেলের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাকে রামেক হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।

সঙ্গে সংঘর্ষের পর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মাইক্রোবাসে আগুন গেলে যায়। এতে হাইস্ট মাইক্রোবাসের ১৭ যাত্রী পুড়ে মারা যান। ওই মাইক্রোবাসে ১৮ জন যাত্রী ছিলেন। আহত একজন হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার নাম পাভেল (২৭)।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অন্যরা হলেন- রাঙ্গামাটি গ্রামের মো. সালাহউদ্দিন (৩৬), তার স্ত্রী শামসুন্নাহার (২৫), তাদের ছেলে সাজিদ (৮), মেয়ে সাফা (২), শামসুন্নাহারের বড় বোন কামরুন্নাহার (৩৭), উপজেলা সদরের মো. ভুট্টু মিয়া (৪০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (৪০), ছেলে ইয়ামিন (১৫), বড় মজিদপুর এলাকার ফুল মিয়া (৪০), তার স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫), ছেলে ফয়সাল (১৫) এবং মেয়ে সুমাইয়া (৮) ও সাবিহা (৩), দুরা মিঠিপুরের ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম (৪৬) এবং মাইক্রোবাসের চালক মো. হানিফ (৩০)। হানিফের বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার পঁচাকান্দ গ্রামে। নিহতরা সবাই রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসযোগে হযরত শাহ মখদুম (রহ.) এর মাজার জিয়ারতসহ রাজশাহীর দর্শণীয় স্থান ঘুরতে আসার কথা ছিল।

এএইচ/এস