রাজশাহীতে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী নগরীর মমতা নার্সিং ইন্সটিটিউট নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ওই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতাদেরই ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের তাড়িয়ে দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ভূক্তভোগীরা পুলিশের মহাপরিদর্শক ও রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার কাছেও লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমেছেন পুলিশ সদর দপ্তর ও রাজশাহী মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলকারী ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী। তিনি ঢাকায় পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) দায়িত্বরত পুলিশ সুপার। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সম্মানিক চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। এই পদে থেকেই এবং পুলিশের দাপট দেখিয়ে এখন গোটা প্রতিষ্টানটি দখলে রেখেছেন বলেও অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে।

তাঁদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা মনিরুজ্জামান উদ্যোক্তা পরিচালক ও শবনম মোস্তারি মমি কোষাধ্যক্ষ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউট নামের প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীতে চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার জন্য সমস্ত টাকা পয়সাও তাঁরাই বিনিয়োগ করেন। ওইসময় পরিচয় সূত্রে বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীকে অবৈতনিক ও সম্মানিক চেয়ারম্যান হিসাবে প্রতিষ্ঠানে সংযুক্ত করা হয়। মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউটটি ২০১৬ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিলে একাডেমিক অনুমোদন লাভ করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে তিন ব্যাচে মোট ১৫০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত।

অভিযোগে আরও জানা যায়, স্থান সঙ্কটের কারণে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউটটি নগরীর বহরমপুর বাইপাস থেকে সরিয়ে বালিয়াপুকুরে এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর ডেভেলপার ভবন জার্মিনেট প্লাজায় ভাড়ায় চুক্তিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকেই এসপি আব্দুর রহিম প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অর্ধেক শেয়ার চুক্তির মাধ্যমে হস্তান্তরের জন্য ক্রমাগতভাবে চাপ দিতে থাকেন। ওই সময় উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে দাবিকৃত শেয়ারের আনুপাতিকহারে বিনিয়োগ করার জন্য বলেন।

কিন্তু তাতে এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী রাজি হননি। বরং ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত দুই বছরে আয়কৃত অর্থের সমান ভাগও দাবি করেন তিনি। এই নিয়ে পরিচালকদের সঙ্গে এসপির মতবিরোধ তৈরি হয়। ফলে উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান ছাড়ার জন্য ভয়-ভীতি দেখাতে শুরু করেন তিনি। উপরন্ত ২০১৮ সালের নভেম্বরে এসপি তার লোকজন দিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে তালা মেরে ক্লাশ পরীক্ষা বন্ধ করে দেন।

এদিকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এসপি ক্ষমতার অপব্যবহার করে হিমালয় রায় নামের একজন অনভিজ্ঞ লোককে মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউটের অধ্যক্ষ নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে এসপি রহিম নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে দখলকৃত প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিলবোর্ড স্থাপন ও লিফলেট বিতরণ করেন। সেই থেকে এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউটে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও অন্যান্য আনুসঙ্গিক খাত থেকে পাওয়া সকল আয় একাই ভোগ করছেন। অন্যদিকে উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রতিষ্ঠানতে যেতে দিচ্ছেন না।

অভিযোগ মতে, মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও উদ্যোক্তা শবনম মোস্তারি মমিকে, এসপি রহিম গালাগালি ছাড়াও শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেন ও মামলা দিয়ে গ্রেফতার করারও হুমকি দেন। মমি এই বিষয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রতিকার চেয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে মমি আরও বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মমতা নার্সিং ইনিষ্টিটিউটে এসপি রহিম শাহ চৌধুরী তার প্রতিপক্ষ পরিচালক মুনিরুজ্জামান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শবনম মোস্তারি মমিকে সমঝোতার করার নাম করে ডাকেন। আলোচনার ব্যর্থ হলে এসপি রহিম ব্যবস্থাপনা পরিচালক মমিকে অশালীন কথাবার্তা বলেন এবং শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করেন। স্থান ত্যাগ করার সময় এসপি রহিম প্রতিপক্ষদের হুমকি দেন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করার। সেই থেকে মমি ভীতি ও শঙ্কার মধ্যে বসবাস করছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে এসপি আবদুর রহিম শাহ চৌধুরী বলেন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি চলবে-এমন শর্তে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে সম্পূর্ণ অবৈতনিক চেয়ারম্যান হিসেবে যুক্ত হন এবং নিজের মালিকার একটি ভবন ভাড়া হিসাবে ব্যবহার করতে দেন। তবে পরিচালক মনিরুজ্জামান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শবমন মোস্তারি মমি প্রতিষ্ঠানের টাকা আত্মসাৎ করেন ও তাকে বাড়িভাড়ার টাকা না দিয়ে বিভিন্ন অনিয়মে জড়িয়েছেন। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে নার্সিং কাউন্সিলের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদ থেকে মনিরুজ্জামান ও শবনম মোস্তারি মমিকে বাদ দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।

অন্যদিকে পুলিশের একজন উর্ধ্বতন নাম প্রকাশ না করে বলেন, এসপি রহিম শাহ চৌধুরী পুলিশের পদে থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকা- পরিচালনা করতে পারেন না। এর বাইরে তার বিরুদ্ধে রাজশাহীতে নিজ নামে ডেভেলপার কোম্পানি পরিচালনাসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনারও অভিযোগ রয়েছে। এসব করতে গেলে তাকে চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে করতে হবে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বাড়ি নওগাঁ জেলার পোরশা এলাকায়। ঢাকা ও রাজশাহীতে তাদের একাধিক বাড়ি-ভবন রয়েছে।

 

স/আর