রাজশাহীতে পিস্তল হাতকড়াসহ চার প্রতারক গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীতে অপহরণ করে চাঁদা আদায় চক্রের মূল হোতাসহ ৪ জন প্রতারককে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর ডিবি পুলিশ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ওই চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ শনিবার(২৭ ফেব্রুয়ারি)  সকালে সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী মহানগর পুলিশ বিস্তারিত জানায়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন-প্রতারক চক্রের মূল হোতা রাজশাহীর চারঘাট থানাধীন  সাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিপাহী মো.মনোয়ার হোসেন(৩৬)। পটুয়াখালী জেলার রাংগাবালী থানাধীন মো. তুহিন সরকার(৩২),রাজশাহীর চারঘাট থানাধীন মোসা. সেলিনা আক্তার সাথী(২৫) ও মো. খাইরুল ইসলাম(২৬)।
সংবাদ সম্মেলনে জানা যায়,  ২৫ ফেব্রুয়ারি ১২ টায় ভূক্তভোগী অগ্রণী ব্যাংক চারঘাট শাখার ম্যানেজার বকুল কুমার সরকার(৩৩) সহকর্মী জনাব নিপেন্দ্র নাথ সরকারের বিকাশের টাকা দেয়ার বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় তিনি ডিবি অফিসে আসেন  এবং তথ্য দেন।

তার দেয়া  তথ্য মতে, পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিকের দিক নির্দেশনায় উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. আরেফিন জুয়েলের  এর সার্বিক তত্বাবধানে সহকারী পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মো. রাকিবুল ইসলাম এর নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. আবুল কালাম আজাদ, এসআই/মো. আমিনুর রহমান সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সসহ মহানগর ডিবি পুলিশের বিশেষ টিম  মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালান।

এ অভিযান চালিয়ে কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন হড়গ্রাম কোর্টবাজার চৌরাস্তা সংলগ্ন প্রতারকদের ভাড়াবাসার সামনের রাস্তা হতে ভূক্তভোগীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। প্রতারক চক্রের নেওয়া ভাড়াবাসার মালিক জানান, প্রতারকরা প্রায় এক মাস যাবত বাসা ভাড়া নিলেও নিয়মিত বাসায় থাকে না।

গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, মূল পরিকল্পনাকারী মো. মনোয়ার হোসেন অপর প্রতারক চক্রের সদস্য মোসা. সেলিনা আক্তার  সাথীকে নিজের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে গত  ২৬ জানুয়ারি  কাশিয়াডাঙ্গা থানাধীন মো. রিয়াজুল ইসলামের বাসার তৃতীয় তলা ভাড়া নেন। পরবর্তীতে  সেলিনা আক্তার সাথীর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভূক্তভোগী বকুল কুমার সরকারকে  প্রেমের ফাঁদে ফেলে গত  ২৫ ফেব্রুয়ারি উক্ত  ভাড়া বাসায় কৌশলে ডেকে নেয় ।এবং পার্শ্বের কক্ষে লুকিয়ে থাকা অপর প্রতারক চক্রের সদস্যদের সংকেত দিয়ে রুমে ঢুকিয়ে নেয়। ঐ সময় প্রতারক মনোয়ার ডিবি পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে, প্রতারক তুহিন সাংবাদিক এবং প্রতারক খাইরুল ডিবি পুলিশের সদস্য পরিচয় দিয়ে ভূক্তভোগীকে গ্রেফতারের হুমকী দেয়। প্রতারক খাইরুল ভূক্তভোগীর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয় এবং প্রতারক মনোয়ার ভূক্তভোগীর পিছনে নকল পিস্তল ঠেকিয়ে বলে,“তোর কাছে যা আছে দিয়ে দে নইলে গ্রেফতার করে মেয়েসহ কোর্টে চালান করে দিব।” অপর পক্ষে প্রতারক তুহিন ভূক্তভোগীকে টাকা না দিলে মেয়েসহ তার ছবি সংবাদ পত্রে প্রকাশ করে দিবে বলে হুমকী দেয় এবং মারধর করে।

পরিস্থিতি অনুকূলে দেখে  ভূক্তভোগী জীবন বাঁচাতে তার পকেটে থাকা নগদ ২৬ হ্জার টাকা মুক্তিপন ও চাঁদা হিসেবে প্রতারক চক্রের সদস্যদের দিয়ে দেয়। এছাড়াও ভূক্তভোগীর নিজের মোবাইল ফোন দিয়ে তার পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের নিকট হতে বিকাশের মাধ্যমে মোট-৪৪ হাজার টাকা এনে মুক্তিপন ও চাঁদা হিসাবে দিয়ে দেয়।

উক্ত বিকাশ লেনদেনের তথ্য সূত্র ধরে মহানগরের বিভিন্ন এলাকা হতে ডিবি পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে প্রতারকদের আটক করে।

গ্রেফতারকৃত প্রতারক চক্রের কাছ থেকে নকল পিস্তল,  হ্যান্ডকাফ, ভূয়া ডিবি জ্যাকেট, ৬টি মোবাইল, ৯টিসিমকার্ড, ১টি বিদেশী নোট- Francs Guineens-100-, ১টি বিদেশী নোট- Bank of Korea-1000, ১টি  বিদেশী নোট- Republic of Liberia-5  ১০০ ডলারের ১টি নকল নোট, সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত ৪ কপি ছবি ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া ভূক্তভোগীর নিকট থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে  নগদ-১৫ হাজার  ৫শ  টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে  পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

স/জে