রাজশাহীতে নিরাপদ খাদ্যসহ ছয় দফা দাবিতে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীসহ দেশব্যাপী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ ও নিরাপদ খাদ্য আইন,২০১৩ সঠিকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে ভেজাল ও বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করাসহ ছয় দফা দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ও পথসভা অনুুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এ কর্মসূচি পালন করে তরুণদের নিয়ে গড়া সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যল চেঞ্জ (ইয়্যাস)।
মানববন্ধন ও পথসভা শেষে তারা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর ছয় দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।
ইয়্যাস’র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম আকাশের সঞ্চালনা ও পরিচালনায় মানববন্ধন ও পথসভায় সভাপতিত্ব করেন, সংগঠনের সভাপতি শামীউল আলীম শাওন।
সভায় বক্তব্য দেন, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম রাজশাহী মহানগর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো.মিজানুর রহমান, রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, সেফ দি ন্যাচার এন্ড লাইফ ইয়ুথ ফোরাম সভাপতি আলমগীর কবির সবুজ প্রমূখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ইয়্যাস এর অর্থ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আতিক।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘প্রতিবছর পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যবাসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাজশাহীসহ দেশব্যাপী নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপন্যের দাম বৃদ্ধি করে। শুধু তাই নই; তারা মেয়াদ উত্তীর্ণ, বাসি-পচাঁ, ফরমালিনযুক্ত খাদ্যদ্রব্যও সুযোগ বুঝে ক্রেতা-ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করে। এতে করে বিপাকে পড়ে সাধারণ জনগণ। এমনকি ভেজালযুক্ত অনিরাপদ খাদ্যদ্রব্য খেয়ে তারা রোগাক্রান্ত হয়। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে দূষিত খাদ্যজনিত রোগ বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত। অনিরাপদ দূষিত খাদ্য গ্রহণের জন্য রোগের মাত্রার গভীরতা ও ব্যাপকতা নির্ণয় করা কঠিন।’ বক্তারা এজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ ও নিরাপদ খাদ্য আইন,২০১৩ সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে প্রয়োগ ও বাস্তাবায়ন করার মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বক্তারা আরো বলেন, ‘সারা বছরই নগরবাসীর অভিযোগ থাকে, তাদের চাহিদা অনুযায়ী পূরণ হয় না নাগরিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তিন অনুষঙ্গ। এগুলো হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস। অথচ সাধারণ মানুষ বিগত বছরগুলোর কোনো না কোনো সময়ে নিরবচ্ছিন্ন সুপেয় বিশুদ্ধ পানি, বিদু্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ পায়নি।’ পবিত্র মাহে রমজানে এ সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করে বলে উল্লেখ্য করে বছরের বিভিন্ন সময়ে দুর্ভোগ পোহানো নগরবাসীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী রমজান মাস ও ঈদে তাদের চাহিদা পূরণ করার কথা বলেন তারা। সেই জন্য রমজান মাসে অন্তত চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ করে ইফতার ও সেহেরির সময় নিরবচ্ছিন্ন সুপেয় বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবিও জানান।
বক্তারা সড়কে নৈরাজ্যের কথা উল্লেখ্য করে সড়কে অবিলম্বে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের জনসম্মুখে প্রকাশ্যে শাস্তি নিশ্চিত করাসহ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
মানববন্ধন ও পথসভা শেষে ইয়্যাস সভাপতি শামীউল আলীম শাওনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের দফতরে গিয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. আনওয়ার হোসেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা ছয় দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তার হাতে তুলে দেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখিত ছয় দফা দাবিসূমহ হলো :
১। শুধু পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদ-ই নয় বরং বছরের ৩৬৫ দিনই সকল প্রাণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ২৬ নং আইন) ও নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ (২০১৩ সনের ৪৩ নং আইন) যথাযথ ভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণ, বাসি-পচা, ফরমালিনযুক্ত অনিরাপদ খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করে ক্রেতা ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারতণাকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনানুগ কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপন্যের দাম বৃদ্ধি বন্ধ করা সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখতে হবে।
৩। জেব্রা ক্রসিং এর উপরে যানবাহন থামানো বা পার্কিং বন্ধ করে জেব্রা ক্রসিং উন্মুক্ত রাখতে হবে; জেব্রা ক্রসিং এর উপর পার্কিং করা বা যাত্রী উঠানামা করার জন্য দাঁড়ানো যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; জেব্রা ক্রসিং দৃশ্যমান রাখতে হবে এবং সেখানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যাবস্থা করতে হবে; জেব্রা ক্রসিং সিসিটিভি দ্বারা মনিটরিং করতে হবে; জেব্রা ক্রসিং এর দু’পার্শ্বে নির্দেশক রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে জেব্রা ক্রসিং ব্যাবহারে সহায়তা করার জন্য জেব্রা ক্রসিং এর কাছেই ট্রাফিক পুলিশের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে; চেকপোস্ট বা চেকিং পোস্ট রাস্তায় বসিয়ে শুধুমাত্র মটরসাইকেল নয় বরং সকল ধরনের যানবাহন ও চালককে চেক করতে হবে; প্রয়োজনে সন্দেহভাজন পথচারীদের ও চেকিং করতে হবে; এক্ষেত্রে অবশ্যই চেকপোস্ট সিসিটিভি নিয়ন্ত্রিত স্থানে স্থাপন করতে হবে বা চেকপোস্ট কে সিসিটিভি দ্বারা মনিটরিং করতে হবে; রাস্তার ধারে বা ফুটপাতে অবৈধ পার্কিং ও দখল বন্ধ করতে হবে আর যেখানে সেখানে ইউটার্ন কঠোর ভাবে বন্ধ করতে হবে; যানবহনগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবহকারী যানবহনগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; যথাযথ ট্রাফিক সিগন্যাল নিশ্চিত করতে হবে; সর্বত্র ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল চালু করতে হবে; ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের জনসম্মুখে প্রকাশ্যে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; ট্রাফিক পুলিশের কাছে ওয়্যারলেস প্রদান করতে হবে।
৪। রাজশাহীসহ দেশব্যাপী যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা বা দূর্ঘটনা রোধে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা দ্বারা রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারের বিপণী বিতানগুলোর পাশাপাশি সর্বত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে সিসিটিভি স্থাপনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৫। রাজশাহীসহ দেশব্যাপী পবিত্র মাহে রমজানে রাতদিন বিশেষত ইফতার ও সেহেরির সময় নিরবচ্ছিন্ন সুপেয় বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
৬। উপরোক্ত সকল বিষয় যথাযথভাবে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে এবং মনিটরিং কাজের সঙ্গে স্থানীয় তরুণ সংগঠনগুলো সদস্যদের সম্পৃক্ত করতে হবে।
স/শা