রাজশাহীতে দর কষাকাষিতে জমেছে কোরবানির পশু কেনাবেচা

নিজস্ব প্রতিবেদক:


পরশু মঙ্গলবার পবিত্র ইদুল আজহা। শেষ সময়ে জমেছে কোরবানির পশু কেনা-বেচা। হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের দর-কষাকাষিতে জমেছে কেনা-বেচা। সাধ আর সামর্থের সাথে মিল রেখে কোরবানির পশু কিনেছেন হাটে ক্রেতারা।

পশুহাটে ২২ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা মণ দর টার্গেটে কোরবানির পশু কিনছেন ক্রেতারা। সেই অনুযায়ী দরদাম করছেন ক্রেতারা। কেউ কেউ পছন্দের উপরে ভিত্তি করে একটু বেশি দাম হলেও কিনছেন কোরবানির পশু। রোববার (১৮ জুলাই) রাজশাহী সিটি পশুহাটের দিন ছিলো।

ক্রেতা আব্দুস সালাম ও মোমিন ইসলাম জানান, অল্পদামে পছন্দের পশু কেনার লক্ষ্য (টার্গেট) সবার। তারা বলছেন- ২২ হাজার টাকা মণ দরে হলে প্রতি কেজি মাংসের দাম পড়ছে ৫৫০ টাকা। আর ২৪ হাজার টাকা মণ হলে ৬০০ টাকা। তবে কোরবানির পশু দাম নয়, পছন্দে কেনাবেচা হয়। এই হাটে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বরাবরের মতো এবারো বেশি। ৭০ থেকে ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে বেশি গরু কেনা-বেচা হয়েছে।

তবে করোনার এই মহামারি সময়ে হাটে বালাই ছিলো স্বাস্থ্যবিধির। একটি গরু কিনতে হাটে এসেছেন সাত থেকে ১০ জন। তাদের মধ্যে অনেকেই এসেছেন হাটে বেড়াতে। তার পরেও বেশিরভাগের মুখে মাস্ক থাকলেও মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে চলছে পশু কেনা-বেচা।

অন্য দিনে হাটের প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক ছিটাতে দেখা গেলেও এদিন চোখে পড়েনি। যদিও মাইকের ঘোষণায় মাস্ক পরা ছাড়াও স্বাস্থ্যবিধির মানার কথা বলা হচ্ছে। তবে হাটের হট্টগোলে হাজারো মানুষের ভীড়ে হাড়িয়ে যাচ্ছে সেই কথা।

সরেজমিনে পশুহাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর গরু-মহিষ উঠেছে। ক্রেতারা বলছেন, হাটে ছোট-ছোট গরু হলেও ১ লাখ টাকা দাম চাচ্ছে বিক্রেতারা। ১ লাখের নিচে দাম চাইছে না তারা। যদিও দর কষাকষিতে কমছে। সেই হিসেবে তুলনামূলক দাম বেশি। বিক্রেতা ও খামারিরা বলছেন- দাম কম। তবে এদিন স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও এসেছেন দেশের দূরদূরান্তের ব্যাপারীরাও (ব্যবসায়ীরা)। তবে চাহিদা বেশি ষাঁড়ের। বলদা গরু কেনা-বেচা তুলনামূলক কম হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান।

হাটে পাঁচটি গরু নিয়ে এসেছেন বিক্রেতা আব্দুস রাজ্জাক। তিনি জানান, ‘দুইটি গরু বিক্রি করেছি দুপুরের আগে। দামে হলে বাকিগুলোও বিক্রি করে দেবো। না হলে অন্যহাটে তুলবো।’

সিটি হাটে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকায় গরু কিনে বেশ খুশি বেলাল হোসেন ও তার কোরবানির ভাগিদাররা। তারা জানান, ‘প্রথমে দর্শনধারী পরে গুন বিচারি। গরুটি লাল রঙের হওয়ায় সবার পছন্দ হয়েছে।’ এছাড়া দামেও কম পেয়েছেন বলে জানান তারা।

আশরাফুল ইসলাম নামের অপর ক্রেতা জানান, ‘সাত ভাগে কোরবানি। আমরা তিনজন এসেছি। ১ লাখ ২৭ হাজারে গরু কিনেছি। আজ হাটে ক্রেতার চেয়ে দর্শনার্থী বেশি। একটা গরু কিনতে সাত থেকে ১০ জন মানুষ এসেছেন। সেই হিসেবে ১০ টা গরু কিনতে কম বেশি ৬৫ থেকে ৭০ জন এসেছে।’

No description available.
পশুর জন্য অপেক্ষা

চট্টগ্রামের লালখানবাজার থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ। তিনি ১০টি গরু কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘হাটে গরুর দাম কমাচ্ছেন না বিক্রেতারা। যেমন-তেমন গরু হলেই লাখ টাকার উপরে দাম হাঁকছেন। আমার কেনা চারটি গরুর প্রত্যেকটি ১ লাখ ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা করে দাম পড়েছে।

কাটাখালীর খামারি আরিফ ইসলাম তিনটি গরু এনেছিলেন। ৯১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তার মুখে মাস্ক ছিল না। এ প্রসঙ্গ তিনি বলেন, ‘দরদাম করতে হচ্ছে। কথা শুনতে পাচ্ছেন না ক্রেতারা। তাই নিচে নামিয়ে রেখেছিলাম। বার বার তোলা নামানোর ফলে ময়লা হয়ে যায়। তাই ফেলে দিয়েছি। যাওয়ার সময় কিনে নেবো।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে হাটে এসেছেন ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান। চারটি গরু এনেছেন। তিনি বলেন, ‘গত হাট ভালো হয়নি। ক্রেতা কম ছিলো। এই হাট জমেছে। যেহেতু সময় কম। তার মধ্যে করোনা। তাই মানুষ ঘুরে না যাওয়ার চেষ্টা করছে। কমবেশি করে হলেও গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছে।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এই হাটটি কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে ইজারা নিয়ে চালান। এঁদের একজন হচ্ছেন- তফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘হাটে কেনা-বেচা ভালো হচ্ছে। হাটে সব দেশি গরু।’