সোমবার , ১৭ এপ্রিল ২০২৩ | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই

Paris
এপ্রিল ১৭, ২০২৩ ৪:০৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে তাপমাত্রার পারদ। রাজশাহীতে একের পর এক তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। গত প্রায় এক সপ্তাহ থেকে তাপমাত্রার পারদ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামছেই না।

গত সপ্তাহ থেকে রাজশাহীর তাপমাত্রা নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের সূত্র মতে, টানা ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে তাপমাত্রা। আজ সোমবার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি এবছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। তবে এটি যে শেষ এমনটিও নয়, রাজশাহীর আবহাওয়া অফিস বলছে, তাপমাত্রা আরো বাড়বে।

কারণ সামনে রাজশাহীতে বৃষ্টিপাতের কোনোর সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। আর বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এই তাপমাত্রা কমার কোনো সম্ভনাও নেই। এছাড়াও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠে গেছে একেবারে উপরে। আজ সোমবার রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উঠে গেছে ৩০ দশমিক ২ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা থাকার কথা ছিল ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসেনর মধ্যে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জেষ্ঠ্যপর্যবেক্ষক রাজিব খান জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে উত্তরাঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। প্রতিদিন তাপমাত্রা কিছুটা হলেও বেড়েছে। প্রতিদিন দশমিক এক ডিগ্রি সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো কোনো দিন তার চেয়েও বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে তাদের যে ম্যাসেজ দেয়া হয়েছে তাতে রাজশাহীতে তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। কারণ রাজশাহীতে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভনা নেই। এমনকি তাপমাত্রা কমবে এমনটাও কোনো সম্ভনা দেখা যাচ্ছে না।

সব মিলিয়ে রাজশাহীতে এবার তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ঠেকতে পারে বলেও তিনি জানান। তিনি বলছেন, আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী তাপমাত্রা দেখানো হয়। কিন্তু বাস্তবে দুপুরে তাপমাত্রা আরো বেশি থাকে। তিনি বলেন, গত ১৯৯৩ সালে এই তাপমাত্রা ছিল। আর এবার ৩০ বছর পর রাজশাহীর তাপমাত্রা এমনটা বাড়ছে।

একদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা অন্যদিকে প্রখর রোদ, দুই মিলে মানুষসহ প্রাণীকুলের আবস্থা কাহিল হয়ে পড়েছে। প্রখর রোদের কারণে ঘর থেকে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। কারণ বাইরে বের হলে চোখে মুখে লাগছে আগুনের ঝালা। তবে ঘওে বাইরে কোথাও মিলছে না স্বস্তি। ঘরের তাপমাত্রা যেমন, বাইরেও তেমনি গরম অনুভুত হচ্ছে। পার্থক্য শুধু ঘরে রোদ নেই আর বাইরে রোদ আছে।

এছাড়াও ফ্যানের বাতাসেও স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে না। ফ্যানের নিচে থাকলেও শুকাচ্ছে না শরীরের ঘাম। একদিকে তাপমাত্রা তার উপর প্রখর রোদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাস্তা-পথ-ঘাট। বাইরের বাতাস চোখে মুখে লাগলে মনে হচ্ছে আগুনের ঝালা চোখমুখে লাগছে।

বিশেষ করে প্রচন্ড তাপদাহের কারণে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। প্রখর রোদের কারণে লোকজন বেলা ১১টার মধ্যে বাইরে কাজ কাম সেরে বাসায় চলে যাচ্ছেন। আর শ্রমিক শ্রেণির মানুষ কাজে গিয়েও সর্বোচ্চ সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কাজ করে বাড়ি ফিরছেন। দুপুরের পর থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত নগরীর রাস্তা-ঘাট থাকছে অনেকটাই ফাঁকা।

অটোরিকশা চালক মফিজুল ইসলাম বলেন, সামনে ঈদ। এরমধ্যে পড়েছে প্রচুর গরম। বাড়ির বাজার হয়নি এখনো। ছেলে মেয়েদের কিছু কিনে দিতে পারিনি। সকালে অটোরিকশা নিয়ে বের হলে লোকজন পাই না। কারণ একেই তো রমজান মাস, তার উপর প্রচন্ড গরম ও প্রখর রোদ। দুই মিলে সকালের দিকে সরকারী কর্মচারি ছাড়া সাধারণ মানুষ বাইরে বের হয় না। দুপুর ২টা পর্যন্ত গাড়ি চালিয়ে ৫শ’ টাকার ভাড়া জোটেনা। তিনি বলেন, আমি লাল রংয়ের অটোরিকশা চালাই। সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই গাড়ি চালানোর নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে গাড়ি চালিয়ে জমার টাকা তোলা মুখকিল হয়ে পড়ে। এরপর রয়েছে পরিবারের বাজার! তারপর সামনে ঈদ, কি করবো ভেবে পাচ্ছি না।

রাজশাহীর রহরমপুর এলাকার আব্দুল মজিদ নামে দিনমজুর বলেন, গত কয়েকদিন থেকে বাড়ি থেকেব সকাল সকাল কাজে বের হচ্ছি। কিন্তু সাড়ে ১০ টার পর আর কাজ করতে পারছি না। তিনি বলেন, পুরো দিন কাজ করলে আমি পাই সাড়ে ৪শ’ টাকা। আর সকাল থেকে সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত কাজ করলে আমাদের দেয়া হয় আড়াইশ টাকা। এই টাকা দিয়ে কি করবো। বাড়ির বাজার, নাকি সামনে ঈদের ছেলে মেয়র বাজার। তিনি বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামে একেই তো সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে, তার উপর প্রখর রোদের কারণে কাজ কাম করতে পারছি না। এ অবস্থা চললে সংসার চালাবো কি করে।

নগরীর বিন্দুর মোড়ের ফুটপাতের কাপড়ের দোকানদার সিরাজ বলেন, প্রচন্ড রোদ ও গরম হলেও সকাল ৯টার দিকে আমি দোকান খুলি। চলে রাত প্রায় ১০ টা পর্যন্ত। সারাদিন গরমে টিকতে না পারলেও বসে থাকি, কিন্তু ক্রেতা খুঁজে পাই না। কারণ এবার গরমের কারণে লোকজন রাস্তার ধারের দোকানে কেনাকাটে করছে না। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর এক থেকে দেড় ঘন্টা কেনাকাটা হয়। আর বাকি সময় বসে থেকে সময় পার করি। এবার ঈদ কি দিয়ে হবে এ নিয়ে চিন্তায় আছি বলেও জানান তিনি।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর