রাজশাহীতে টিকটক ভিডিও প্রস্তুতকারী হৃদয়ের জন্ম হতে দিবোনা : আরএমপি কমিশনার

 

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

টিকটক ভিডিও তৈরির ফাঁদে ফেলে তরুণীদের ভারতে পাচার করা হচ্ছে। ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে যৌন নির্যাতন ও ইন্টারনেটে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা সামনে এলে বেরিয়ে আসে টিকটক ভিডিও তৈরির ফাঁদে ফেলে তরুণীদের ভারতে পাচার করার বিষয়টি। এরপরই ঘটনার অনুসন্ধানে মাঠে নেমে বাংলাদেশি রিফাদুল ইসলাম হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়সহ ছয়জনকে আটক করে ভারতীয় পুলিশ। এদের মধ্যে দুই নারী রয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে সারা দেশের ন্যায় এমন টিকটক ভিডিও তৈরির কারিগরদের খোঁজে অভিযান ও অনুসন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার  মো. আবু কালাম সিদ্দিক।

তিনি বলেন, রাজশাহীতে এমন টিকটক ভিডিও ধারণ কারিদের তথ্য পুলিশকে দিলে তাৎক্ষণিক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। আমি পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন রাজশাহীতে কোনো টিকটক ভিডিও প্রস্তুতকারী হৃদয়ের জন্ম হতে দিবোনা বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরএমপি কমিশনার বলেন, টিক টক ভিডিওর মাধ্যমে সেলিব্রিটি হওয়ার লোভে বিভিন্ন ফাঁদে নিজের অজান্তেয় পা দিচ্ছে উর্তি বয়সের তরুণীরা। টিকটক কিশোর অপরাধের মতো ঘটনা উসকে দিচ্ছে। কিশোরদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী তারা যে অপরাধগুলো করে তা একাকী নয়, দলগতভাবে করে থাকে। এ ক্ষেত্রে যেসব কিশোর-কিশোরীর চিন্তাভাবনা একই ধরনের, তারা যখন কোনো নেতিবাচক কাজ করে তা দলগতভাবেই করে। এর ফলে এই কম বয়সীদের মাদক গ্রহণ ও সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক আরো বলেন, বেশ কিছু মোবাইল অ্যাপ উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীদের এক ধরনের বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই অ্যাপসগুলো বন্ধ করার জন্য প্রকৃত সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশে টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট যারা বিষয়টি মনিটরিং করছে তারা চাইলেও এসব অ্যাপ বন্ধ করা সম্ভব। তাদের মতে, যেহেতু এসব ভিডিও পোস্ট করার জন্য কেউ সরাসরি ফৌজদারি অপরাধে জড়ায় না, এ জন্য প্রাথমিকভাবে এসব কিশোর-তরুণের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এর পরেও তরুণী ও কিশোরীরা টিকটক ভিডিও তৈরির নামে অশ্লিল আচরণ ও পোশাক পড়ে ভিডিও ধারনকারীদের তথ্য পেলে তাৎক্ষনিক ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। এ বিষয়ে কোন ছাড় দেবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, টিক টক ভিডিওর মাধ্যমে সস্তায় সেলিব্রিটি হওয়ার লোভে বিভিন্ন ফাঁদে নিজের অজান্তেয় পা দিচ্ছে উর্তি বয়সের তরুনিরা। ফেসবুকে ভাইরাল বানানোর লোভ দেখিয়ে তরুনিদের কাছে টানছেন কিছু অসাধু মাদকসেবি যুবক। সেলিব্রিটি বানানোর নাম করে তাদের দিয়ে তৈরি করছে নানান রকম অর্থহীন অশ্লিল কন্টেন্ট। আর এভাবেই গ্রুপ তৈরি করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারাদেশের মতো শিক্ষা নগরি রাজশাহীর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র সহ পদ্মার চরে। তাদের অশ্লিল আচরণ ও পোশাকের কারনে বিনোদন কেন্দ্র ছাড়তে দেখা গেছে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা অনেককেই।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় টিকটক ও ইউটিউবে ভিডিও প্রস্তুতকারী শরিফুল ইসলামের সাথে, তার বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায়। সে নিজে ক্যামেরা চালায় ও ইউটিউবে করে আপলোড করে। জানতে চাওয়া হয় কি ভাবে এই গ্রুপ তৈরি করে। সঠিক উত্তর না দিয়ে কেটে পড়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়দের আশ্বাসে তারা পদ্মা গার্ডেন ব্রিজে বসে পড়েন। এ সময় সবার খোঁজ খবর নিয়ে জানাযায় এই তরুণীদের সাথে শরিফুল ইসলামের ফেসবুকে পরিচয় হয় এবং সেলিব্রিটি বানানোর কথা বলে এখানে নিয়ে আসে। এর আগেও দুই জায়গায় তারা সুটিং করে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো তরুণ তরুণীদের নিজস্ব ঠিকানা কেও কারো জানেনা। কেবল মাত্র ফেসবুকের আইডি ছাড়া।

একই অবস্থা দেখা যায় রাজশাহী জেলা কারাগারের পেছনে পদ্মার পাড়ে। সেখানেও তিনজন মেয়ে ও পাঁচজন ছেলেকে দেখা যায় ভিডিও তৈরি করতে । জানতে চাইলে টিকটক হিরোরা নাটোর থেকে এসেছেন। আর টিক টক ভিডিওর মাধ্যমে সেলিব্রিটি হতে আসা মেয়েরা কোট বুলনপুর ও লিলি সিনেমা হল এলাকা থেকে এসেছেন। এরাও কেউ কারো ঠিকানা জানেনা। ফেসবুকের আইডির মাধ্যম ছাড়া কিছুই জানেনা তারা।

টিকটক ভিডিও তৈরির ফাঁদে ফেলে তরুণীদের পাচার ও ধর্ষনের বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কিশোর-কিশোরীরা তাদের এনার্জি লেখাপড়ার বদলে টিকটকের মতো অ্যাপে খরচ করছে। এর মাধ্যমে তারা বিনোদন ও উত্তেজনা খুঁজে নিচ্ছে। এই বয়সী শিশুদের আকর্ষণ করার মতো উপাদান টিকটকের আছে। এ জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় শিশু-কিশোররা এখন টিকটকের পেছনে ব্যয় করছে। কিন্তু এসব বিষয়ে সেন্সরশিপের প্রয়োজন আছে। এ ধরনের অ্যাপ ব্যবহারে কোনো বিধিনিষেধ না থাকায় এর যথেষ্ট ব্যবহার হচ্ছে। যদি সরকারিভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা হতো তাহলে এর এত অবাধ ব্যবহার হতো না বলে জানান তারা।

সূত্র: দৈনিক উপচার