রাজশাহীতে ছিনতাইকারীর হাতে ওয়াকিটকি, আরএমপিতে তোলপাড়

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

রাজশাহীতে গ্রেপ্তার হওয়া দুই ছিনতাইকারীর কাছে পাওয়া গেছে একটি ওয়াকিটকি। মটোরোলা ব্র্যান্ডের এই ওয়াকিটকি সাধারণত পুলিশ ব্যবহার করে। এমন ওয়াকিটকি ছিনতাইকারীর কাছে পাওয়ার ঘটনায় রাজশাহী মহানগর পুলিশে (আরএমপি) তোলপাড় চলছে। কোনো থানা কিংবা পুলিশ ফাঁড়িতে ওয়াকিটকি কম আছে কি না তা জানতে চেয়ে আরএমপি সদর দপ্তর থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দলও কাজ শুরু করেছে।

 

এ ছাড়া গ্রেপ্তার দুজনের সাতদিনের রিমান্ডেরও আবেদন করা হয়েছে। গ্রেপ্তার দুজন হলেন- নগরীর শাহমখদুম থানার বড় বনগ্রাম বাগানপাড়া এলাকার মাভেল ইসলাম ওরফে মাভেল (২৪) ও তাঁর ভাই নেহাল ইসলাম ওরফে নিরো (২২)। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য পরিচয়ে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের সময় শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে নগরীর শিরোইল বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। তখন এ ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। তবে আরএমপিতে শুরু হয় তোলপাড়।

 

পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, গ্রেপ্তার দুজন মূলত ছিনতাইকারী। ডিবি পুলিশের ভূয়া পরিচয় দিয়ে তাঁরা মানুষকে জিম্মি করে ছিনতাই করে। কীভাবে কাছে পাওয়া ওয়াকিটকি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কারিগরি দল কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর কর্ণহার এলাকার তরিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি শনিবার সকালে এমপি সাফারি নামের একটি কোচে ঢাকা থেকে রাজশাহী এসে শিরোইর বাসস্ট্যান্ডে নামেন।

 

এ সময় মাভেল ইসলাম ও তার ভাই নেহাল এই যাত্রীকে টানতে টানতে আড়ালে নিয়ে যান। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাঁরা যাত্রীর শরীর তল্লাশির নামে পকেটে থাকা ৬ হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন বের করেন নেন। তাঁর কাছে গাঁজা ও ইয়াবা পাওয়া গেছে বলে ভয় দেখিয়ে তরিকুলের মোবাইল ফোন থেকে পরিবারের লোকেদের কাছে তাঁকে দিয়েই ফোন করানো হয়। বিকাশে পাঠাতে বলা হয় টাকা। এদিকে তরিকুল ছাড়া পাবার চেষ্টা করলে ওয়াকিটকি বের করে তাঁকে মাদক দিয়ে চালান করার ভয় দেখান। টার্মিনাল এলাকার কৌতুহলী লোকজন ঘটনা দেখতে ভিড় করলে দুই ছিনতাইকারী নিজেদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে তাঁদেরকেও ভয় দেখান। এর মধ্যে বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মাভেল ও নিরো পালানো চেষ্টা করেন। পরে তাড়া করে তাঁদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে মাভেল ও নিরো আরএমপির একটি থানার সাবেক একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ও একজন উপ-পরিদর্শকের (এসআই) সোর্স হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। সম্প্রতি ওই ওসি আরএমপি থেকে ঢাকায় বদলি হন। সেই এসআইকেও সম্প্রতি অন্য থানায় বদলি করা হয়েছে। ওসি ও এসআইয়ের পৃষ্টপোষকতায় এই দুই ভাই অবাধে মাদক ব্যবসা করে আসছিলেন। এর পাশাপাশি তাঁরা ডিবি পরিচয়ে টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের দেহ তল্লাশির নামে টাকা-পয়সা ছিনতাই করে আসছিলেন। মাভেলের নামে আরএমপির বিভিন্ন থানায় চারটি মাদকের মামলা রয়েছে।

 

এদিকে দুই ভুয়া ডিবির কাছে ওয়াকিটকি পাওয়া গেলে আরএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শনিবার দিনভর দুই ভাইকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এই ওয়াকিটকি কীভাবে ছিনতাইকারীদের কাছে গেলো-তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন আরএমপির কর্মকর্তারা। তবে ঘটনাটি নিয়ে রোববার সকালে ঘটলেও কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করেন আরএমপি কর্মকর্তারা।

 

নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, ভূয়া ডিবি মাভেল ও নিরোর বিরুদ্ধে শনিবার রাতেই থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম মামলার বাদী হয়েছেন। রোববার সকালে দুজনকে আদালতে পাঠিয়ে তাদেরকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ড আবেদনের শুনানি হয়নি। ওয়াকিটকির বিষয়ে মন্তব্য করেননি। আরএমপির মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুসও এ বিষয়ে কথা বলেননি।