রাজশাহীতে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অসহায়ের বাড়ির ভিটা দখলের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী মহানগর ছোট বনগ্রাম এলাকায় এক অসহায় নারীর বাড়ির ভিটা দখলের অভিযোগ উঠেছে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ওই জমি দখল করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মামুন অর রশিদ নামের ওই চিকিৎসক অবৈধভাবে একতলা একটি বাড়িও নির্মাণ করেছেন। মহানগর যুবলীগের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগ সাজস করে জাল দলিল করে ওই স্থাপনা গড়ে তুলেন। জমির মালিক আসমা খাতুন নামের ওই নারী উচ্ছেদ মামলাও করেছেন আদালতে। কিন্তু এখনো তিনি তাঁর যায়গাটি ফেরত পাননি। যুবলীগ নেতাদের দাপটে ওই জমিতেও যেতে পারছেন না তিনি।

মামলা ও জমির নথিপত্র সূত্র মতে, ১৯৮০ সালে নগরীর বালিয়া পুকুর এলাকার মকবুল হোসেন নামের এক দিনমজুরের স্ত্রী আসমা খাতুন ছোট বনগ্রাম এলাকায় দশমিক ১৭ একর জমি কিনে নেন আতাহার আলী নামের এক ব্যক্তির নিকট থেকে। এরপর থেকে আসমা খাতুনসহ তাঁর পরিবার ওই জমিটি ভোগ-দখল করে আসছিলেন। এছাড়াও তাঁর নামে জমির নামজারিসহ সরকারি খাজনা পরিশোধেরও কাগজপত্র রয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে ২০১৫ সালে ওই জমির একটি অংশ সাড়ে ৬ কাঠা গোপনে জাল দলিল করে নেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের কর্মী মাসুদ রানা পিন্টু। মহানগর যুবলীগের প্রভাবশালী এক নেতার ইন্ধনে এই ভূমিদস্যুরা পরবর্তিতে রামেক হাসপাতালের চিকিৎসক মামুন অর রশিদের কাছে বিক্রির করে দেন গোপনে।

এরপর ওই জায়গাটি প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা চিকিৎসক মামুনকে দখল নিতেও সহযোগিতা করেন। পরবর্তিতে সেখানে একটি এক তলা বাড়িও নির্মাণ করতে সহায়তা করেন যুবলীগ নেতা-কর্মীরা।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ওই জাল দলিলের বিরুদ্ধে আসমা খাতুন আদালতে মামলা দায়ের করেন।

পাশাপাশি তিনি স্থানীয় বোয়ালিয়া থানা ভূমি অফিসে খারিজ বাতিলেরও আবেদন করেন। আদালতে মামলা দায়েরের পর আসামি পক্ষ তাদের জমির কোনো প্রমাণপত্র দাখিল না করায় আদালত আসমা খাতুনের পক্ষে রায় প্রদান করেন। এছাড়াও ভূমি অফিস থেকেও ২০১৬ সালের ৬ মার্চ মাসুদ রানা পিন্টুর নামে ভূয়া নামজারিটি বাতিল করে দেওয়া হয়। এছাড়াও চিকিৎ’সক মামুন অর রশিদ সিটি করপোরেশনে তাঁর বাড়ির হোল্ডিং নম্বরের জন্য যে আবেদন করেন সেটিও বাতিল করে দেয় নগর সংস্থা। এরপর গত বছর চিকিৎসক মামুনের বাড়িটি উচ্ছেদের জন্য মামলা করেন আসমা খাতুন। কিন্তু অধ্যবধি তিনি তাঁর জমিটি বুঝে পাননি।

এদিকে গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দখলকৃত ওই যায়গাটির চারিদিকে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে তার ওপরে তারকাটার বেড়া নির্মাণ করা হয়েছে। আর প্রাচীরের ভিতরে একটি এক তলা বাড়ি নির্মাণ করে সেটি ভাড়া দিয়েছেন চিকিৎসক মামুন অর রশিদ। এই বাড়িতে এখন একজন ভাড়াটিয়া থাকেন।

জমির মালিক আসমা খাতুনের স্বামী মকবুল হোসেন বলেন, ‘রাজমিস্ত্রীর কাজ করে অনেক কষ্টে জমিটি কিনে বউয়ের নামে লিখে দিয়েছি। এখন সেই জমিই হাতছাড়া। জমিটি ফেরত পেতে এবং মামলায় লড়তে লড়তে আমরা ক্লান্ত হয়ে গেছি। মহানগর যুবলীগের নেতাদের কাছেও গিয়ে হাতে-পায়ে ধরেছি। আকুতি-মিনতি করেছি। কিন্তু আরাও আমার কোনো কথা শোনেননি। উল্টো ভূমিদস্যূ মাসুদ রানা পিন্টুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে যায়গাটি দখল করতে সহযোগিতা করেছেন। পরে তারা প্রায় অর্ধ কোটি টাকা দিয়ে যায়গাটি বিক্রি করেছেন।’

মকবুল হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুন বলেন, ‘তারা এখন শুধুমাত্র রাজনীতির ক্ষমতার জোরে আমার যায়গাটি দখল করে রেখেছে। আদালত থেকে উচ্ছেদ মামলার রায়টি পেলে হয়তো আদালত আমাদের যায়গাটি বুঝে দিবেন। কিন্তু এতো কষ্ট ও হয়রানি আর কতদিন সহ্য করবো। আমরা এই জমিটি ফেরত পেতে মামলায় লড়তে লড়তে এখন নিঃস্ব প্রায়। টাকার অভাবে তিন বেলা ঠিকমতো ভাতও জুটে না পেটে না। কিন্তু তারা আমার যায়গাতে অবৈধভাবে বাড়ি নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে ঠিকই টাকা লুটে নিচ্ছে। কেউ কেউ জোর করে বিক্রি করে টাকাও লুটে নিয়েছে। এর প্রতিকার চাই আমি।’

এদিকে জমি দখল সম্পর্কে জানতে চাইলে মহানগর যুবলীগের কর্মী মাসুদ রানা পিন্টু বলেন, ‘যায়গাটি আমি কিনেছি। এর পরে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আর কিছু বলার নাই। যিনি কিনেছেন তিনিই বুঝবেন। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নাই।’

চিকিৎসক মামুন অর রশিদের সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া গেছে। জমি দখল করে বাড়ি নির্মাণ নিয়ে কথা বলতে চেয়ে তাঁকে ম্যাসেজ দিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মহানগর যুবলীগের সভাপতি রমজান আলীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে এবং দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ করে থাকলে সেটি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

স/আর