রাজশাহীতে খাল দখল করে আ’লীগের কার্যালয়, উদ্বোধন করলেন মেয়র আব্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর কাটাখলিতে খাল দখল করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি কার্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে। দালান ঘর তুলে সেই কার্যালয়টি করা হচ্ছে রাজশাহী নগরীর অদূরে কাটাখালি পৌর এলাকার আবহাওয়া পাড়ায়। স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ওই কার্যালয়টি গড়ে তুলছে। গত রবিবার বিকেলে ওই কার্যালয়টির উদ্বোধন করেন কাটাখালি পৌর মেয়র আব্বাস আলী। উদ্বোধনের পর তিনি তাঁর ফেসবুক পেজে দুটি ছবিও পোস্ট করেন। ওই ছবির নিচেই স্থানীয় অনেকে খাল দখল করে আওয়ামী লীগের কার্যালয় গড়ে তোলার কার্যক্রমের তীব্র প্রতিবাদও জানিয়েছেন।

মেয়র আব্বাসের এমন কাণ্ডে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা ওই কার্যালয়টি দ্রুত ভেঙে ফেলারও দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে বর্ষা মৌসূমে পদ্মা ভরে গেলে রাজশাহী কাটাখালি পৌর এলাকা ছাড়াও রাজশাহী নগরীর একটি অংশে ব্যাপক জলবাদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও দাবি করেন অনেকেই।

গতকাল সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, কাটাখালি পৌর এলাকার ৮ ওয়ার্ডের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি খাল। এই খালটি দিয়ে বর্ষা মৌসুমে পদ্মা নদী থেকে পানি ঢুকে কাটাখালিসহ আশে-পাশের নিচু এলাকার বিলগুলোতে জমা হয়। এতে সুষ্কমৌসুমে ওই পানি ব্যবহার করে এলাকাবাসি বিভিন্ন ফসল চাষ করতে পারেন। আবার অতিরিক্ত পানি গিয়ে নদীতে পড়ে।

এর বাইরেও খালটি নানাভাবে উপকারে আসে স্থানীয়দের। কিন্তু সেই খাল দখল করে মাঝকানে পিলার বসিয়ে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ড শাখার কার্যালয়। এরই মধ্যে কার্যায়লটির নিচের অংশের ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। এখন বাকি আছে ওপরের অংশের কাজ। গত রবিবার বিকেলে এই কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় পৌর মেয়র আব্বাস আলী।

তবে গতকাল দিনভর বৃষ্টির কারণে কাজ বন্ধ ছিল বলেও দাবি করেন স্থানীয়রা। বৃষ্টি না হলে আজ মঙ্গলবার থেকে খাল দখল করে নির্মাণাধীন ওই দলীয় কার্যালয়টির কাজ আবার শুরু হবে।

স্থানীয় সুমন হোসেন, আলতাফ হোসেন আরও কয়েকজন ব্যক্তি জানান, গত রবিবার বিকেলে কাটাখালি পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্বাস আলী নিজে উপস্থিত থেকে অবৈধভাবে নির্মাণাধীন ভবনটির ফ্লোরের ছাদ ঢালাইয়ের কাজের উদ্বোধন করেন। এ কারণে স্থানীয়রা ওই ঘরটি নির্মাণের বিপক্ষে প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছেন না।

অথচ খালটি দিয়ে বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানি রাজশাহী নিমাঞ্চলগুলোতে যায়। এতে করে সুস্কমৌসুমে সেই পানি দিয়ে কৃষকরা ফসল চাষ করতে পারেন। আবার অতিরিক্ত পানি পদ্মায় নেমে যায়। কিন্তু খালটি দখল করে আওয়ামী লীগের কার্যালয় গড়ে তোলার কারণে এখন পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে সারা বছরই মরা খালে পরিণত হবে এটি।

স্থানীয়রা আরো জানান, খালটি দখল করে আওয়ামী লীগের নেতারা প্রথমে নিজেদের কার্যালয় গড়ে তোলার কথা বললেও পরবর্তি এখানে তারা বাড়ি নির্মাণ করবে। এ কারণেই খালটিকে তারা মেরে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি সরকারি কোটি কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ দখলেরও চেষ্টা করছেন। আর সেটি করতেই খালের জায়গা আওয়ামী লীগের কার্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ড শাখার সভাপতি আব্দুল মজিদ বলেন, খালটিতে অধিকাংশ সময় পানি থাকে না। তাই এ কার্যালয়টি গড়ে তুলছেন তারা।

জানতে চাইলে কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর মোবাইল ফোনে গতকাল দিনভর বার বার ফোন করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

এদিকে খাল দখল করে আওয়ামী লীগের কার্যালয় গড়ে তোলা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান বলেন, ‘পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়, এমন খাল দখল করে কার্যালয় গড়ে তোলা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বিষয়টি এর আগে জানা ছিল না। এখন খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবো।’

স/আর