রাজশাহীতে এডিট করে নারীর অশ্লীল ছবি ভাইরালে দায়ে যুবকের ৭ বছরের কারাদণ্ড


নিজস্ব প্রতিবেদক:

নাটোরে এক নারীর ছবি এডিট করে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন, চাঁদা দাবি ও উত্ত্যক্ত করার মামলায় শ্যাম দাস (৩৮) নামে এক ব্যক্তিকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত। একইসঙ্গে তাকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন। এসময় আসামি শ্যাম দাস আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের মে মাসে নাটোরের লালবাজার এলাকার শ্যাম দাস এক নারীর ছবি এডিট করে অশ্লীল ছবিতে রূপান্তর করেন। এরপর এলাকার বিভিন্নজনের কাছে তা দেখান। একপর্যায়ে ওই ছবি মেয়েটির বাবাকে দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এছাড়া ওই মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও কুপ্রস্তাব দেন শ্যাম দাস। পরে ভুক্তভোগী নাটোর সদর থানায় মামলা করেন।

মামলার এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেন, তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার প্রতিবেশী বাবলু চন্দ্র একজন মাদকসেবী ও লম্পট প্রকৃতির লোক (২০১৪ সালে তার বয়স ছিল ৪৫ বছর)। তিনি তাকে প্রায়ই কুপ্রস্তাব দেন এবং রাস্তাঘাটে যৌন হয়রানি করেন। এর একপর্যায়ে বাবলু চন্দ্র তার সহযোগী শ্যাম দাসকেও (ওই সময় তার বয়স ছিল ৩০ বছর) ওই নারীর পেছনে লাগান। তারা দুইজনে মিলে কোনোভাবে ওই নারীর ছবি সংগ্রহ করেন এবং তা এডিট করে অশ্লীল ছবি তৈরি করেন। পরে ওইসব অশ্লীল ছবি দেখিয়ে তার বাবার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই টাকা না দিলে তারা ওই নারীর এডিট করা ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেবেন বলে হুমকি দেন। পরে তারা দাবি করা চাঁদার টাকা না দিলে দুইজনে মিলে ওই অশ্লীল ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করে দেন। পুলিশ তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। মামলাটি বিচারের জন্য রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালে আসার পর সাতজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে প্রধান আসামি বাবলু মৃত্যুবরণ করেন। পরে শ্যাম দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আদালত এ রায় দেয়।

রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ইসমত আরা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রায়ে বলা হয়েছে এই মামলার অন্যতম আসামি শ্যাম দাসের (৩৮) বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এর ৫৭ ধারার অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাকে দোষী সাব্যস্ত করে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো। এছাড়া নগদ পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হলো। অনাদায়ে থাকবে আরও ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড। এই মামলার আলামত রাষ্ট্র বরাবর বাজেয়াপ্ত করা হলো এবং তা বিধি মোতাবেক নিষ্পত্তি করতে হবে। এছাড়া সিআরপিসির ৫৪৫ ধারার বিধান মতে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে জরিমানার পাঁচ লাখ টাকা ভুক্তভোগী পাবেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি শ্যাম দাস আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে রাজশাহী কারাগারে পাঠানো হয়।

এএইচ/এস