রাজশাহীতে ই-সিগারেটে ঝুঁকছে কিশোররা

শাহিনুল আশিক:
‘ধুমপান যে কেনো করি, নিজেই জানি না। তবে মাঝে মধ্যে ভিশন টেনশন লাগে। তখন ধুমপান করি। টেনশন থেকে মুক্তির জন্য।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহীর এক কলেজের শিক্ষার্থী এমনটি বলছিলেন। তিনি বলেন, ‘ধুমপান তাদের কাছে ফ্যাশন। বন্ধুরা ধুমপান করে। সঙ্গে থাকি, না করলে কেমন দেখায়। তাই ধুমপান করি।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানের ছেলেদের কাছে সিগারেটের চেয়ে ই-সিগারেট বেশ জনপ্রিয়।’

শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, ই-সিগারেট এখন সকলের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। নতুন আঙ্গিকে নেশার কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে টোবাকো কোম্পানিগুলো। যদিও দেশে ই- সিগারের বিষয়ে কোনো আইন নেই। তাই স্বাস্থ্যের বেশি ক্ষতি হলেও বেড়েছে এর ব্যবহার। ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট এটি ভিন্ন ধরনের নেশা। সম্পন্ন লিকুইড। সিগারের চেয়ে গাঢ় ধোঁয়া। এই ধোঁয়া অনেকের পছন্দের।

নগরীর রেলগেট এলাকায় এক কলেজ ছাত্র জানায়, ‘স্কুল, হাইস্কুল কিংবা কলেজ। সব শ্রেণিতেই আপনি ধূমপান করে এমন কাউকে না কাউকে পাবেন। আগে সিগারেটের প্রবণতা বেশি কাজ করতো। কিন্তু এখন ই-সিগারেট সেবন বেড়েছে তার বন্ধুদের মধ্যে।’ তারা বলছে, বার বার কেনার ঝামেলা নেই। একবার কিনলে বেশ কিছুদিন চলে। যদিও সিগারের তুলনায় দাম অনেকটাই বেশি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েজন বিক্রেতা জানায়, ‘দুই হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তারা।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক জানায়, ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট ব্যাটারি চালিত এক ধরনের যন্ত্র। ইলেকট্রনিক সিগারেটের ভেতরে থাকে নিকোটিনের দ্রবণ যা ব্যাটারির মাধ্যমে গরম হয়। এর ফলে ধোঁয়া তৈরি হয়। এটি মস্তিষ্কে ধূমপানের মতো অনুভূতির সৃষ্টি করে।

ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার উন্নতির জন্য অনেক সময়ই প্রচারণা চালান যে, ই-সিগারেট কম ক্ষতিকর কিংবা এটি নেশায় আসক্তি কমাতে সাহায্য করে। ইলেকট্রিক সিগারেটের তরলেও রয়েছে নিকোটিন। ক্রমাগত শরীরে ঢুকতে থাকা এই তরল নিকোটিন কিন্তু সিগারেটের মতোই আপনাকে নেশাগ্রস্ত করে ফেলতে পারে। যদিও, সিগারেটের মতো তামাক থাকে না এই সিগারেটে। নিকোটিন মিশ্রিত তরলই বাষ্পাকারে বেরিয়ে আসে। ধূমপায়ীরা ও নেশাসক্তরা সিগারেটেরই স্বাদ পান এই ইলেকট্রিক স্মোকিংয়ে।

তাই ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ই-সিগারেট ব্যবহারের বা ভ্যাপিংয়ের সংখ্যা বাড়ছে। আর ইলেকট্রিক সিগারেট বা ই-সিগারেটের ডিভাইসটি ব্যবহারের মাধ্যমে ধূমপান করা ‘ভ্যাপিং’ নামে পরিচিত।

ই-সিগারেটের এবিষয়ে রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, ‘সব ধরনের নেশা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে প্রচারে আসার জন্য এরকম কথা ছড়াচ্ছে।

ই-সিগারেটগুলো নগরীর নিউ মার্কেট, মনিচত্বরে চার থেকে পাঁচটি দোকান, লক্ষ্মীপুর সাহেববাজরের কয়েকটি দোকানে এই সিগারেট বিক্রি হয়।

এছাড়া ই-সিগারেটের মেশিনে লিকুইড ঢুকাতে হয়। পরে মোবাইলের চার্জারের মত চার্জ দিয়ে সেবন করতে হয়। বিদ্যুৎ চার্জের মাধ্যমে সেবন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
এসিডির অ্যাডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম বলেন, ২০১৮ সালের জরিপে রাজশাহী নগরীতে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী ধুমপান করে। ধুমপানকারীদের সংখ্যা ক্রমন্বয়ে বাড়ছে।

তিনি আরো বলেন, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার নিষিদ্ধ হলেও নগরীর সব জায়গায় তা অবাধে তা চলছে। এই সংস্থাটি ২০১৮ সালে ৩০টি ওয়ার্ডের উপরে এজি জরিপ চালায়। এতে বলা হয়, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের ৮৪টি দোকানে তামাকপণ্য বিক্রি হয়, ২ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৫টি, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ১০৭টি, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১০০টি, ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৮টি, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৬টি, ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৬২টি, ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৯টি, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৫টি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৩টি, ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০টি, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪৪টি, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৭টি, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১২৭টি, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৯৩টি, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৯৭টি, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩০টি, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৬টি, ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১২১টি, ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৬টি, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ৭৩টি, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ৫৯টি, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৫০টি, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৯০টি, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৬টি, ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫১টি, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১১৮টি, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ১৫৮টি, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৭৮টি এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের ১৯৩টি দোকানে বিক্রি হয় তামাকপণ্য।

অর্থপ্যাডিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. শফিউল আলম শুভ বলেন, ই-সিগারেট বেশি ক্ষতিকারক। এটি বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি। সাধারণ সিগারেটের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ গুন বেশি ক্ষতি করে।

 

স/আ