রাজমিস্ত্রি ও ভ্যান চালানোর কাজ করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে রাজা

আমানুল হক আমান, বাঘা
মো. রাজা আলীর পেটে ভাত জোটে না, পরোনের ন্যূনতম চাহিদামতো কাপড় থাকে না। তারপর লেখাপড়া করার ইচ্ছা প্রকাশটা বুঝি অযৌক্তিক। তবুও সে দমেনি। হার মানেনি দারিদ্র্যের কাছে। নির্মম বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ভবিষ্যৎ গড়ার পথে হাঁটছে। মূল লক্ষ্য যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দারিদ্র্য দূর করে পরিবারের দুঃখী বাবা-মার মুখে হাসি ফোটানো। সে অনুযায়ী জীবনযুদ্ধে নেমে শত বাধা পেরিয়ে দেখিয়েছে বিশেষ কৃতিত্ব।

রাজশাহীর বাঘা ইসলামি একাডেমি স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। এ জন্য শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার পড়া-লেখায় ছেদ পড়েনি। তার স্বপ্ন-বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হওয়া। কিন্তু চরম দরিদ্রতা তার সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বিশাল বাধা। এই বাধা ডিঙিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা সে চিন্তায় এখন সারাক্ষণ রাজা ও তার পরিবারের।

রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের চকছাতারি মহল্লার আবুল কালাম ও সাবিনা বেগমের ছেলে রাজা। তিন বোন এবং এক ভাই এর মধ্যে রাজা দ্বিতীয়। রাজার মেজো বোন স্থানীয় রহমতুল্লা বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণি ও ছোট বোন স্থানীয় ব্রাক স্কুলের চতৃর্থ শ্রেণির ছাত্রী। বড় বোনের অর্থের অভাবে পড়া-লেখা করাতে না পেরে বিয়ে দিয়েছে। তবে রাজা রাজমিস্ত্রি ও ভ্যান চালানোর কাজ করে গভীর রাত জেগে পড়ালেখা করত। প্রাইভেট পড়ার মতো সামর্থ্য ছিল না।

তাদের সংসারের অভাব মেটাতে মা অন্যের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে। দুটি টিনের ছাপরা ঘর। একটিতে রাজা অন্যটিতে তার ছোট দুই বোন থাকে। বাবা-মা বাঁশের তৈরী করা মাচায় বারান্দায় থাকেন । রাজার ঘরে একটি চৌকি ছাড়া অন্য কোন আসবাব পত্র নেই, নেই কোন পড়ার টেবিলও। চৌকিতে বসেই রাতে পড়া-লেখা করে অর্জিত হয় তার সাফলতা। বাবা সারা দিন ভ্যান চালিয়ে ও রাজা রাজমিস্ত্রির কাজ করে চাল-ডাল নিয়ে এলে সংসারের হাড়ি চলে। যেদিন রাজা রাজমিস্ত্রির কাজ পায় না, সেদিন বাবার ভ্যান চালায়। তার পরও রাজা পড়া-লেখা থেকে বিন্দু মাত্র বিচ্যুত হয়নি।

তাদের বাড়ির সাড়ে তিন শতাংশ জমি। এই জমি দাদার নামে। তার দাদার ৫ ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। তারা হাতে কাজ করে পেটে খাই। তবে রাজার শহরের ভালো কলেজে পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্য নেই। রাজার ইচ্ছে শহরের ভালো কলেজ থেকে পাস করে শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু ইচ্ছে পূরণ হবে কিনা জানেনা। অর্থের অভাবে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে কিনা।

বাঘা ইসলামি একাডেমি স্কুল এ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষ আবদুল কাদের বলেন, রাজা গরিব ঘরে জন্ম নিলেও রাজমিস্ত্রির কাজ করে খেয়ে না খেয়ে কষ্ট করে লেখাপড়া করে সার্থক হয়েছে। দোয়া করি, সে বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে সমাজের সেবা করবে।

 

 

স/আ