রাজনৈতিক গিলোটিনে রিপাবলিকান নেতারা

ব্যক্তিগত স্বার্থে টইটুম্বুর ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটচালে, রাজনৈতিক দল হিসেবে রিপাবলিকানরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলেছে। ২২৬ বছর আগে ফরাসি বিপ্লবের সন্ত্রাসী পর্যায়ে জেকোবিন দলের নেতাদের করুণ মৃত্যু ঘটেছিল গিলোটিন নামের এক দানবীয় যন্ত্রের বিশাল করাতে। শেষ পরিণতি দেহ বিচ্ছিন্ন রক্তাক্ত মস্তক। জেকোবিন দলের উঁচুস্তরের নেতা রোবস্পিয়ের, ডেনটন, ক্যামিল দ্যমুলো, সেন্ট জাস্ট, এবেয়ারসহ অনেক নেতাকেই করুণ মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল গিলোটিনে-রাজনৈতিক অন্তর্দ্বন্দ্বে। অথচ এরা এক সময়ে ছিল কমরেড, বন্ধু ও রাজনৈতিক সহচারী। চিকিৎসক গিলোটিনের আবিষ্কৃত গিলোটিন যন্ত্রের নাম শুনলে এখনো ফরাসিদের হৃদয় কম্পন শুরু হয়।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি কোনোক্রমেই ফরাসি বিপ্লবের সাথে তুলনীয় নয়। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনের পুরো চার বছরের তার একান্ত অনুগতদের অনেকেরই শারীরিক মৃত্যু নয়, রাজনৈতিক মৃত্যুর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। রূপকল্প হিসেবে তাদের স্থান হতে পারে রাজনৈতিক গিলোটিনে। ট্রাম্পের ব্যক্তিস্বার্থ সংবলিত কূটচালে রিপাবলিকান দলে বিভাজনের ইঙ্গিত ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ট্রাম্পের উদ্দেশ্য হলো দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের উৎখাত করে নিজের একচ্ছত্র একনায়কত্ব কায়েম করা।

দলের নেতৃবৃন্দের কাছে দুটো পথ খোলা রয়েছে, নীতিরীতি মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ে ট্রাম্পের পা-চাটা সারমেয়তে পুরোপুরি রূপান্তর হওয়া অথবা রাজনৈতিক গিলোটিনে গমনকারী টামব্রিলে উঠে নিজের রাজনৈতিক জীবনের শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপকর্মে অনীহা প্রকাশ করলে তার অন্ধভক্ত রিপাবলিকান পার্টির তৃণমূল কর্মীরা ক্ষেপে যাবে। তৃণমূলে রয়েছে বর্ণবাদী নব্য ফ্যাসিস্ট শ্বেতাঙ্গ গরূপগুলো, ধর্মান্ধ ইভানজেলিকান খ্রিস্টান সম্প্রদায়, অবিভাসন বিরোধী শ্বেতাঙ্গরা এবং গ্রামীণ অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্যান্সকুলট, ফরাসি বিপ্লবের সন্ত্রাসীদের প্রতিচ্ছায়ায়। এর বাইরেও রয়েছে ট্রাম্পের জোরালো সমর্থন যা হলো যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসীদের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। রিপাবলিকান দলের রেজিস্টার্ড ভোটার সংখ্যা হলো ২৯ শতাংশ। ঝুঁকে থাকা সমর্থক ৪৪ শতাংশ, যার মধ্যে রয়েছে নিরপেক্ষ রেজিস্টার্ডকৃত ৩৪ শতাংশের অর্ধেকের খানিকটা কম। রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থকদের মধ্যে অদ্ভুত আশঙ্কা বিরাজ করে। তা হলো রেডিক্যাল সমাজতন্ত্র এবং অভিবাসন। তাদের ধারণা ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মূল লক্ষ্য হলো সমাজতন্ত্র কায়েম এবং অশ্বেতাঙ্গ অভিবাসনের জন্য মুক্ত সীমান্ত। সামাজিক মাধ্যমের সুযোগ নিয়ে বর্ণবাদীদের ক্রমাগত প্রচার, রেডিও টকশো এবং ক্যাবল চ্যানেলের বিরামহীন প্রচারে রিপাবলিকানদের মস্তিষ্ক মোটামুটি ভালোভাবেই ধোলাই হয়ে গিয়েছে। অথচ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি একটি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মধ্যপন্থার দল রয়েছে সামান্য বামপন্থি ঝোঁক। রেডিক্যাল সমাজতন্ত্রের ধারেকাছেই নয়।

 

এমনি এক অদ্ভুত পটভূমিতে রিপাবলিকান দলের তৃণমূলে রয়েছে ট্রাম্পের নিদারুণ প্রভাব। ট্রাম্প প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে মেক্সিকানরা ধর্ষণকারী বদমায়েশ, মুসলমানরা ক্রিমিনাল, যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্টের জন্ম কেনিয়ায়। এগুলো ডাহা মিথ্যা এবং ট্রাম্পের বর্ণবাদী হুঙ্কার। কিন্তু রিপাবলিকান তৃণমূলের সবচেয়ে ডানপন্থি বর্ণবাদীদের কাছে ট্রাম্পের বাণী অমৃততুল্য। রিপাবলিকান দলের অন্যপ্রান্তে রয়েছে চিরায়ত রক্ষণশীলতা। রয়েছে লিবারেটারিয়ান রাজনৈতিক মতবাদের অনুসারীরা। এদের মূল প্রতিপাদ্য হলো সংকোচিত ছোট আকারের সরকার, ন্যূনতম কর, ছোট বাজেট অর্থাৎ কম খরচ, জাতীয় ঋণের সংকোচন, শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশবান্ধব নিয়ন্ত্রণ আইনগুলোর যথাসম্ভব অপসারণ, মুক্তবাণিজ্য এবং ধনিক শ্রেণির পক্ষে আইন প্রণয়ন। অপরদিকে ট্রাম্প নীতিহীন সুযোগ সন্ধানী। রিপাবলিকান রক্ষণশীলদের প্রাণপ্রিয় মুক্তবাণিজ্য বাতিল করে ট্রাম্প বসিয়ে দিয়েছেন ট্যারিফ। সরকারি খরচ বাড়িয়ে জাতীয় ঋণকে করেছে অসহনীয়। তৃণমূলকে খুশি রাখার জন্য খরচ বাড়িয়েছেন। এগুলো জনপ্রিয় নীতি। রক্ষণশীলদের নীতি নয়। বর্ণবিদ্বেষী শ্বেতাঙ্গদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিবাসনের নিদারুণ সংকোচন এবং বর্ণবিদ্বেষী ঘৃণা ও হুঙ্কার। এভাবেই ট্রাম্প মন জয় করেছেন রিপাবলিকান শ্বেতাঙ্গ তৃণমূলের। কোনো কোনো ধর্মান্ধ ইভানজেলিকাল খ্রিস্টান নেতা মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিপরায়ণ ট্রাম্পকে যিশু খ্রিস্টের নব আবির্ভাব বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিশ্লেষণ করব চলমান দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং সদ্য নাকচ হয়ে যাওয়া ট্রাম্পের ভেটো। মনে হচ্ছে রিপাবলিকান দল দ্বিধাবিভক্তির পথে চলছে। একদিকে রয়েছে দীর্ঘকালের পরীক্ষিত রক্ষণশীল ও করপোরেট ধনিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী সিনেটের প্রধান মিচ ম্যাককনেল আর অন্যদিকে পপুলিস্ট নীতি বর্জিত ডোনাল্ড ট্রাম্প। দুজনেই দুজনার পিঠ চুলকিয়েছেন। ট্রাম্প ম্যাকনেলের স্ত্রী চৈনিক বংশোদ্ভূত ইলেন চাওকে বানিয়েছেন যানবাহন মন্ত্রী। চার বছর ধরে ম্যাককনেল ট্রাম্পের দালালি করেছেন। প্রথমবার নিম্নকক্ষে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে ট্রাম্পকে ইমপিচ করা হয়েছিল। অপরাধ ছিল-বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে যোগসাজশ। আইন অনুযায়ী নিম্নকক্ষে ইমপিচমেন্ট পাস হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণ করতে হলে উচ্চকক্ষ সিনেটের ১০০ জনের মধ্যে অন্তত ৬৭ ভোটের প্রয়োজন। মিচ ম্যাককেনল সিনেটের প্রধান হিসেবে দলবল দিয়ে সমর্থন করেছিলেন ট্রাম্পকে। সেই কারণে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ট্রাম্পকে অপসারণ করা সম্ভব হয়নি।

চার বছর ম্যাককনেল দালালি করেছেন বিশ্বস্ত ভৃত্যের মতো। কিন্তু এবার বাদ সাধলেন ধূর্ত রাজনীতিবিদ ম্যাককনেল। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছে বাইডেন। এই ফলাফলকে আইন অনুযায়ী নাকচ করা যাবে না। কিন্তু বয়স্ক শিশু ট্রাম্প জিদ ধরেছেন তার প্রেসিডেন্ট পদের চকলেট খেতেই হবে। ম্যাককনেলের কাছে স্পষ্ট বাইডেনের বিজয়কে নস্যাৎ করা যাবে না। বাইডেনের বিজয়ের কয়েক সপ্তাহ পর অভিনন্দন জানিয়েছেন ম্যাককনেল। বয়স্ক শিশু ট্রাম্পের ট্যান্ট্রাম এখন উচ্চমার্গে। নির্বাচনের ফলাফল উলটে দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের বিবিধ প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে স্টেট সুপ্রিম কোর্ট, ফেডারেল কোর্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট, বিভিন্ন স্টেটের নির্বাচন বোর্ড এবং সরকারি জাস্টিস বিভাগ। এমনকি অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

ক্রুদ্ধ ট্রাম্প ম্যাককনেলকে জব্দ করতে কয়েক দিন আগে কংগ্রেসের দুই কক্ষে উভয় দলের বিপুল ভোটে পাস করা প্রতিরক্ষা বিলে ভেটো বসিয়ে দিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আঁতাত করে রিপাবলিকান ম্যাককনেল ট্রাম্পের ভেটো বাতিল করে দিলেন। চার বছরে এই প্রথম ট্রাম্পের ভেটোকে ডাস্টবিনে ছুড়ে দিলেন। কূটচালে ট্রাম্প জর্জিয়ার ৫ জানুয়ারির দুটো সিনেট নির্বাচনে রিপাবলিকানদের বিজয় নস্যাৎ করে দিলেন। জর্জিয়ার দুটো পদে ডেমোক্র্যাটদের বিজয়ে এখন দাঁড়াচ্ছে উভয়েরই ৫০। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের টাই ব্রেকিং ভোটে ডেমোক্র্যাটদের বিভিন্ন আইন পাসে এবং উচ্চপদে নিয়োগের পথে বাধাগুলো অপসারিত হলো। এর ফলে নবাগত সিনেটে ম্যাককনেলের ক্ষমতা খর্ব হয়ে গেল। মনে হয়েছে, এটাই ছিল ট্রাম্পের মনোবাসনা। এই নির্বাচনের আগে ট্রাম্প জর্জিয়ার রিপাবলিকানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিলেন। নিজের প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনে জর্জিয়ার পরাজয়ে তিনি দোষারোপ করেন নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত গভর্নর কেম্প ও সেক্রেটারি অব স্টেট র‌্যাফেনস্পারগারকে। উভয়েই রিপাবলিকান। নির্বাচন বোর্ডের রিপাবলিকানপন্থি কর্মকর্তাদেরও তিনি তুলোধুনা করেছিলেন। ‘মানসিকভাবে অস্থির’ ট্রাম্প বলতে থাকলেন এসব রিপাবলিকান ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাকে জর্জিয়ায় হারিয়ে দিয়েছেন। ট্রাম্পের ষড়যন্ত্র মতবাদের দুই আইনজীবী লিন উড এবং সিডনি পাওয়েল রিপাবলিকানদের বললেন, সিনেটের ভোট বর্জন করতে। এমনকি লিন উড প্রকাশ্যে ঘোষণা দিলেন : দেশদ্রোহের অপরাধে সিনেটের প্রধান মিচ ম্যাককনেল, সুপ্রিম কোর্টের চিফ জাস্টিস জন রবার্টস এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে।  জর্জিয়ার গভর্নর ও সেক্রেটারি অব স্টেটকে বন্দী করে নিক্ষেপ করতে হবে কারাগারে। ট্রাম্পের মতে, জর্জিয়ার গভর্নর ও সেক্রেটারি অব স্টেটসহ অন্য রিপাবলিকানদের অপরাধ হলো তারা অসৎ উপায়ে ট্রাম্পকে জর্জিয়ার নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়নি। জানুয়ারির ৩ তারিখে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ট্রাম্পের সঙ্গে জর্জিয়ার সেক্রেটারি অব স্টেট র‌্যাফেন্সপারগারের প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী ফোনালাপ ফাঁস করে দেয়। এই ফোনালাপে ট্রাম্প অনুরোধ, ভিক্ষা, ধমক এবং ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদির মাধ্যমে র‌্যাফেন্সপারাগারকে ভোট চুরি করে ট্রাম্পকে জিতিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র ও জর্জিয়ার আইনে এটা মারাত্মক অপরাধ। জর্জিয়ার কোর্টে এটা প্রমাণ করা সহজ কাজ। কে জানে? ভবিষ্যতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাসস্থান হতে পারে জর্জিয়ার কারাগার।

এ ফোনালাপের পর দিন ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ডোনাল্ড ট্রাম্প জর্জিয়ার ডালটন শহরে যোগদান করেছিলেন রিপাবলিকানদের আয়োজিত বিজয় সভায়। পাঠক, ভেবে দেখুন নির্বাচন ৫ জানুয়ারি আর রিপাবলিকানরা নির্বাচনের বিজয় সভা করল একদিন আগে। বিচিত্র আমেরিকা! আর ওই নির্বাচনে বিজয় হলো ডেমোক্র্যাটদের। নবনির্বাচিত সিনেটর হলেন রাফায়েল ওয়ারনক এবং জন অসফ। রিপাবলিকান প্রার্থী পারডু ও লফনার হেরে গেলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার বক্তৃতায় শুধু নিজের কথাই বললেন। অপবাদ দিলেন নির্বাচন বোর্ডের যেথায় একজন ছাড়া সব সদস্যই রিপাবলিকান। তার অন্ধ বিশ্বাসী অনুসারীরা বুঝতে পারল, ‘ভোট দিয়ে লাভ নেই। জর্জিয়া নির্বাচন বোর্ড এবারেও ষড়যন্ত্র করবে। যেমন করেছিল ৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে’- ট্রাম্পের মিথ্যা প্রচারণা অনুযায়ী। ট্রাম্পের ভাষণের গূঢ় অর্থ তারা বুঝে নিল। ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে অনেকেই বন্ধুদের সঙ্গে পানীয় পান করে সময় কাটিয়ে দিল। জিতে গেল ডেমোক্র্যাটরা। ট্রাম্পের পরিকল্পনা সার্থক হলো। নিজের নাক কেটে তিনি ম্যাককনেলের যাত্রা ভঙ্গ করলেন। ম্যাককনেল আর থাকছেন না সিনেটের প্রধান পদে।

৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথসভায় ইলেকট্রোরাল কলেজের ভোট গণনা করে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে বাইডেনকে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসকে। ট্রাম্প লেলিয়ে দিল তার সমর্থক সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানদের। তারা সুইং স্টেটগুলোর ইলেকক্টরদের খারিজ করার প্রস্তাব উত্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিল। দুটো কক্ষের অনুমোদন ছাড়া এ প্রস্তাব বাতিল হতে বাধ্য। নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো ডেমোক্র্যাটিক দল। তারা একাট্টা হয়ে এ প্রস্তাব নাকচ করে দেবে। এই অবশ্যম্ভাবী পরাজয় অনুমান করেই ম্যাককনেল এবং তার ঘোর সমর্থক রিপাবলিকান সিনেটররা ট্রাম্পের সমর্থকদের খারিজ প্রস্তাবগুলোতে সমর্থন দেয়নি। খারিজ প্রস্তাবের পক্ষে থাকার অর্থ হলো লাখো কোটি ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা। চিরায়ত রক্ষণশীল ম্যাকনেলের জন্য এতটা নিচে নামা সম্ভব হলো না। এ ছাড়া তিনি জানতেন, এতে কোনো লাভ হবে না। এদিকে ট্রাম্প উসকানি দিলেন তার সমর্থকদের ক্যাপিটাল হিলে বিক্ষোভ করতে। এটাই হলো কংগ্রেসের অফিস ভবন। ৬ জানুয়ারি ভোর থেকেই জড়ো হতে লাগল ট্রাম্পের সমর্থকরা। সকালে তাদের সামনে উত্তেজনাপূর্ণ ভাষণ দিলেন ট্রাম্প। দুপুরের কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্পের গুণ্ডার দল আক্রমণ করল ক্যাপিটাল হিল। কংগ্রেসের সভা পণ্ড হলো। গোলাগুলি হলো। জিনিসপত্র ধ্বংসসহ ৫ জনের মৃত্যু হলো। আমেরিকাসহ সারা বিশ্বে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ঘৃণার জোয়ার বইছে। উঠে এসেছে ২৫ ধারায় তার অপসারণের আলোচনা। দ্বিতীয়বারের মতো প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেন। অবধারিত বিদায়ের আগে রিপাবলিকান দলে মেকনালের নেতৃত্ব ভণ্ডুল করে পুরো দলটিকে ট্রাম্প নৈরাজ্যের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

লেখক: এমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রাক্তন উপ-উপাচার্য
ইউনিভার্সিটি অব নিউ অরলিয়েন্স
ডিন এবং প্রাক্তন উপাচার্য-ডেলগাডো কমিউনিটি কলেজ,
কমিশনার-রিজিওনাল ট্রানজিট অথরিটি, বিজ্ঞানী, কবি

 

সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন