রাজনীতিতে পরিবর্তন এনে হলেও সুন্দরবন রক্ষা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন এনে হলেও রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প রুখে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বামপন্থী নেতারা।  তাঁরা বলেন, এই লড়াইয়ে পরাজিত হওয়ার সুযোগ নেই।

 

আজ শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সুন্দরবনবিনাশী সব প্রকল্প বাতিলসহ সাত দফা বাস্তবায়নের দাবিতে দিনব্যাপী গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে বক্তারা এ হুমকি দেন।

 

বেলা ১১টা থেকে এ গণ-অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। বক্তব্যের পাশাপাশি ছিল প্রতিবাদী নাটক, গান, যার মধ্য দিয়ে বোঝানো হচ্ছিল কেন রামপাল চুক্তি হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। দিনব্যাপী চলা অবস্থান কর্মসূচিতে অনেকেই এসেছিলেন একাত্মতা প্রকাশ করতে।

 

কর্মসূচিতে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, বাসদ (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ বিভিন্ন বাম সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

 

সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশ আজ গভীর সংকটের মুখে এসে পতিত হয়েছে। সমস্যার কোনো শেষ নেই। সরকার ভারতীয় কোম্পানির সঙ্গে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি করেছে। এই চুক্তি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে।

 

‘আমরা ধানাই-পানাইয়ে বিশ্বাস করি না। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, রামপালে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আর তা না হলে পরে যে আন্দোলনের জাগরণ আমরা সারা দেশব্যাপী সূচনা করেছি সেটি স্তব্ধ হবে না।’

 

সিপিবি নেতা আরো বলেন, ‘সেই আগুনে রাজনৈতিক পরিণতি কী হবে সেটা সরকারকে ভেবে দেখার জন্য আমি অনুরোধ করছি। রাজনীতিতে পরিবর্তন এনে হলেও সুন্দরবনকে রক্ষা করার সংগ্রাম অব্যাহত রাখব।’

 

কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বলা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নে আমাদের উপকার হবে। আমাদের যদি উপকার হয় তবে ভারত কেন এই প্রকল্পটি আমাদের হাতে দিচ্ছে না। সুন্দরবনকে রক্ষা করার যুদ্ধ জীবন-মরণের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যদি বাংলাদেশের মানুষ পরাজিত হয় তাহলে আরো অনেক জায়গায় তার পরাজয় ঘটবে। এই বন নিঃশেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশের সব বন নিঃশেষ হয়ে যাবে।

 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘প্রবচন আছে, উপকারীকে বাঘে খায়। সুন্দরবন আমাদের উপকার করে তা অনুভব করতে হয় প্রাকৃতিক যে বিপর্যয় আসে তাতে সুন্দরবন বুক পেতে দাঁড়ায়। এই বন আমরা নিজেরা তৈরি করিনি, উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। এখানে অসংখ্য জীব-বৈচিত্র্য আছে যেগুলো হারিয়ে গেলে তা আর কখনো পাওয়া যাবে না।’

 

‘সেই উপকারীকে বাঘে খাচ্ছে। আসলে বাঘে খাচ্ছে না, খাচ্ছে একটি দানব এবং সে দানব সুন্দরবনকেও খাবে, বাঘকেও নিশ্চিহ্ন করে দেবে। এই দানব হচ্ছে পুঁজিবাদী লালসা পুঁজিবাদী শোষণ’, যোগ করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

 

প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটি ১৬ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে যারা রয়েছে, তাদের পক্ষে ষোলশ মানুষও হবে না। এই প্রকল্পটি সমগ্র জাতির বিরুদ্ধে অল্প কিছু মানুষের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। যারা এই প্রকল্প করছে, ভবিষ্যতে তাদের নাম যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম ও সাঈদীর নামের সঙ্গে যুক্ত হবে। এখনো সময় আছে প্রকল্প থেকে সরে আসার। যদি সুন্দরবনের পশুপাখির ভাষা থাকত তবে তারাও বলত এই প্রকল্পটি বন্ধ কর। এই প্রকল্পটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রকল্প।

 

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে মানুষ এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। এখানে দাবি খুব স্পষ্ট, রামগাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবন বিনাশী সব প্রকল্প বাতিল করতে হবে। সারা দেশে বিভিন্ন মুনাফাগোষ্ঠী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে শকুনের মতো চারদিক থেকে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবন না থাকলে তাদের কোনো ক্ষতি নেই। তাদের কাছে সুন্দরবনের কোনো আর্থিক মূল্য নেই। কিন্তু ভূমির মূল্য লক্ষকোটি টাকা।

 

সূত্র : এনটিভি