রাকসু নির্বাচন: ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে গণস্বাক্ষর দাবি ছাত্র সংগঠনগুলোর

রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলে নাকি একাডেমিক ভবনে হবে তা নির্ধারণে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির দাবি ছাত্র সংগঠনগুলোর। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরাই নির্ধারণ করবেন তারা কোথায় ভোটকেন্দ্র চান। সম্প্রতি রাকসু সংলাপ কমিটির পক্ষ থেকে পাওয়া আবাসিক হলে ভোটকেন্দ্র হবে এমন তথ্যের প্রেক্ষিতে সংগঠনগুলো নতুন করে এ দাবি তোলেন। তাদের কথা হল- যেহেতু রাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের, তাই ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর নেওয়াটা যৌক্তিক। গত দুইদিন সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে। আর সংলাপ কমিটি বলছে, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচনের তোরজোর শুরু হওয়া থেকেই রাকসু নিয়েও সরব হয়ে ওঠে ছাত্র সংগঠনগুলো। লিফলেট বিতরণ, মানববন্ধন, প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেওয়াসহ নানা কর্মসূচি শুরু করে তারা। এতে টনক নড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। সংগঠনগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে চার সদস্যের রাকসু সংলাপ কমিটি গঠন করে প্রশাসন। কমিটি একে একে সংগঠনগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে।

সংলাপ কমিটির তথ্যমতে, চলতি বছর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সংগঠনগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু হয়। শেষ হয় চলতি মাসের ৬ তারিখ। এতে ১২টি রাজনৈতিক ও ১১টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অংশ নেয়। দুয়েকটি ছাড়া বাকি সব সংগঠন একাডেমিক হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানায়। কমিটি জানায়, সতেরটি হলের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে একাডেমিক ভবনে এনে ভোটগ্রহণ করতে গেলে বিশৃঙ্খলা হতে পারে। এসব বিবেচনায় কমিটির পক্ষ থেকে হলে ভোটকেন্দ্র রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সংগঠনগুলো কমিটির কাছে গণস্বাক্ষরের দাবি তোলেন। রাবি প্রগতিশীল ছাত্রজোটের সমন্বয়ক ফিদেল মনির বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, তাই শিক্ষার্থীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রশাসন দাবি করে যে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই তারা ভোটকেন্দ্র স্থাপনের ব্যাপারে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করতে পারে। এতে জানা যাবে গুরুভাগ শিক্ষার্থী কোথায় ভোটকেন্দ্র চায়।’

রাবি ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহাব্বত হোসেন মিলন বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থাপনের যে দাবি ছিল তা আমলে নেওয়া হয়নি। এখন প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করুক। এর ফলাফল অনুযায়ীই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হোক।’

ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে গুরুভাগ শিক্ষার্থীর মতামত নেওয়া সময়ের দাবি বলে জানান রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর। তিনি বলেন, ‘রাকসু সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনন্য একটি প্লাটফরম। এর ভোটকেন্দ্র নির্ধারণসহ যাবতীয় সবকিছুই শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে হওয়া উচিত।’

আবাসিক হলে ভোটকেন্দ্র হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে দাবি করেছেন রাবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘ফেয়ার ইলেকশন করতে হলে ভোটকেন্দ্র অবশ্যই আবাসিক হলের বাইরে রাখতে হবে। তবে এজন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি করা দরকার।’ জাতিসংঘের ১৭টি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওয়ার্ল্ড লিংকআপ’র সাবেক সভাপতি মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর নিয়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হলে নির্বাচন আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হবে।’ একই কথা নির্বাচনে আগ্রহী অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর।

এ বিষয়ে সংলাপ কমিটির আহ্বায়ক প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের ব্যাপারে প্রশাসন খুবই আন্তরিক। সংগঠনগুলোর এই দাবি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবো। ছুটির পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে গণস্বাক্ষর কিংবা হল কেন্দ্রীক কর্মসূচি নেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে উর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলব।’

 

স/আ